বিশ্বে বায়ুদূষণের মাত্রা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই দূষিত বায়ু নিতে বাধ্য হয়। এ কারণে বছরে ৭০ লাখ মানুষ দূষণের শিকার হয়ে নানা রোগে মারা যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আজ বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বায়ুদূষণের এই ভয়াবহ তথ্য দিয়েছে।
ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাডহানম গ্রেবিয়াসস বলেন, ‘বায়ুদূষণ আমাদের সবার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে। তবে দরিদ্র এবং প্রান্তিক মানুষেরা এর সবচেয়ে বড় শিকার।’ তিনি বলেন, বিশ্বের ৩০০ কোটি মানুষ প্রতিদিন বায়ুদূষণকারী রান্নার চুলার বা অন্যান্য জ্বালানির ধোঁয়া গ্রহণ করছে। এসব মানুষের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে বলা হয়, দূষিত বায়ুর ক্ষুদ্র কণা মানুষের ফুসফুস এবং হৃদ্যন্ত্রের রক্ত সঞ্চালনপ্রক্রিয়ায় প্রবেশ করে। এর ফলে মানুষ স্ট্রোক, হৃদ্রোগ, ফুসফুসে ক্যানসার, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। আর এসব কারণে তাদের মৃত্যু হয়।
২০১৬ সালে বিশ্বের ৪২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় ঘরের বাইরের বায়ুদূষণজনিত বিভিন্ন রোগে। ওই সময়ে রান্নার বায়ুদূষণকারী চুলা ও জ্বালানির কারণে অন্তত ৩৮ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় হয়।
বায়ুদূষণের কারণে মৃত্যুর ৯০ শতাংশই হয় মূলত এশিয়া ও আফ্রিকার নিম্ন ও নিম্নমধ্য আয়ের দেশে। এ ছাড়া পূর্ব ভূমধ্যসাগরের অঞ্চল, ইউরোপ ও আমেরিকার মধ্য আয়ের দেশেও বায়ুদূষণের কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে।
ডব্লিউএইচও বলছে, বিশ্বের ৪০ শতাংশের বেশি মানুষের বাড়িতে পরিষ্কার বা পরিবেশবান্ধব রান্নার চুলা ও জ্বালানি নেই।
বায়ুদূষণ অসংক্রমণযোগ্য রোগের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। বিশ্বে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু হয় এক-চতুর্থাংশ মানুষের। এর সম্ভাব্য কারণ বায়ুদূষণ।
প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য ১০৮টি দেশের ৪ হাজার ৩০০ শহরের বায়ুর নমুনা সংগ্রহ করে জাতিসংঘের সংস্থাটি।
গ্রেবিয়াসস বলেন, ‘বায়ুদূষণ রোধে যদি জরুরি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে আমরা কখনো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব না।’
বায়ুদূষণ চরম মাত্রায় ছড়িয়ে পড়লেও বিভিন্ন দেশে এটি রোধে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ভারতে মাত্র দুই বছরে ৩ কোটি ৭০ লাখ নারীকে বিনা মূল্যে এলপিজি গ্যাসের চুলার সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবেদনে সালফেট, নাইট্রেট ও ব্ল্যাক কার্বনের ক্ষতিকর উপাদানগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে অতি ক্ষুদ্র কণার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়নি।
অধ্যাপক সালাম বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে শিল্প-কারখানা দিন দিন বাড়ছে। এর সঙ্গে বায়ুতে বাড়ছে নানা ধাতব উপাদানের উপস্থিতি। এবারের প্রতিবেদনে এসবের উল্লেখ নেই।