স্বপ্নদোষ এবং...

in amarbanglablog •  2 years ago 

ছোটো বেলায় খুব দুঃস্বপ্ন দেখতাম। রাতে ভয়ে ঘুম ভেঙে যেতো। ঘুম ভেঙে তারিন আপুদের পেয়ারা গাছের পাতার ছায়াকে মাঝরাতের ল্যাম্পপোস্টের আলোয় জানালার পর্দায় নড়েচড়ে উঠতে দেখতাম। গলা শুকিয়ে আসতো। আম্মুকে ডেকে তুলতাম। আম্মু আয়াতুল কুরসি পড়ে ফুঁ দিয়ে দিতো। আর আব্বা সকালে স্বপ্নের বিবরণ শুনে ফ্যাচ ফ্যাচ করে হাসতো। অসহ্য! অপমানজনক।

আমার বেশির ভাগ দুঃস্বপ্নই ছিলো তাড়া খাচ্ছি বা খুব করে দৌড়াচ্ছি, উড়ছি এই ধরনের। ক্লাস টু/থ্রিতে পড়ি হবে। তা একবার দেখছি, একটা বড় ভোটকা বুদ্ধিমান কালো এঁড়ে দুহাতে লম্বা একটা রামদা ধরে আমাকে বিষম তেড়ে বেড়াচ্ছে।
বুদ্ধিমান বলছি কারণ ওটাকে আমার আজও বুদ্ধিদীপ্তই মনে হয়। রামদা হাতে আমাকে কোপাতে আমার সাথে সাথে সেও গাছ বেয়েও উঠেছিলো। সে যাক। স্বপ্নের গভীরে না যাই। ঘটনা তো আসলে সেখানে না।

ঘটনা হলো, বর্তমানের তুলনায় পুচ্চিকালে আমি ভালো এবং মাড়িচাপা মেয়ে ছিলাম। সে এখন কালের বিবর্তনে ইতিহাস। একদিন এই দুঃস্বপনের প্যাড়া মুক্তির এক অভিনব উপায় গায়েব ☝ হইতে তিনিই প্রদর্শন করলেন।
নামাজশিক্ষা বই হাতে সূরা মুখস্থ করার চেষ্টা করছি। হঠাৎ দেখি বইয়ের শেষের দিকে এক পাতায় লিখা, স্বামীকে বশ করিবার দোয়া। ডিমের ওপর লিখিয়া স্বামীকে খাওয়াইতে হইবে। তাইলে নাকি স্বামী অত্যধিক ভালোবাসিবে। ব্যাপারটা না বুঝলেও কৌতুহল খুব হলো।

পাতা মেলে দেখি লিখা, স্ত্রীর স্বম্মুখের চুলের গোছা ধরিয়া সূরায়ে অমুক পড়িয়া দম করিলে স্ত্রী বশিভূত হয়। প্রিয়তম, অমুক তমুকের মন পাইবার দোয়া। পানপাতায় লিখিয়া খাওয়াইতে হয়, ফুলের গন্ধ শুকাইয়া দিতে হয়। হ্যান ত্যান সে ম্যালা কিছু।
খুবই ইন্টারেস্টিং লাগছে নতুন কিছু। এইভাবে পড়তে পড়তে হঠাৎ চোখে পরলো আমার মুক্তির উপায়।
পণ করলাম আজ আমি এই ভীতির বেড়াজাল ছিন্ন করবোই। এক লাইনের দোয়াটা দুপুরে আম্মা ভাতঘুম দিলে জানালার শিকের ভেতর দিয়ে পা ঝুলিয়ে বসে ঠিক মুখস্থ করে ফেললাম। রাত হলো। আম্মা লাইট অফ করে পাশে শুয়ে খানিকপরই ঘুম। আমি জেগে জেগে বুকের ওপর হাত দিয়ে একশবার নিয়মানুযায়ী দোয়াটা পড়লাম। জানিনা ১০০বার পড়ার আগেই হয়তো ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।

এরপর থেকে এই ২৫ বছরের জীবনে আমাকে আর দুঃস্বপ্ন নিয়ে খুব একটা ভুগতে হয় নি। হ্যা দেখেছি। কিন্তু সেগুলো বাস্তবিক এবং দৈনন্দিন জীবনের পেরেশানী থেকে উদ্ভুত। দিনে দিনে বড় হয়েছি। বুঝছি। কেটে গেছে ভীতি।
এতবড় করে লিখলাম। ঘটনা তো আসলে এগুলোও না। মূল ঘটনা হলো, দোয়ার শুরুতে লিখা ছিলো, "স্বপ্নদোষ বন্ধ হইবার দোয়া।"

সেদিন ইহার তাৎপর্য ভুল বুঝেছি৷ তবে আজ বুঝি কি ভুল বুঝেছি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...