বৈবাহিক অবস্থার দিক থেকে বিবেচনা করলে চার ধরণের মানুষ দেখা যায়- অবিবাহিত, বিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত এবং বিধবা বা বিপত্নীক।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিদিন বাঁচে বিবাহিতরা, আর সবচেয়ে কমদিন বাঁচে তালাকপ্রাপ্ত হওয়ার পর যারা সিঙ্গেলই থেকে যায়। ( গোল্ডম্যান ১৯৯০, কিস্কার ১৯৮৭)
এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ধরা হয়, মানুষ যখন বিয়ে করে, তখন সে জীবন সঙ্গী বানানোর জন্য সুস্বাস্থ্যেরই কাউকে খুঁজে নেয়। অনেকজনের মাঝে থেকে যাকে সামাজিক, মানসিক ও শারীরিকভাবে সবচেয়ে বেশি যোগ্য মনে করে, তাকে সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করে।
এ কারণে সাধারণত প্রতিবন্ধি বা অসুস্থ ব্যক্তিদের বিয়ের সুযোগ কম থাকে, তারা বাঁচেও কম।
এছাড়া বিবাহিতরা কেয়ার বা যত্ন জিনিসটা বেশি পায়। ফলে অসুস্থ কিংবা রোগে আক্রান্ত হলে যে যত্ন দরকার তা সহজেই সঙ্গীর কাছে থেকে পায়। নিজের ছেলে মেয়েও অনেক সাপোর্ট দিতে পারে।
কিন্তু সিঙ্গেলদের এই সুযোগ তেমন বেশি নেই।
তাছাড়া বিবাহিতরা অনেক শৃঙ্খল ও গোছালো জীবন যাপন করে অবিবাহিতদের তুলনায়। এটাও তাদের বেশিদিন বেঁচে থাকার কারণ।
আরেকটা গবেষণায় দেখা গেছে, ২৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী পুরুষদের ক্ষেত্রে বিবাহিতদের চেয়ে অবিবাহিতদের আত্মহত্যার হার দিগুন। নারীদের ক্ষেত্রেও একই জিনিস দেখা গেছে, তবে আত্মহত্যার পরিমাণ এতো বেশি না।
তাছাড়া ধুমপান ও মদ্যপানজনিত কারণে মৃত্যুর ক্ষেত্রেও অবিবাহিতদের সংখ্যা বিবাহিতদের তুলনায় অনেক বেশি। (গোভ, ১৯৭৩)
আরেকটা গবেষণায় দেখা গেছে, অবিবাহিত কেউ যদি দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকে তার মৃত্যুও তাড়াতাড়ি হয়; অর্থাৎ যে একই সাথে গরীব ও অবিবাহিত, সে দ্রুত মারা যায়। (স্মিথ ১৯৯৪)
আমাদের সমাজে বিয়ে না করা বা দেরি করে বিয়ে করার অনেকগুলো কারণের মাঝে একটা কারণ হল প্রতিষ্ঠিত না হওয়া। এখানে প্রতিষ্ঠিত হওয়া মানে হল আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
অথচ বিভিন্ন গবেষণায় বের হয়ে এসেছে, বিয়ে করার পরই মানুষের আয় বৃদ্ধি পায়। বয়স, অভিজ্ঞতা, শিক্ষা একই হওয়া সত্ত্বেও বিবাহিত পুরুষরা অবিবাহিতদের তুলনায় প্রতি ঘণ্টায় ১১ গুণ বেশি আয় করে। (করেনম্যান ১৯৯১)
এটার সম্ভাব্য কারণ হল বিবাহিতরা পরিবারের কথা চিন্তা করে কর্মক্ষেত্রে বেশি পরিশ্রমী ও দায়িত্বশীল হয়।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, যে তথ্যগুলো এখন বিভিন্ন গবেষণায় বের হয়ে আসছে, তা আমাদের ধর্মগ্রন্থ কুরআনে আল্লাহ অনেক আগেই বলে দিয়েছেন।
‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।’ (সূরা আন-নূর : ৩২)
বিয়ের মাধ্যমেও মানুষের সংসারের অভাব দূর হয়, তার নিশ্চয়তা স্বয়ং আল্লাহই আমাদের দিয়েছেন।
প্রত্যেক মানুষের জন্য তাদের নিজস্ব রিজিক বরাদ্দ থাকে। বিয়ের পর সংসারে যে নতুন মানুষটি আসে, সে তার জন্য বরাদ্দ রিজিক নিয়েই আসে। ফলে দুজনের রিজিক একসাথে হয়ে তা আরো বৃদ্ধি পায়।
তাই, সচ্ছল নই, প্রতিষ্ঠিত নই- এসব বলে বিয়ে দেরি করে করা কখনোই উচিত নয়।
নারী পুরুষ সবার জন্যই দেরীতে বিয়ের অনেক কুফল আছে। তাছাড়া দির্ঘায়ুর জন্য হলেও ঠিক সময়ে বিয়ে করাটা অনেক বেশি জরুরী।