আদর্শভ্রষ্ট আজকের তরুণ সমাজ

in young •  2 years ago  (edited)

images.jpeg

আমি মাহির। আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো , আজকের তরুণ সমাজ সর্ম্পকে

বর্তমান তরুণ সমাজ যে সমাজের ওপর নির্ভরশীল রয়েছে সে সমাজে আছে এখন নানা রকমের লোক জ্ঞানী-মূর্খ, ভাল-মন্দ, সৎ-অসৎ মানুষের সমাবেশ। সঙ্গ নির্বাচনে একমাত্র বিবেচনার দিক হল গুণবানের বৈশিষ্ট্য যার সহায়তায় জীবন হয়ে ওঠে আলোয় আলোকিত। সেখানে চরিত্রহীন ব্যক্তির অনুপ্রবেশের কোন সুযোগ নেই। তাই কুসঙ্গ থেকে দূরে রাখতে হবে সর্বদা নিজেকে। আমরা ছোটবেলা থেকেই চরিত্র নিয়ে রচনা ও ভাব সম্প্রসারণ পড়ে আসছি আর সেখান থেকেই জানা, মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ নিজের চরিত্র, হোক নারী বা পুরুষ। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ শুনেছি, 'The crown and glory of life is character'. অর্থাৎ, চরিত্রের গুণেই মানুষ শ্রেষ্ঠ আদর্শের মর্যাদা ও সম্মান পায়। ইরানের বিখ্যাত মনীষী শেখ সাদী (রহ.) এর এ প্রবাদ বাক্যটির মূল বক্তব্য হচ্ছে, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’

অর্থাৎ, সৎ সঙ্গের অভাবে মানুষ, অমানুষ হয়ে ওঠে।এবং সৎ গুণসমূহ হারিয়ে সে হয় পশুর মতো অধম। মানুষ গুণগতভাবেই সত্যের পূজারি, সুন্দরের অনুসারী। আর অসৎ পথে যাওয়ার মূল কারণ অসৎসঙ্গ। অসৎসঙ্গের প্রভাবে বর্তমান মানুষের চরিত্র কলুষিত হয়ে পড়ছে।

‘সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে’

অর্থাৎ লোহা ওজনে ভারী বলে তা পানিতে ডুবে যায়। কিন্তু এ ভারী লোহা যদি হালকা কাঠ বা অসার কোনো পদার্থের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়, তাহলে লোহা ভেসে ওঠে, কিন্তু ডুবে না। প্রবাদটি ধ্রুব চিরন্তন।

যদি আপনি এমন দু'জনের সাথে চলাফেরা করেন, যারা প্রকৃতপক্ষে সর্বদা আত্মবিশ্বাসী, তবে মনে রাখবেন তাদের মধ্যে হতে তৃতীয়জন আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তিটি আপনি-ই হবেন। আপনি যদি এমন একজন ‘মানুষের’ সাথে মিশেন তাহলে দ্বিতীয় ‘মানুষটি’ আপনি হবেন। যদিও আমরা ‘মানুষ’ শব্দটির অর্থে অজ্ঞতা। কি আশ্চর্য হলেন? তাহলে একটু খুলেই বলা যাক ;

কবিগুরুর ভাষায়, ছেলে মানুষ করতে হলে ছেলে বেলায়ই করতে হবে, নতুবা ছেলে ছেলেই থেকে যাবে মানুষ আর হবে না। এই যে, আমাদের বাবা-মায়েরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানদের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট বানানোর কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখছি, শুধু মাত্র নিজের সত্তাটাকে প্রশান্ত করার আশায়। কিন্তু ছেলে আমার মস্ত অফিসার হয়ে বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়। নতুবা গ্রামের বাড়িতে জরা-ব্যাধি নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। ছুটি-ছাঁটায় সামান্য কিছু উপহার নিয়ে বাড়ি যায়। এতেই মনে করা হয় আমাদের জীবন বোধ হয় স্বার্থক। কিন্তু বুকে যে আমার প্রতিনিয়ত রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা কাউকে বুঝতে দেই না। অন্যদিকে জগৎজুড়ে যে হট্টগোল চলছে তার কারণ হল আমরা জ্ঞানী বিজ্ঞানী নেতানেত্রী হয়েছি মানুষ আর হতে পারিনি। মানুষ শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ করলে দেখা যায়।

মান+হুশ= মানুষ

অর্থাৎ, মানুষ শব্দটির সুন্দর অর্থ করলে দাঁড়াবে, যার মানসম্মানবোধ থাকবে, লাজ-লেহাজ থাকবে এবং হুশ তথা জ্ঞানবুদ্ধি থাকবে তাকেই মানুষ বলা হয়। আল্লাহ তা'য়ালার সৃষ্টি সকলকিছুর মধ্যে যেহেতু মানুষ শ্রেষ্ঠ, তার মানে তাকে অবশ্যই জ্ঞানবুদ্ধির অধিকারী হতেই হবে, মানসম্মানবোধ থাকতে হবে, সৃষ্টিকর্তার ইবাদতে সামিল হতে হবে, মানবিকতাবোধ সম্পন্ন হতে হবে। আমার এখনও প্রশ্ন জাগে আদৌকি আমরা মানুষ হতে পেরেছি? না সেই ছেলে বেলার ছেলে ছেলেই রয়ে গেছি, তা না হয় আপনারাই নিজেদেরকেই প্রশ্ন করবেন।

একটি লেটিন প্রবাদ এ কথারই সাক্ষ্য বহন করে;

‘তুমি যদি খোঁড়াদের সাথে বসবাস কর, তাহলে তুমিও খোঁড়াতে শিখবে ’

বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে বসে থাকা ছেলে মেয়েদের আড্ডা আর টঙের সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানতে থাকা আড্ডার বিষয় কখনও এক হবে না। আপনি কোন আড্ডার সদস্য হতে ইচ্ছুক তা নির্ধারণ করে দিবে আপনি প্রকৃতপক্ষে কোন ব্যক্তির দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন। কার সাথে মিশছেন সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার জীবনে কার প্রভাব পড়বে সেটা নির্ভর করবে আপনার চাহিদাগত ক্যাটাগরির উপর।

ভালো মন্দ বোধ বিচার না থাকাটা নিশ্চয়ই এটা একটা অনিবার্য এবং দুঃখজনক পরিণতি। আর বর্তমানের তরুণ সমাজ সে দিকেই কলুষিত হচ্ছে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...