জুতা সেলাই করে সংসার চালান ‘মুক্তিযোদ্ধা’ আব্দুল বারিক

in abdulbarik •  7 years ago 

দেশ স্বাধীনের ৪৫ বছর হতে চলেছে। কিন্তু জীবন যুদ্ধে এখনও পরাধীন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ কাজী আব্দুল বারিক। বয়সের ভারে ন্যুব্জ এই ‘মুক্তিযোদ্ধা’কে এখনও রাস্তায় মাদুর পেতে নতমস্তকে জুতা সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। স্বাধীনতার ৪৫ বছরেরও তার ভাগ্যে জোটেনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি, রাষ্ট্রীয় ভাতা। সরকারি কোনও সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় অভাব, অনটনে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার পৌর শহরের দেশোয়ালী পাড়ার রামচরন চৌধুরী রোডে মেয়ের বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন আব্দুল বারিক। তার জন্ম ১৯৪২ সালে। বয়সের ভারে এখন ন্যুব্জ হয়ে পড়েছেন। তার পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। কিন্তু সবাই বিয়ে করে নিজ সংসার নিয়ে ব্যস্ত। তাইতো জুতা সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। এখন স্ত্রী আসমা খাতুনকে নিয়ে তার বেঁচে থাকার সংগ্রাম। কিন্তু স্ত্রীও অসুস্থ। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না।
জানা যায়, স্বাধীনতা সংগ্রামে ৮নং সেক্টর থেকে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন আব্দুল বারিক। ভারতের বিহার প্রদেশের চাকুলিয়া থেকে ক্যাপ্টেন গৌর সিং এর নেতৃত্বে তিনি তৃতীয় ব্যাচে মুক্তিযুদ্ধের উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বৃহত্তর কুষ্টিয়ার দর্শনার উথলি ও আলমডাঙ্গাসহ কুষ্টিয়ার নানা প্রান্তে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি কমান্ডার আমীর আলীর অধীনে যুদ্ধ করেন। কমান্ডার আমীর আলী সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। যুদ্ধ শেষে কুষ্টিয়া পুলিশের টিআই ওয়ান আজিজ মিঞার কাছে অস্ত্র জমা দেন। তার পরিচিত সহযোদ্ধারা অনেকেই মারা গেছেন। আবার অনেকে কে কোথায় আছে তা তার জানা নেই। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুষ্টিয়া জেলা ইউনিট কমান্ড ও প্রশাসন জানায়, তার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সকল কাগজপত্র না থাকায় তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন। এদিকে, ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি বরাবর কাজী আব্দুল বারিক তার কাছে থাকা কাগজপত্রসহ লিখিত আবেদন করেন। এরপর ২০০৮ সালের ২৭ নভেম্বরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কুষ্টিয়া সদর ও সদস্য সচিব উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির পক্ষ থেকে তাকে একটি নোটিশ করা হয়। সেখানে তাকে ২০০৯ সালের ৯ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে সকাল ১০টায় হাজির হতে বলা হয়। কিন্তু সেদিন তার জুতা সেলাইয়ের দোকানে কাস্টমারের সংখ্যা বেশি থাকায় সময় মতো তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। দেরিতে উপস্থিত হওয়াতে তাকে জানানো হয়, সময় শেষ এখন আর হবে না। এরপর ২৫ জুন ২০০৯ সালে তিনি আবারও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল বরাবর ডাকযোগে লিখিত আবেদন করেন। তারপর আর কোনও কিছু এগোয়নি। দারিদ্র্যের কষাঘাত আর বয়সের ভারে এখন হাল ছেড়েছেন তিনি।

9e31b32d8c45a8ceb566b16f4a0ce333-56f4e9ec288f6.jpg

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!