বাইরে থেকে একটা হালকা আলো ঘরে ভিতর প্রবেশ করে ঘরটাকে আলোকিত করে দিচ্ছে, আলোয় দুটো শরীর একে ওপরের মধ্যে যেন ভেসে যাচ্ছে, অন্ধকার আবছা আলোয় কিছু স্পষ্ট বোঝা না গেলেও দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দ যেন পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে, মিনি অনেকবার অনিক কে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও অনিক কিছুতেই নিজেকে বেঁধে রাখতে পারছেনা।
মিনি আর অনিকের বিয়ের একবছর হতে চলল, অনীক সরকারি অফিসে কর্মরত, আর মিনির ছোট্ট একটা বুটিক, এই নিয়ে তাদের বেশ সুখের জীবন, দুজনের প্রেম সেই কলেজ থেকে, মিনি সবে প্রথম বর্ষের ছাত্রী আর অনীক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, কিন্তু অনীক একটু বেশি পরিচিত ছিল কলেজের ক্যালচারাল ডির্পাটমেন্টের হেড, মিনির সাথে সেখানেই অনীকের আলাপ, কলেজ শেষের পর মিনি আর্ট নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে আর অনীক নিজের কেরিয়ার গুছিয়ে গেছে , অবশেষে আট বছরের প্রেম গতবছর বিয়েতে পরিণতি পেয়েছে।
স্নান করে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে ব্যালকনির সামনেটা এসে দাঁড়ালো মিনি, হায়দ্রাবাদ শহরে সকাল টা ভীষণ নজর কাড়ে , মনে হয় যেন পৃথিবীর সব সুখ এই শহরটায় এসে জমা হয়েছে, হঠাৎ সম্বিত ফিরল মিনির ফোনের আওয়াজে অনীকের ফোনে পরপর নোটিফিকেশন ঢোকার আওয়াজ, এই আওয়াজে ও অনীকের ঘুম ভাঙছে না, আজ যেহেতু রবিবার তাই আজ তো সকাল দশটার আগে বিছানা ছেড়ে উঠতেই দেখা যাবে না, ফোনটা হাতে নিয়ে সাইলেন্ট করতে গিয়ে চোখটা আটকে গেল মিনির , কাল রাত থেকে আজ সব মিলিয়ে ২৬২ টা হোয়াটসঅ্যাপে একটা নাম্বার থেকে ম্যাসেজ,
ম্যাসেজগুলো নোটিফিকেশন থেকে চেক করে মিনি স্থম্ভিত, অনীকের গলার আওয়াজে ঘোর কাটল মিনির,
" একি আমার ফোন তোমার হাতে",
"নাহ্ এতবার আওয়াজ হচ্ছিলো বলে..."
কথাটা শেষ করার পূর্বে অনীক হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিল,
" মিনি সবসময় এভাবে আমার ফোন ঘাঁটা টা বন্ধ করো" অনীক বলে উঠলো,
ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে অনীক একটু নিঃশ্বাস ফেলে ফোনে কাকে যেন বিরক্তি ভাব নিয়ে কিছু লিখে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো, তারপর নিজে একটু বিস্মিত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল,
অন্যদিকে চুপ চাপ রান্না ঘরে মিনি জলখাবার বানাতে ব্যস্ত হঠাৎ পিছন থেকে এসে অনীক জড়িয়ে ধরে কাঁধে পিঠে গলায় চুম্বনে ভরিয়ে দিতে শুরু করলো,
একি অনীক ছাড়ো,
নাহ্! তুমি আগে বলো তুমি রাগ করনি,
রাগ ! কেন বলোতো তুমি কি রাগ করার মতো কিছু করেছ, আচ্ছা অনীক একটা উত্তর দেবে ,
কি! বলো,
তুমি কি আজও আগের মতো ভালোবাসো?
এসব কেন জিজ্ঞেস করছো,
নাহ্ শুনতে তো ইচ্ছে করে , বলে অনীক জড়িয়ে ধরলো মিনি,
গত কয়েকদিন ধরে মিনি যেনএকটু অন্যরকম ব্যবহার করছে,
অনীক ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ও জেগে বুটিকের কাজ করে চলে,
বাথরুম যাওয়ার পথে অনীক লক্ষ্য করেছে , জিজ্ঞেস করলে উত্তর এসেছে সামনে দূর্গাপূজা তাই একটু ব্যস্ততা চলছে,
অনীক কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেও মিনির কিছু কিছু ব্যবহার আবার অনীক কে ভুলিয়ে দিতে বাধ্য করে,
সেপ্টেম্বর মাসে হায়দ্রাবাদে হুটহাট বৃষ্টি চলে আসে , গত কয়েকদিন যাবত সন্ধ্যা বেলায় ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে, অনীক ভেজে অবস্থায় ঘরে পা রাখতেই অবাক কেউ যেন ঘরটাকে সুন্দর করে নতুনভাবে গুছিয়ে রেখেছে,
মিনি এটা তুমি গুছিয়েছ ,বলে চেঁচিয়ে উঠলো,
মিনি পিছন থেকে সাড়া দিল
হ্যাঁ ! ময়লা দূর করলাম আজ, ওহ্! তাড়াতাড়ি জামা কাপড় ছেড়ে চলে এসো পকোড়া ভেজেছি গরম গরম, তাঁর সাথে একটা সারপ্রাইজ,
সারপ্রাইজ ? কি সারপ্রাইজ!
জিজ্ঞেস করার আগেই মিনি ঘরছেড়ে বেরিয়ে গেল,
ডাইনিং হলে এসে অনীক অবাক,
খাওয়ার টেবিলের ওপর দুটো কাঁচের গ্লাস তাঁর সাথে একটা ব্র্যান্ডি বোতল , রান্না ঘর থেকে দুটো প্লেটে করে পকোড়া সাজিয়ে নিয়ে এসেছে, ব্র্যান্ডি বোতলের ছিপি খুলে আগেই দুটো গ্লাসে ড্রিঙ্ক মিশিয়ে সুন্দর করে টেবিলে পরিবেশন করেছে, অনীক একটা চেয়ারে বসতেই হাতে একটা গ্লাস ধরিয়ে ওপর প্রান্তে মিনি বসল,
অনীক খোশমেজাজে ড্রিঙ্কস আর পকোড়া খাচ্ছে আর বিপরীতে মিনি অনীককে এক অন্যরকম দৃষ্টিতে দেখে চলেছে,
অনেকক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ মিনি বলে উঠলো চলো না কোথাও থেকে ঘুরে আসি " চলো না কাছাকাছি কোথাও থেকে ঘুরে আসি",
অনীক এক গাল হেসে মিনি কে সঙ্গে করে বেরিয়ে পড়ল,
গাড়ি চালাতে চালাতে মাঝে মাঝে অনীক কে ব্রেক মারতে দেখে মিনি অবাক হয়ে যায়,
" একি কি করছো দেখে চালাও",
লেকের সামনে এসে দাঁড় করায় গাড়ি , অনীক কে ইতস্তত করতে দেখে মিনি ভয় পেয়ে যায় " কি হল অনীক ,কি হচ্ছে বলো",
শুধু অস্পষ্ট কন্ঠে অনীক বলে ওঠে " মিনি আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে, বুকের বাঁদিকটা বডড জ্বলছে",
মিনি নিজেকে আর রাগ ধরে রাখতে না পেরে ফুঁসে উঠলো,
" কিরকম জ্বলছে, জ্বলে শেষ হয়ে যাচ্ছ বলো, মনে পড়ে সেদিনটা যেদিন তুমি সকালে আমার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়েছিলে, ভাবলে কি করে তুমি, কি করে করলে তুমি, রোজ রাতে নরপিশাচদের মতো ভোগ করে , তুমি আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্য একটা মেয়েকে নগ্ন অবস্থায় তাকে ভোগ করো আমার আড়ালে , তাঁর শরীর মনে করে রোজ রাতে আমাকে ছিঁড়ে খেয়েছ, আমি স্ত্রী হয়ে কিভাবে মেনে নেব বলো, যে আমার স্বামী যে ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে ঘোরে সে কিনা তারই ব্রেডরুমে তাঁর স্ত্রী উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও অন্য এক মহিলার শরীর ভোগ করে গেছে, আমি ও জ্বলে ছারখার হয়ে গেছি আর সেখানে তুমি এতো ভালো কিভাবে থাকতে পারো , আর তাই খুব যত্ন করে তোমার ড্রিঙ্কসটা বানিয়েছি কি মেশানো ছিল যেন "strychnine",
অনীক চোখ খুলতে পারছিল না মিনির দিকে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই গাড়ির স্টিয়ারিং এর ওপর লুটিয়ে পড়লো,
মিনি অনেকক্ষণ অনীকের দিকে চেয়ে কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরলো " অনীক এই তাকাও আমার দিকে কিগো, আমি তো তোমাকে ভালোবেসেছিলাম কেন করলে এরকম কেন, কিসের কম পড়েছিল বলো কিসের কম ",
ঘড়িতে তখন সকাল ছটা হঠাৎ করে ফোনের আওয়াজে অনীকের মা মানে নীলা ঘুম থেকে ধড়ফড় করতে এসে রিসিভার তুলতেই ওদিক থেকে মিনির গলার স্বর,
" কি বলছিস? কখন হল এসব "?
ম্যাডাম আপনি এটা খুন কিভাবে বলছেন , ময়নাতদন্তে তো খুন ধরা পড়েনি,
মিনি কিছু বলার আগেই পিছন থেকে নীলা ডেকে উঠলেন,
" মিনি! ",
পিছনে ফিরতেই মিনি দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো,
" কাঁদিস না, কি বলছে পুলিশ অফিসার",
" এটা নাকি একটা অ্যাকসিডেন্ট, কিন্তু মা আমি বলছি এটা খুন হয়েছে",
"নমস্কার আমি ত্রিদিব যাদব, হায়দ্রাবাদে পুলিশ প্রশাসন আপনার ছেলের বডিটা উদ্ধার করেন লেকের ধারে গাড়ির মধ্যে থেকে , আপনার বউমায় আমাদের খবর দেন, ঐ রাস্তায় ট্রাফিক সাহায্যে আমরা উদ্ধার করি, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এসেছে কিন্তু ওতে পরিস্কার এটা সাধারণ কার্ডিয়াক অ্যাটাক, তবে ম্যাডাম কিছুতেই মানতে চাইছেন না",
মিনি আবার বলে উঠলো " নাহ্ হতেই পারেনা অনীকের তো কখনও হ্যাটের অসুখ ছিল না মা তবে কিভাবে , নাহ্ অফিসার এটা খুন এটা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়",
নীলা কিছু বলার আগেই আবার ইন্সপেক্টর যাদব বলে উঠলো" ওহ্ extremely sorry আমি একটা জিনিস বলতেই ভুলে গেছিলাম আপনার স্বামীর বামদিকের হার্টে একটু সমস্যা ছিল",
মিনি সবটা শুনে চুপচাপ পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করল,
অফিসার ডাকতে গেলে নীলা আটকে বলেন " যেতে দিন"।।