আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ, আশাকরি বন্ধুরা আপনারা সবাই ভালো আছেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে আমিও ভালো আছি, আজকে আপনাদের আমি শেয়ার করবো আমার জীবনের একটি বাস্তব ঘটনা। আমার নাম জামিল, বর্তমান বয়স ৩০ বছর, মাস্টার্স পাশ করে চাকরির আশায় ঘুরে বেড়াই, তখন আমার বয়স ২৮ বছর, আমার বড় ভাই একজন শিক্ষক। তিনি একদিন আমাকে বললেন, তার এক ছাত্র ঢাকাতে ভালো একটা চাকরি করে, তিনি তার সাথে কথা বলেছেন, আমি চাইলে সেখানে ভালো একটা চাকরি করতে পারি। তখন আমি তার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিলাম। জানতে পারলাম, বাবুরহাট মসজিদের ইমাম ছিলেন। এবং তিনি একজন কোরআনের হাফেজ। তখন আমি আশ্বস্ত হলাম যে একজন ইমাম ও কোরআনের হাফেজ আমার সাথে বেইমানি করতে পারবে না।
আমি টিউশনি করতাম, যখন আশ্বস্ত হলাম তারপর আমি আমার সবগুলো টিউশন ছেড়ে দিলাম। নতুন জামা কাপড় কিনে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। সারারাত বাসে ভ্রমন করলাম। ভোর পাঁচটার সময় ঢাকায় পৌছালাম, তারপর সেই হাফেজ সাহেবের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম, বারবার ফোন দিয়ে ও যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হলাম, তখন আমি কিছুটা হতাশ হলাম, কিন্তু নিরাশ হলাম না, কারন আমি জানি তিনি একজন কোরআনের হাফেজ, বার বার ফোন ডুকানোর চেষ্টা করতে লাগলাম, এভাবে প্রায় দুই ঘন্টা পার করে ফেললাম, তারপরও আমি নিরাশ হয়নি।
সাড়ে সাতটার দিকে অবশেষে ফোন কল ডুকলো, এবং ফোন রিসিভ করলো, আমাকে বললো কিছু সময় ওখানে অপেক্ষা করতে, আমি কথা মত অপেক্ষা করতে লাগলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে অবশেষে হাফেজ সাহেব পাঞ্জাবি টুপি পরিহিত অবস্থায় আমার সামনে হাজির হলো, সাথে আরেকজন আগন্তুক, তিনিও পাঞ্জাবি টুপি পরিহিত। আসা মাত্র সালাম বিনিময় ও মুসাফাহ হলো। আমাকে বললেন, তাদের পিছন পিছন হাঁটতে, আমিও তাদের অনুসরণ করতে লাগলাম। প্রায় বিশ মিনিট হাঁটার পরে গন্তব্য স্থানে পৌছালাম। তখন আটটা বেজে গেছে, পাঁচ রুমের ছোট একটা টিন সেট দালান ঘর, আমাকে একটা রুমে বিশ্রাম নিতে দিলো, কিছু সময় পরে আমাকে বললো, গোসল করে আসতে, আমি নতুন লুঙ্গি ও তোয়ালে নিয়ে গোসল করতে বাথরুমে ডুকলাম,
গোসল করে আসার পরে সকালের নাশতা হিসাবে মুরগির গোশ আর ডাল খেতে দিল, খাওয়ার কিছু সময় পরে আমাকে যে দুইজন রিসিভ করতে আসছিলো, তারা আমার রুমে প্রবেশ করলো, এবং আমার সকল কাগজ পত্র দেখতে চাইলো, দেখার পরে বললো, সবকিছু ঠিক আছে, আমি চাইলে ভালো একটা চাকরি করতে পারি, তবে দুইটা শর্ত আছে, প্রথমত কমপক্ষে দুই বছর চাকরি করতে হবে, দ্বিতীয়ত জামানত হিসাবে পঞ্চাশ হাজার টাকা জামানত দিতে হবে, আপাতত দশ হাজার টাকা দিলে হবে, আস্তে আস্তে বাকী টাকা পরিশোধ করবেন, আমি বললাম, অফিস দেখলাম না, আমার কোনো ভাইভা হলোনা, আমার কাজ কি আমি জানিনা, তাহলে আগে কেনো টাকা দিবো, তখন তিনি বললেন, আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্যারকে জানিয়েছি, স্যার বলছে ভাইভা লাগবেনা, চাকরি হবে। আমাকে বললো আপনার কাছে কত টাকা আছে তাই দেন, আমি বললাম, দেওয়ার মত তেমন টাকা নেই, তখন হাফেজ সাহেব বললো, স্যারকে ফোন দিয়ে বিকাশে টাকা দিতে বলেন, আমি বললাম, আগে অফিসে যাই, চাকরি হোক, তারপর টাকা দিবো। তখন তারা বললো মনে করেন, আপনার চাকরি হয়ে গেছে, আপনি টাকা না দিলে আরো লোক আছে, তারা টাকা দিলে কিন্তু আপনার চাকরি হবেনা, আপনার বড় ভাইকে ফোন দেন, বিকাশে টাকা দিতে বলেন। আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম, টাকা দিলে ফেসে যাবো, আমাকে একটা উপায় বের করে এখান থেকে পালাতে হবে, তখন আমি একটা বুদ্ধি বের করে বললাম, টাকা আমি দিতে রাজি, আগে অফিস দেখতে চাই, তাই বলে আমি আমার সব জামা কাপড় গোছাতে লাগলাম, তখন তারা বললো জামা কাপড় ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছেন কেনো, আমি বললাম, যদি চাকরি না হয়, তখন আমি আবার ফেরত আসবো নাকি, সেজন্য সব গুছিয়ে নিচ্ছি, তারপর আমি তাদের দুইজনের সাথে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।
তারা দুইজন আমাকে পাহারা দেওয়ার মত একজন সামনে, আরেকজন পিছনে ফোনে কথা বলতে লাগলো। ফিস করে কথা বলে, হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে, যাতে আমি কোনোকিছু না শুনতে পাই, কিন্তু আমি স্পষ্টভাবে কথাগুলো শুনছিলাম, সে বলছিলো, টাকা দিতে চাচ্ছে না, অফিস দেখতে চায়, এখন কি করবো, আরো অনেক কথা। আমি তো সুযোগের অপেক্ষায়, কখন পালাতে পারি, হঠাৎ দেখি দুজনে ফোনে একটু দূরে দাড়িয়ে কথা বলছে, আমি একটা দৌড় দিয়ে একটু সামনে গিয়ে একটা লেগুনা ড্রাইভারকে বললাম, আমি যাবো, তাই বলে উঠে পড়লাম, তখন একটু শান্তিতে নিঃশ্বাস নিলাম, আল্লাহর অশেষ রহমতে নিরাপদে বাড়ি ফিরলাম। আমার জীবনে ঘটে যাওয়া এই বাস্তব ঘটনা সম্পর্কে আপনারা অবশ্যই মন্তব্য করবেন। আল্লাহ হাফেজ।