।। নমস্কার বন্ধুরা।।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নীলমের লেখামিতে আপনাদের স্বাগত জানাই। আশাকরি আপনারা ভালো আছেন। আমিও বেশ ভালোই আছি। গতকাল থেকে সামান্য ঝড় (জোরে বাতাস বলা চলে) বৃষ্টি হয়েছে রেমালের ফলে। আপনাদের ওদিকে কি পরিস্থিতি? শুনেছি কলকাতার দিকে খুব বৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের বন্ধুরা কেমন আছেন? আচ্ছা, আপনাদের মনে হচ্ছে না আমি তো পুণে তে থাকি তবে বৃষ্টি কিভাবে পেলাম? আমি এখন পশ্চিম মেদিনীপুরে। গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়ি এসেছি। আমার দেশের বাড়ি। দেশ শব্দটাতেই কী অসম্ভব মায়াবী টান। যারা ভিটে ছাড়া তারা বেশ বোঝেন। আমি তো যাযাবর। আজ এখানে তো কাল ওখানে। তবে এতে একটা সুবিধে, আমি নানান জায়গার রীতি, আচার, জীবন জানতে পারি। আপনাদের কেমন জীবন ভালো লাগে?
আজ আমি আপনাদের গোয়া জীবনের কিছুটা গল্প বলবো। মাত্র এক মাস হল আমি পুনাতে এসেছি। এর আগে আমি গোয়াতেই ছিলাম তাও এক বছরের জন্য। সে কারণেই আমি বলি গোয়া আমার ঝটিকা সফর। আগে অনেকবার বেড়াতে গেছি তবে সেই গোয়া আর থাকার জন্য গোয়ার মধ্যে অনেকটাই তফাৎ। যারা ভারতীয় বা ফরেন টুরিস্ট তাদের প্রত্যেকের কাছেই গোয়া একটা অদ্ভুত সুন্দর বেড়ানোর জায়গা। ইউরোপীয়রা বা রাশিয়ানরা এখানে আসেন ভিটামিন ডি সংশ্লেষ করতে। তাই বিচের স্যাকগুলিতে তাদেরই আমরা দেখতে পাই। এর আগে আমিও অনেকবার গোয়া গেছি তবে সেটা বেড়াতে। এবার গিয়ে উঠলাম থাকার জন্য। যখন থাকার জন্য গিয়েছিলাম তখন জানতাম না যে ওখানে আমি এক বছরই থাকবো। জীবন যেদিকে যায় সেদিকেই তো যেতে হয় কি আর করা যাবে।
গত বছরটা এমন সময় গোয়া পৌছালাম। তারপর সে কি হুড়োহুড়ি করে ঘর খোঁজা, মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করা। বাজার হাট কোথায় কি জেনে নেওয়া। একেবারে নতুন পরিবেশ, নতুন স্বাদ। শুরুতে খটমেটো লাগলেও পরের দিকে বেশ ভালই লাগতো। আমি ছিলাম গোয়ার পন্ডা নামক জায়গায়।
যতবার বেড়াতে এসেছি ততবারই দেখেছি গোয়া মানেই ক্রিস্টানদের রমরমা। এখানে না থাকলে বোধহয় এই ভুল আমার কোনদিনই ভাঙতো না। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ এখানে থাকেন। প্রত্যেকেই নিজের নিজের কালচার বজায় রেখে, একে অপরের সাথে বিদ্বেষ না করে, মহানন্দে বাস করেন। তবে সবকিছুর মধ্যেই একটা অদ্ভুত উদারতা আছে। হয়তো বিদেশীরা দীর্ঘদিন এখানে বাস করার প্রভাব। কিছু পর্তুগীজ মানসিকতা দেখতে পাওয়া যায়, আবার ভারতীয়ও। এই নতুন রাজ্যে অনাত্মীয়ে ঠাসা জায়গায় মানুষগুলো যদি একেবারেই সহানুভূতিশীল না হত আমি হয়তো হাপিয়ে উঠতাম৷ কিন্তু প্রথম দিন থেকেই রাস্তাঘাট, স্কুল, বাজার সমস্ত জায়গার লোকজন যেন সাহায্য করার জন্য অপেক্ষা করে আছেন৷ কী অমায়িক তাদের ব্যবহার৷ স্কুলের দিদিমণি বললেন 'ম্যাডাম আপনার অসুবিধে হলেই বলবেন, আমরা আছি, সব ব্যবস্থা করে দেব।'
কয়েকমাস থাকার পর বুঝলাম গোয়া টুরিস্টদের জন্য এক রকম আর বাসস্থান হিসেবে আরেক রকম। আমি যে জায়গায় থাকতাম তার এক দিকে গীর্জা, আরেকদিকে মন্দির আরেক দিকে মসজিদ৷ এখানে প্রতিটি ধর্মের উৎসব মানুষের উৎসব৷ মহরমের দিন রাস্তায় তাজিয়া বেরলে সকলেই সামিল হয়। আবার নবরাত্রির দিন ডান্ডিয়া খেলতেই এসে যায়। ক্রীসমাসে তো দেখার মতো। রাত ন'টার পর ট্রাকে করে লাল পোশাকের স্যান্টা বেরিয়ে ঘরে ঘরে শুভেচ্ছা দিয়ে যাচ্ছে৷ যত দিন গেছে আমি মুগ্ধ হয়েছি৷
জানেন বন্ধুরা, আমি যে দোকানে মাংস কিনতে যেতাম, সে দোকানের ক্যাশ বাক্সের টেবিলে লক্ষ্মী গণেশের মন্দির৷ সারাক্ষণ প্রদীপ জ্বলে৷ আর উল্টো দিকের দেওয়ালে মসজিদের ছবি, উর্দুতে কিছু লেখা (আমি উর্দু জানিনা তাই বলতে পারলাম না)। আবার দোকানের মাথায় একটি ক্রিসমাস ট্রি, সন্ধে হলেই আলো জ্বলে৷ কী অদ্ভুত আশ্চর্য, তাই না? এ যেন ছোট্ট ভারতবর্ষ৷ ইংরেজরা পার্টিশন করল। রক্ত ঝরালো। মানুষকে ভাগ করতে পারল কি?
পার্টিশনের কথা বললে স্বাধীনতার কথা মনে পড়ে। ১৯৪৭ সালে যখন ভারতবর্ষ স্বাধীন হয় তখন কিন্তু পর্তুগিজদের দমন ডিউ পন্ডিচেরি ও গোয়া সহ আরো কিছু রাজ্য যেমন নিজামের হায়দ্রাবাদ, নবাব হামিদুল্লাহের ভোপাল, রাজা হরি সিং-এর কাশ্মীর, জুনাগড়, সিকিম, ত্রিপুরা-মণিপুরে স্বাধীন ভারতের তিরঙ্গা উত্তোলন হয়নি৷ এদের মধ্যে অনেকেই পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হতে চেয়েছিল, অনেকেই স্বাধীন দেশ৷ তবে পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সবাই ভারতের সাথেই যুক্ত হয়ে যায়৷ গোয়া ছিল পর্তুগীজদের দখলে। ১৯৬১ সালে ভারতের সামরিক বাহিনী প্রথম দাদরা নগর হাভেলি দখল করে৷ সে সময় দমন দিউ গোয়ার সাথেই যুক্ত ছিল৷ পর্তুগিজরা ও সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে। তারাও লড়াই করে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। কিন্তু পরবর্তীতে ভারতীয় সামরিক বাহিনী যখন গোয়াতে প্রবেশ করলো তখন পর্তুগীজরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলো। পন্ডিচেরিত ছিল ফ্রান্সের উপনিবেশ। পর্তুগীজদের বিরূদ্ধে যারা লড়াই করেছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংগঠনগুলি হল আজাদ গোমন্তক দল, গোয়া লিবারেশন আর্মি, এছাড়াও ছিল সত্যাগ্রহ আন্দোলন৷ ১৯৬২ সালের অক্টোবর মাসে প্রথম পঞ্চায়েত ভোট এবং ডিসেম্বর মাসে প্রথম বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ তবে পর্তুগাল গোয়ার ভারতীয় ইউনিয়নে যোগদানকে স্বীকৃতি দিয়েছিল ১৯৭৪ সালে৷
এক একটা জায়গার কত কথা থাকে তাই না? আর সেই গল্প বলতে বলতে কোথা থেকে কোথায় হারিয়ে যাই৷ জানেন এখানকার মন্দিরগুলোর মতো আর্কিটেকচার ভারতবর্ষে আর একটিও নেই। এই যে বড় স্তম্ভটি দেখছেন এটি আসলে একটি প্রদীপ৷ যেদিন কোন বড় পূজো বা অনুষ্ঠান বা বিয়ে থাকে সেদিন জ্বালানো হয়। এরম বেশ কিছু মন্দির রয়েছে৷ আমি গিয়েছি তিন চারটিতে৷ মন্দিরগুলো কিন্তু হালফ্যাশনের না৷ বহু পুরনো। কোনটা ১৫০০ সালের আসেপাশে, কোনটা আবার ১৬০০ সালের। অথচ দেখুন কোথাও ভেঙে পড়েনি।
এটা সাফা মসজিদ। সামনের জলাশয়ে প্রায়শই লোক গিয়ে বসে। আর মস্ত বাগান আছে৷ রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে দেখলে মনটা ভরে যায়৷ এই মসজিদও তৈরি হয়েছিল ১৫০০ সালের আসেপাশে৷ সম্ভবত ১৫৬০ সালে। কে তৈরি করেছিলেন জানেন? বিজাপুরীর নবাব ইব্রাহিম আদল শাহ৷
এটা একটা চার্চ। মেয়ের স্কুলের পাশেই। ছবিটি তুলেছিলাম ক্রিসমাসের দিন৷ মজার কথা কি জানেন ক্রিশ্চান ছাড়া বাকি ধর্মের লোকেরাই ভিড় জমিয়ে দেখতে এসেছিল যীশুর মেলা।
অনেক কথা বললাম। তবে গোয়ার ওয়েদার, বাজার হাট এসব নিয়ে কিছুই বলা হল না৷ একটা জায়গা সম্পর্কে কি আর একদিনে সবটা বলা যায়? পরে আবার একদিন আসব গোয়ার ঝাপি নিয়ে। সেদিন বলব গোয়ার আরও অনেক গল্প৷
বন্ধুরা, খুব কি বোর করলাম আপনাদের? পড়ে বলবেন কেমন লেগেছে। আপনাদের মধ্যে যারা গোয়া বেড়াতে গেছেন তারাও বলবেন কেমন লেগেছে ক্যাথেলিক গোয়া, বিদেশী ঠাসা গোয়া। আজ তবে এ পর্যন্তই থাক?
ভালো থাকবেন। পরিবারের সবার জন্য মঙ্গল কামনা করি। ঈশ্বরের কৃপায় আপনারা সুস্থ থাকুন। আনন্দে থাকুন।
পোষ্টটি অনাকাংখিতভাবে আমার বাংলা ব্লগে করা হয় নাই, পোষ্ট করার পূর্বে একটু সতর্ক হওয়ার অনুরোধ করছি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একদমই তাই। কিন্তু বিষয়টা একেবারেই অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়ে গেছে। দ্বিতীয় বার কপি করে পোস্ট করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু SP নেই৷ পরে করব৷ পরের বার পোস্ট করার আগে এই বিষয়টা লক্ষ্য রাখব৷ আপনাকে ধন্যবাদ আমায় জানিয়ে দিলেন বলে৷ ভালো থাকবেন৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit