প্রাচীন মিসরবাসী মনে করত, হৃদপিণ্ডই হচ্ছে চিন্তাশক্তির কেন্দ্র আর মস্তিষ্কের কাজ হচ্ছে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখা। রোমানদের মধ্যে বদ্ধমূল বিশ্বাস ছিল, খারাপ বা অসুস্থ ইউটেরাস বা জরায়ু হচ্ছে হিস্টিরিয়া রোগের কারণ। যদিও পরবর্তীতে এবং এখন হিস্টিরিয়া মেয়েদের একটি মানসিক রোগ হিসেবে চিহ্নিত। এর সঙ্গে জরায়ুর অসুস্থতার কোনো সম্পর্কই নেই। এরকম অনেক ভুল বিশ্বাস প্রাচীন যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত ছিল। শরীর এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে সেসব ভুল ধারণার কিছু কিছু এখনো চালু আছে, আজকের এই কম্পিউটার যুগেও। সমাজের অনেক জ্ঞানী লোকের মুখেও মাঝে-মধ্যে উচ্চারিত হতে শোনা যায় সেসব ভ্রান্ত তত্ত্ব এবং যুক্তির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা অবৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো। যেমন—আজকাল কোনো কোনো অল্টারনেটিভ মেডিসিনের বিশেষজ্ঞরা এন্টিঅক্সিডেন্টের সাধারণ বিষয়গুলোকে তুলে ধরছে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে। শরীরে উপস্থিত ফ্রি রেডিক্যালগুলোর বিরুদ্ধে এন্টিঅক্সিডেন্টকে দাঁড় করানো হচ্ছে নায়কের ভূমিকায়। আসলে ব্যাপারটা কিন্তু ততটা নয়। সাধারণভাবে বলতে গেলে ফ্রি রেডিক্যাল হচ্ছে এমন একটি অণু, যার রয়েছে একটি বিজোড় ইলেক্ট্রন। এই বিজোড় ইলেক্ট্রনের ফলে এটি অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে। যদিও কোষের মাইট্রোকন্ডিয়ায় শক্তি উৎপন্নের প্রক্রিয়ায় এই ফ্রি রেডিক্যাল বেশ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ ছাড়া হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের ফ্রি রেডিক্যালস শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমের একটি সহায়ক উপাদান হিসেবে স্বীকৃত। কাজেই মাত্রাতিরিক্ত এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের চলমান স্বাভাবিক হিসেবে স্বীকৃত। কাজেই মাত্রাতিরিক্ত এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের চলমান স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। একটি মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষেত্রবিশেষে শরীরের ক্ষতি করে থাকে। অনেক সময় এন্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ভিটামিন-সি এবং বিটা ক্যারোটিন শরীরে ইতিমধ্যে বেড়ে ওঠা ক্যান্সার কোষকে মদদ জোগায় বলেও মন্তব্য করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। ভিটামিন ‘ই’ ছাড়া অন্য কোনো এন্টিঅক্সিডেন্ট উচ্চমাত্রায় শরীরে গ্রহণ করলে বিশেষ কোনো উপকার হয় বলে জানা যায়নি। তারপরও ভিটামিন ই-এর কার্যকারিতার ক্ষেত্রে সব সময় ‘হতে পারে’ শব্দটি বেশ জোরেশোরে উচ্চারিত হয়ে আসছে। যা ভিটামিন ই-এর গুরুত্বকে কিছুটা ম্লান করেন রোগের পেছনে জীবাণু নয়, বরং শরীরিক অসমতা অথবা নেগেটিভ এনার্জিই দায়ী। ভুলে গেলে চলবে না, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ সারা পৃথিবীতেই আছে। সুতরাং রোগ নিরাময়ের সহজলভ্য আশ্বাসে বিমোহিত বোকা মানুষগুলো ফন্দিবাজ মানুষের ফাঁদে পা দেবে—এটাই তো স্বাভাবিক। একবিংশ শতাব্দীতেও কেউ যদি বিজ্ঞানের সুফল গ্রহণ করতে ব্যর্থ হন কিংবা বিজ্ঞানের আশীর্বাদ থেকে অজ্ঞানতাবশত নিজেকে বঞ্চিত রাখেন তাহলে তার জন্য আমাদের আর কী-ই বা করার আছে! তাই অবহেলা না করে এ সব বিষয়ে আমাদের আরও সচেতন ও সতর্ক হতে হবে।
লেখক : স্বাস্থ্য নিবন্ধকার, নিউইয়র্ক থেকে।
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
@originalworks
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit