হারিয়ে যাওয়া চাবি

in banglagolpo •  last month 

হারিয়ে যাওয়া চাবি
1000000940.jpg

একটা ছোট্ট গ্রামে বাস করত মিতু নামের একটি মেয়ে। সে খুবই কৌতূহলী এবং দুঃসাহসিক ছিল। একদিন বিকেলে, গ্রামের শেষ প্রান্তে একটি পুরনো, পরিত্যক্ত বাড়ির পাশে খেলতে খেলতে মিতু মাটির নিচে একটা ছোট্ট মরচে পড়া চাবি খুঁজে পেল।

চাবিটা দেখে সে খুব অবাক হয়ে গেল। "এই চাবিটা কি খোলে?" ভাবল মিতু। চাবিটা বেশ পুরনো, এর ওপর ছিল অনেক জটিল নকশা। কিন্তু আশেপাশে এমন কোনো দরজা বা তালা ছিল না, যা এর সাথে মিলতে পারে।

চাবিটার রহস্য ভেদ করতে মিতু তখন থেকেই শুরু করে দিল একটি অভিযান। গ্রামের লোকদের কাছে সে জানতে চাইল, কেউ কি চাবিটা চিনতে পারে কিনা। কেউ হেসে বলল, "পুরনো বাড়ির কোনো তালার চাবি হবে," আবার কেউ বলল, "বহু পুরনো কোনো গুপ্তধনের চাবি হবে এটি।"

এই কথা শুনে মিতুর মন আনন্দে নেচে উঠল। গুপ্তধনের খোঁজে সে পুরো গ্রাম চষে বেড়ালো। পুরনো লাইব্রেরিতে গিয়ে গ্রামের ইতিহাস জানল, বাতিঘরে গেল যেখানে গুপ্তধনের গল্প শোনা যেত ছোটদের মুখে মুখে।

একদিন রাতে, যখন সে তার দাদুর সাথে বসে গল্প করছিল, দাদু হঠাৎ তার হাতে ধরা চাবিটা দেখে চমকে উঠলেন। "এই চাবিটা তোমার পরদাদির ছিল," বললেন দাদু। "এটা দিয়ে সে একটা বিশেষ সিন্দুক খুলত, যেখানে আমাদের পরিবারের স্মৃতিচিহ্ন, পুরনো চিঠি, ছবি, আর কিছু বিশেষ জিনিসপত্র রাখা থাকত।"

মিতু বিস্ময়ে চোখ বড় করে বলল, "সিন্দুকটা কোথায় আছে?"

দাদু তাকে বাড়ির আঙিনায় পুরনো গুদাম ঘরে নিয়ে গেলেন। সেখানে ধুলোমাখা কাপড়ের নিচে লুকিয়ে ছিল সেই কাঠের সিন্দুক। মিতু চাবিটা দিয়ে সিন্দুকটা খুলতেই অবাক হয়ে গেল। সিন্দুকের ভিতরে সোনা বা রূপার গুপ্তধন ছিল না, কিন্তু ছিল তার পরিবারের ইতিহাস — পুরনো চিঠি, ছবি, আর স্মৃতির ভাণ্ডার।

মিতু বুঝল, আসল ধন-সম্পদ সোনা বা রূপা নয়, বরং পরিবারের স্মৃতি, ভালোবাসা, আর গল্প। সেই দিন থেকে মিতু তার পরিবারের সাথে গভীরভাবে যুক্ত অনুভব করল, জেনে গেল যে তার পূর্বপুরুষদের গল্পও তার নিজেরই অংশ।

এভাবেই তার অভিযান শেষ হলো, কিন্তু গুপ্তধন খুঁজে পাওয়া নয়, বরং এমন কিছু আবিষ্কার করল যা তার হৃদয়ে চিরকালের জন্য থেকে গেল — তার পরিচয়ের আসল রহস্য।

শেষ।


আশা করি গল্পটা ভালো লেগেছে!

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!