যে কারণে পণ্ড হলো ট্রাম্প-কিম বৈঠক

in blog •  7 years ago 

 খবরটি দেখে মোটেও অবাক হইনি বরং যা ভেবেছিলাম তাই ঘটল। আসন্ন জুন ১২ তারিখের আমেরিকা-উত্তর কোরিয়ার সামিট কিছুক্ষণ আগে হোয়াইট হাউজ বাতিল করে দিয়েছে। এটি সিংগাপুরে হওয়ার কথা ছিল।বলা যায়, এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে উত্তর কোরিয়ার সাথে নতুন করে আবার উত্তেজনাপূর্ণ রাজনীতি শুরু হতে যাচ্ছে। কেন আচমকা এমন একটি ঘোষণা আসল তা নিয়ে বিশ্লেষক মহলে নানামুখী ব্যাখ্যা তৈরি হচ্ছে। আমি সংক্ষেপে কারণটা বলতে চেষ্টা করছি–এই সামিটকে কেন্দ্র করে দুই দেশের আকাঙ্খা মিলে নাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় উত্তর কোরিয়া তাদের সব নিউক্লিয়ার মিসাইল আমেরিকার হাতে তুলে দিবে, বিনিময়ে উত্তর কোরিয়ার উপরে করা সব নিষেধাজ্ঞা স্যাঙ্কশন তুলে নেয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্র সেই সাথে উত্তর কোরিয়াকে বড় বড় ব্যবসা দিয়ে তাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলতে সাহায্য করবে।অন্যদিকে, উত্তর কোরিয়া চায়– তাদের ওপরের সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে, তাদের সাথে অন্যান্য দেশও বড় বড় ব্যবসা নিয়ে যেন এগোতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়া থেকে তাদের সেনা সরিয়ে নেবে। তারা তাদের প্রধান পরমাণু নিরীক্ষা কেন্দ্র ধ্বংস করে প্রমাণ দেবে যে তারা আর পারমাণবিক মিসাইল পরীক্ষা চালাবে না। কিন্তু তাই বলে তাদের সব মিসাইল যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে না তারা কথা দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের কথা রাখলে ভবিষ্যতে উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রসহ কোরিয়ান পেনুনসিলার কোন দেশের জন্য হুমকি হবে না। এই দুই তরফের আকাংখার টানা-পোড়েনে অবশেষে দুই দেশের চলমান হুমকি ধামকির অবসান করে যে শান্তির সুবাতাস আশা করা গিয়েছিল তা থেমে গেল।কিন্তু আসন্ন এই সামিটের সম্ভাবনার ওপর প্রথমে পানি ঢেলে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার জন বোল্টন। বোল্টন এক বক্তব্যে বলেন, উত্তর কোরিয়ার ওপর লিবিয়ার মডেল প্রয়োগ করা হবে। এরপর গত মঙ্গলবার ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ফক্স নিউজের এক সাক্ষাৎকারে বলেন কিম জং উনের ক্ষমতার অবসান লিবিয়ার মডেল অনুসারেই হবে। পেন্সকে তার বক্তব্যের জন্য ব্যাখ্যা চাইলে তিনি বলেন লিবিয়া মডেল দিয়ে গাদ্দাফির যেমন মৃত্যু হয়েছিল কিমেরও তাই হবে, আর সেটাই ফ্যাক্ট। পেন্সের এই বক্তব্যের জন্য উত্তর কোরিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি পেন্সকে ডামি বা বেকুব বলে আখ্যা দিয়েছেন।এখন এটা সবার কাছে পরিষ্কার হয়েছে যে, মুলত পেন্সের এই বক্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়ার আসন্ন সামিটের কফিনে শেষ পেরেক।যদিও দুই সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া মিলে ঐ অঞ্চলে বিশাল এক যৌথ এয়ার কম্ব্যাট ড্রিল করে, যা উত্তর কোরিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি রক্ষার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। দুই দেশের মাঝে সকল ধ্বংসাত্বক পদক্ষেপ বন্ধ করার যে ওয়াদা দেয়া হয়েছিল তা ভঙ্গ করে উত্তর কোরিয়াকে উস্কানিমূলক হুমকি দেয়ার জন্য উত্তর কোরিয়া এখন যুক্তরাষ্ট্র আর দক্ষিণ কোরিয়াকে দোষারোপ করছে। মুলত এই জয়েন্ট এক্সারসাইজকে কিম জং পিয়ংইয়ং এর ওপরে হুমকি হিসেবে গণ্য করে, দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে উত্তর কোরিয়ার মিটিং ক্যান্সেল করে দেয়।ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে ২০১৫ সালে ইরানের সাথে করা নিউক্লিয়ার ডিল থেকে এককভাবে বের হয়ে এসে, পুনরায় ইরানের উপর অর্থনৈতিক অবরোধ দিচ্ছে, এবং ইরানের উপর স্মরণকালের কঠোরতম স্যানকশান বসানোর হুমকি দিচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে ট্রাম্পের উপর কিম জনের যতটুকু ভরসা ছিল তাও কর্পূরের মত উড়ে গেছে।আসল কথা কোন পরিপক্ক সরকার, হোক না সে একজন স্বৈরাচারী আর একনায়ক, ট্রাম্প সরকারের সাথে এমন কোন চুক্তি করবে না যা দিয়ে তার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার ভিত নড়বড়ে হয়ে যাবে। আজ এই সামিট বাতিল করার পর ট্রাম্প বলেছে, ‘I pray to God US will never have to use nuclear capabilities.’ আমার মতে, মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এটা একটা ভাল সংবাদ। না ভুল শুনেন নাই, আমি বলছি দিস ইজ গুড নিউজ ফর মিডল ইষ্ট। এবং গুড নিউজ ফর রাশিয়া এন্ড চায়না, হোয়াইল ব্যাড নিউজ ফর আমেরিকা, সাউথ এন্ড নর্থ কোরিয়া ও জাপান।আর যারা ট্রাম্পকে একেবারে নোবেল শান্তি পুরষ্কার দেয়ার দিবা স্বপ্ন দেখে খুশিতে টগবগ করছিল, আজ তাদের সবার মন খারাপ। মন খারাপ হওয়াই স্বাভাবিক। 

Source

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!