ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান লে. জেনারেল নিয়াজির কাছে এক বার্তায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জানান, মার্কিন সপ্তম নৌবহর বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। চীনও যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ দিকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ড. মালেকের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ১৯৭১ সালের আজকের দিনে জাতিসঙ্ঘের কাছে একটি বার্তা পাঠান।
বার্তায় পূর্ব পাকিস্তান থেকে সামরিক ও বেসামরিক পাকিস্তানিদের পশ্চিম পাকিস্তানে সরিয়ে নেয়ার জন্য জাতিসঙ্ঘের সাহায্য চান তিনি। কিন্তু জাতিসঙ্ঘে পাকিস্তানের স্থায়ী দূত আগাশাহি সে বার্তা প্রত্যাখ্যান করার অনুরোধ জানান জাতিসঙ্ঘ বরাবর। এভাবে পূর্ব পাকিস্তানে অবরুদ্ধ অসহায় পাকিস্তানি সৈন্যরা যখন পরাজয় মেনে নিয়ে আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, পশ্চিম পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার তখনো যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার শেষ চেষ্টা করে যাচ্ছিল।
ঢাকায় বিকেল ৩টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সান্ধ্য আইন জারি করা হয়। ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর সহায়তায় ঢাকা থেকে ব্রিটিশ ও অন্য বিদেশী নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ঢাকায় বিদেশী দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সরিয়ে নেয়ার জন্য ঢাকা বিমানবন্দরের রানওয়ে মেরামত এবং আন্তর্জাতিক বিমান অবতরণের সুযোগ দেয়া হয়। এ জন্য বিমানবন্দরে বিমান হামলা বন্ধ রাখে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ও মিত্রবাহিনী।
আজকের দিনে ঢাকায় সকাল থেকে প্রচণ্ড লড়াই চলে। মুক্তিবাহিনীর বীর ক্র্যাক প্লাটুন সকাল ১০টায় তোপখানা রোডে মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটায়। গেরিলারা সারা ঢাকার অলিগলি ছড়িয়ে পড়ে। পাকবাহিনী হেলিকপ্টারে কমান্ডো নামানোর চেষ্টা করেও সফল হয়নি। ঢাকার চার পাশে মিত্রবাহিনী নির্দিষ্ট এলাকায় রাতে ছত্রী সৈন্য অবতরণ করায়।
১৯৭১ সালের আজকের দিনে বাংলাদেশের প্রায় সব থানা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে এসে যায়। তিন দিকে ভারতবেষ্টিত পূর্ব পাকিস্তানে অবরুদ্ধ পাকিস্তান বাহিনী সম্মিলিত বাহিনীর আক্রমণের মুখে অসহায়ের মতো দলে দলে আত্মসমর্পণ করতে থাকে। মুক্তির সুবাতাস ছড়িয়ে পড়ে চার দিকে।
একের পর এক মুক্ত হতে থাকে দেশের বিভিন্ন এলাকা। মুক্ত হয় জামালপুর, ময়মনসিংহ, গাইবান্ধা, চণ্ডীপুর, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, ফুলছড়িহাট, বাহাদুরাবাদ ঘাট, পিসপাড়া, দুর্গাদীঘি, বিলগ্রামসহ আরো অনেক এলাকা।