অপ্রিয় হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজের তথাকথিত নামদারী আলেম-ওলামা তথা মসজিদ, মাদ্রাসার শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত হুজুররা লক্ষ লক্ষ সওয়াব ও বেহেস্তের লোভে এবং দোজখের ভয়ে আল্লাহর এবাদত করে থাকে এবং আমাদের দেশের নিরীহ, সহজ ও সরলমনা মুসলমানদেরওকে এ শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে, যা আল্লাহ-রাসূল থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। প্রখ্যাত একজন সাধক ও মহিয়সী রমনী হযরত রাবেয়া বসরী (রা:) বলেছিলেন-----
"হে আল্লাহ! আমি যদি দোজখের ভয়ে তোমার এবাদত করি, তাহলে আমাকে দোজখেই নিক্ষেপ করো, আর আমি যদি বেহেস্তের লোভে তোমার এবাদত করি, তাহলে আমাকে বেহেস্ত থেকে বঞ্চিত করো; আর যদি তোমাকে পাবার আশায় এবাদত করি, তাহলে তা থেকে আমাকে বঞ্চিত করো না।" অর্থাৎ তিনি দোজখের ভয়ে ও বেহেস্তের লোভে এবাদত না করে আল্লাহকে পাবার জন্য এবাদত করতেন। আর সৃষ্টিকর্তা তথা আল্লাহকে রাজি-খুশি করা ও তাঁকে পাওয়াই সকল ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য।
বেহেস্ত এবং দোজখ আল্লাহর এক একটি সৃষ্টি; আর আল্লাহ হলেন স্রষ্টা। আর মানুষ হলো সকল সৃষ্টির সেরা। কাজেই বেহেস্ত ও দোজখের চেয়ে মানুষের মর্যাদা অনেক বেশী। সমাজের মূর্খ হুজুররা ডিমোশনের জন্য এবাদত বন্দেগী করে এবং অন্য সাধারণ মানুষদেরকেও তা-ই শিক্ষা দিচ্ছে।
আল্লাহ ১৮,০০০ (আঠার হাজার) মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন। তম্মধ্যে মানুষ সৃষ্টির সেরা। বাকী ১৭,৯৯৯ টি মাখলুকাত সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের কল্যাণ তথা মানুষের গোলামী করার জন্য। কেননা মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি। মানুষ যেখানে স্রষ্টার প্রতিনিধিত্ব করবে, অন্য সকল সৃষ্টি তার হুকুমের গোলাম হবে; সেখানে সে প্রতিনিধির মর্যাদা হারিয়ে সৃষ্টির গোলাম হতে চলেছে এবং সৃষ্টির ভয়ে সে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
যেমন কুকুর একটি সৃষ্টি। এ কুকুর মানুষের হুকুমে চলার কথা। কিন্তু এ কুকুর এখন মানুষকে দেখলে ঘেউ ঘেউ করে কামড়াতে আসে। কারণ কি? এর হাকিকত হলো এ মানুষটি প্রতিনিধির মর্যাদা হারিয়ে কুকুরের চরিত্র অর্জন করেছে, অর্থাৎ আত্মার সুরতে সে কুকুর। কুকুরের একটি প্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো সে স্বজাতিকে দেখতে পারে না। তাই একটি নিকৃষ্ট কুকুর যখন কোন মানুষের ভিতরে তার স্বজাতির রূপ দেখতে পায়, তখন সে ঘেউ ঘেউ করে তাকে তাড়াতে যায়।
ইসলামের ইতিহাস তালাশ করলে দেখা যায় যে, বনের হিংস্র বাঘের পিঠে চড়ে মানুষ বন-জঙ্গল এবং হিংস্র কুমিরের পিঠে চড়ে সাগর অতিক্রম করেছেন; সেই বাঘ ও কুমির ছিল আল্লাহর প্রতিনিধি ঐ মানুষটির হুকুমের গোলাম। আর আমরা প্রতিনিধির মর্যাদা হারিয়ে ফেলেছি বলেই আল্লাহর সৃষ্টি হয়ে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে আক্রমন করতে আসে।
আল্লাহর বন্ধু ,সূফী সাধকগণ মানুষকে শিক্ষা দিয়ে থাকেন- কিভাবে মানুষ আল্লাহ-রাসূলকে পাবে? কারণ, আল্লাহ এবং রাসূলকে পেলে মানুষের আর কিছু পাবার বাকী থাকে না। আল্লাহর বন্ধু সূফী সাধকগণের শিক্ষা ও পরামর্শ গ্রহণ করে নিজের ভিতরের পশুর চরিত্রকে সাধনার মাধ্যমে পরিবর্তন করে মানুষের চরিত্রে রূপান্তর করতে হবে। স্রষ্টাকে ভুলে সৃষ্টিকে পাবার আশায় এবাদত না করে স্রষ্টাকে পাবার জন্য অলি-আল্লাহর শিক্ষা গ্রহণ করুন, জীবন ধন্য হবে----নচেৎ জীবন বরবাদ হয়ে যাবে।
--------০০০--------
হক কথা
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit