Alokmoy Bangladesh Bangali News ' আমেরিকাতেও বাল্যবিবাহ একটি বড় সমস্যা'

in alokmoybangladesh •  7 years ago 

alokmoy bangladesh news.png

জাদা। ১২ বছর বয়স। বাবার হাত ধরে বেড়াতে এসেছিল তাদের পৈতৃক ভিটেয়। ওই প্রথম বাড়ির বাইরে তার দূরে কোথাও যাওয়া। রাস্তায় জাদা হাঁটছিল বাবার সঙ্গে। বাবা বললেন, ‘তুমি আমার ডান দিকে থাকো।’ সরল-মন জাদা তা-ই করল। জানত না, ডান দিকে রাখার মানে হলো এই মেয়েটি বিয়ের পাত্রী। বাবা তাকে এক স্থানীয় যুবকের সঙ্গে বিয়ে দিতে চেষ্টা করছেন।

এ ঘটনা আমাদের খুব চেনা। অহরহ দেখা যায় চারপাশে। অনেক সাহস করে প্রতিবাদ করতে পারলে কালেভদ্রে রক্ষা পায়। যারা পারে না, তাদের মানিয়ে নিতে হয়। তবে ওপরের ঘটনাটা বাংলাদেশর না। পরাশক্তি আমেরিকার। নারীদের নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর হাজারো মার্কিন নারী ও শিশু জোরপূর্বক বিয়ের শিকার। এর মধ্যে বেশির ভাগই অভিবাসী মার্কিন নাগরিক।

ডেইলিকসডটকমের খবরে বলা হয়, জাদা যখন বুঝতে পারল ব্যাপারটা, খুদে বার্তা পাঠাল নিউজার্সিতে সৎবোন মেক্কার কাছে। ভেবেছিল, হয়তো মার্কিন দূতাবাস তার মুশকিল আসান করতে পারবে। জানত না, কোনো মার্কিন নাগরিক যখন ভিন দেশে থাকে, তখন তাকে স্থানীয় আইন মেনে চলতে হয়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু করার থাকে না।

alokmoy bangladesh01.png

মরিয়া হয়ে মেক্কা একটি মানব পাচার রোধকারী হটলাইনের মাধ্যমে তাহিরিহ জাস্টিজ সেন্টারের একজন কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। সেই কাউন্সিলর, কেস সু্উগম্যান, পিবিএস নিউজহাওয়ারকে বলেন, তিন মাস চেষ্টা করে জাদাকে ফিরিয়ে আনা গেছে। এটি করতে তার সৎবোন ও খালা আপ্রাণ চেষ্টা করে অর্থ জোগান। জাদা এখন তার স্কুলের তারকা। স্কুল শেষে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় পড়ার স্বপ্ন তার।

যুক্তরাষ্ট্রে বাল্যবিবাহে কোনো আইনি বাধা নেই। তবে প্রায় প্রতিটি অঙ্গরাজ্যই ১৮ বছরের কম বয়সীদের বিয়ে না করার পরামর্শ দেয়। ৩৮টি অঙ্গরাজ্যে বিচারকের অনুমতি নিয়ে বিয়ে করতে পারে। ৩৪টি অঙ্গরাজ্যে ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সীরা অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে বিয়ে করতে পারে। ম্যাসাচুসেটস ও নিউ হ্যাম্পশায়ারে বিচারিক ও অভিভাবকের অনুমতি সাপেক্ষে ১২ ও ১৩ বছরের মেয়ে ও ১৪ বছরের ছেলের বিয়ে হতে পারে।

তাহিরিহ জাস্টিজ সেন্টার এখন পর্যন্ত জোরপূর্বক বিয়ে থেকে পালাতে চায়—এমন প্রায় ৪০০ শিশু ও নারীকে সহায়তা দিয়েছে। সংস্থাটি একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে জোরপূর্বক বিয়ের ঘটনা নিয়ে কাজ করে।

জাদার মতো আরেকজন লিনা আলোরি। কৈশোর পেরোনো ১৯ বছরের তরুণী। অসুস্থ দাদিকে দেখাতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তাঁকে ইয়েমেনে নিয়ে যান তাঁর বাবা। সেখানে বলা হয়, তাঁকে বিয়ে করতে হবে। কিন্তু তিনি রাজি না থাকলেও তাঁর কিছু করার ছিল না।

বরের বাড়িতে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলো। বলা হলো, বিয়েতে রাজি হলে বিয়ের পর দেশে ফিরতে পারবেন। লিনা আলোরি বলেন, তিনি দেশে ফিরতে পারলে পরিবারের জন্য ভিসার আবেদন করতে পারবেন বলে শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে টোপ দিলেন। সেই টোপ গিলল বরের পরিবার। আলোরি যখন কয়েক মাসের চেষ্টায় দেশে ফিরলেন, তখন বিমানবন্দরে অপেক্ষায় ছিলেন তাহিরিহর প্রতিনিধি।

বিদেশে নিয়েই যে কেবল মার্কিন নারীদের জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়, এমন নয়; ঘরেও এটা ঘটে। ২০১১ সালের এক জরিপে তাহিরিহ দেখেছে, দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে তিন হাজার জোর করে বিয়ের ঘটনা ঘটেছে।

গত মাসে এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৬ বছর বয়সী সান অ্যান্তিনিও বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় ছয় মাস ধরে বাবা-মা তাকে মেরে, কেটে, গরম পানি দিয়ে ঝলসে দিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালান। এ কারণে তাকে হাসপাতালেও যেতে হয়েছে। সান অ্যান্তিনিওর পরিবার মূলত ইরাক থেকে আসা।

এই নির্যাতনের আরেকটি বড় কারণ ছিল হবু বর অ্যান্তিনিওর বাবা-মায়ের অ্যাকাউন্টে ২০ হাজার ডলার দেন। এমনকি কনেকে সোনার গয়না ও জুয়েলারি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন বর। কিন্তু সুযোগ বুঝে অ্যান্তিনিও বাড়ি থেকে পালিয়ে এক আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেয়। টেক্সাসে পারিবারিক আইনভঙ্গের অভিযোগে তার বাবা-মাকে পরে গ্রেপ্তার করা হয়।

তবে আনুষ্ঠানিক বিয়ে ও জোর করে বিয়ের মধ্যেও কখনো কখনো একটি সাদৃশ্য থেকেই যায়। কারণ, অনেক সময় আনুষ্ঠানিক বিয়েও বর-কনের অমতে দেওয়া হয়। ফ্রেইডি রেইস এমনই ঘটনার শিকার। তিনি সিবিএস নিউজকে বলেন, শিশু বিয়ের আইন নিয়ে যখন কথা ওঠে, তখন যুক্তরাষ্ট্রকে ইরান, সৌদি আরব ও ইয়েমেনের সঙ্গে তুলনা করা হয়।

নিজের দুর্বিষহ জীবনের কথা মাথায় রেখে রেইস আনচেইনড অ্যাট লাস্ট নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। প্রতিষ্ঠানটি যেসব নারী ও শিশু আনুষ্ঠানিক বিয়ে ও জোরপূর্বক বিয়ে থেকে রেহাই পেতে চায়, তাদের সাহায্য করে। বিনা মূল্যে আইনি ও সামাজিক সেবা দেয় এবং মানসিকভাবে শক্তি জোগায়।

ব্রুকলিনের বাসিন্দা, গোঁড়া ধার্মিক ইহুদি পরিবারে জন্ম রেইসের বিয়ে হয় ১৯ বছর বয়সে। তিনি তাঁর বিবাহিত জীবনের প্রায় ১৫টি বছর স্ত্রী ও সন্তানের মা হিসেবে কাটিয়েছেন। বিয়ের তখন এক সপ্তাহ হয়নি, এরই মধ্যে একদিন তাঁর স্বামী দেরিতে ঘুম থেকে উঠে ক্রোধের বশে দেয়ালে ঘুষি মারেন। গায়ে কখনো হাত না তুললেও নানা চাপ তৈরি করত রেইসের ওপর।

alokmoy bangladesh news02.png

অবশেষে ২০১১ সালে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটাতে সক্ষম হন রেইস। কিন্তু স্বামীকে ছেড়ে যখন স্বস্তির শ্বাস নিবে নিবে ভাবছেন, তখন তাঁর পরিবার তাঁকে ছেড়ে যায়। এক বোন নামমাত্র যোগাযোগ রেখেছেন, কালেভদ্রে কথা হয়। রেইস সেই নারী, যাঁকে বিয়ের আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও এসএটি টেস্ট পরীক্ষায় বসবেন না বলে লিখিত দিতে হয়েছিল। নিউজার্সির রাটগার্স ইউনিভার্সিটি থেকে ৩২ বছর বয়সে রেইস গ্র্যাজুয়েট হন।

যুক্তরাষ্ট্রে বাল্যবিবাহের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। আনচেইনড তাদের এক যুগান্তকারী গবেষণায় দেখেছে, ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ শিশুর বাল্যবিবাহ হয়েছে। তাদের বয়স ১২। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বরের বয়স অনেক বেশি।

সিবিএস নিউজ পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে ৫৭ হাজার ৪০০ অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির বিয়ে হয়েছে। সেনসাস ব্যুরো’স আমেরিকান সার্ভের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পিউ রিসার্চ সেন্টার।

তবে বাল্যবিবাহের এ ঘটনা বেশি ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ও টেক্সাসে। ২০১৪ সালের হিসাবে দেখা যায়, প্রতি এক হাজারের মধ্যে সাতজন বিবাহিত। তাদের বয়স ১৫ থেকে ১৭। এমনকি ওকলাহামা, আরকানাস, টেনিসি, নর্থ ক্যারোলাইনা, নেভাদা, ক্যালিফোর্নিয়াসহ দক্ষিণ ও পশ্চিমের অঙ্গরাজ্যগুলোতেও বাল্যবিবাহ বেশি হয়। ফ্লোরিডায় বিচারক বয়স বিবেচনায় না নিয়ে বিয়ের লাইসেন্স দিতে পারেন, যদি আবেদনকারী গর্ভবতী হয়ে পড়ে থাকে।

এমনকি অভিবাসী ও নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যও এই সমস্যা থেকে মুক্ত নয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হিসাবে, নিউইয়র্কে ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১৮ বছরের কম বয়সের ৩ হাজার ৮৫০ শিশুর বিয়ে হয়।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!