প্রিয় অবতারণী,
কিছু জন্ম নিছক কোয়ান্সিডেন্ট।আমারটাও বোধহয় এমন।কেননা, যার জন্মে এই মহাবিশ্বের কোন উপকার হয়না,তার জন্মই বৃথা।অথবা 'বৃথা' শব্দটার চাইতে অপ্রতুল কিছু থাকলে,সেটা।
কিন্তু কিছু জন্ম মানেই ভূবন ডাঙার হাসি।
কিছু জন্ম মানেই আনন্দ জোয়ারে ভাসি।
তোমার জন্মটাও ঠিক তাই।তুমি কারো হাসির একমাত্র কারণ হয়েছো,কখনো গোচরে আবার, কখনোবা অগোচরে।
আমি তেমন ইনিয়ে-বিনিয়ে লিখতে পারিনা।লিখা-লিখি ব্যাপারটা অভ্যাসের। বুঝনা? তাছাড়া আমি একজন নির্বোধ প্রেমিক হতেই চেয়েছিলাম,কখনোই লেখক হওয়ার ইচ্ছাপোষণ করিনাই।
তাই সরাসরি পয়েন্টেই কথা বলি।
"শুভ হোক তোমার পথচলা,
জীবনটা হোক কাদাঁহীন পুরোপুরি পীচডালা।
হাসি ল্যাপটে থাকুক তোমার গালজুড়ে।
পদচারণা হোক তোমার বিশ্বজোড়ে।
প্রিয়জনেরা ঘিরে থাকুক তোমার চতুর্দিক।
আমি নাহয় হারিয়ে গেলাম দিক-বিদিক।"
শুভ জন্মদিন হে আলোকবর্ষী কন্যা।
তোমার ঠোঁটের কোণায় লুকিয়ে থাকা তিলটাই জানে, কতটা আসক্তি আছে সেখানে।
শুধু তুমিই বোধহয় জানোনা।
ইদানীং তিলটাকে বড্ড অসহায় দেখায়।মনে হয় যেন পুষ্টিহীনতায় ভোগছে সে।আবার পরক্ষণেই আবিষ্কার করলাম, একটা নিখাত চুমু দরকার তিলটার।কিন্তু দেবে টা কে?
তিলের মালিকের কি সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিৎ নয়?
আচ্ছা, বেছে থাকার জন্য কি কি লাগে?
আমার কাছে মনে হয়, বেঁচে থাকার জন্য কোন বিশাল সাইজের ডুপ্লেক্স বাড়ি,কোমল সকাল কিংবা শিশির ভেজা রোদ,অলস দুপুর,শেষ বিকেলের ক্লান্ত সূর্যের কিরণ, পাখির কিচিরমিচির, সন্ধ্যার নিঝুম প্রকৃতি, রাতের তারা, জোনাকির ঝিকিমিকি, চাঁদের আলোয় স্মাত হওয়া রাত, শাপলা ফোটা বিল, এত কিছুর প্রয়োজন নেই৷ বেঁচে থাকার জন্য একজোড়া সুন্দর চোখের দৃষ্টিই যথেষ্ট! একজন তামান্নাই যথেষ্ট। যে চোখ আমার চোখের ভাষা বুঝে।
যে চোখে কাজল ল্যাপটে থাকবে,আর আমার সেই দৃশ্য দেখে মরে যেতে ইচ্ছে হবে।
তখনো প্রবল ভাংচুর হবে।
পার্থক্য একটাই, এখন হচ্ছে ভিতরে।
তখন হবে অভ্যন্তরে।
আর হ্যা, অভ্যন্তরে ভাংচুর হলে আমার কোন আপত্তি নেই।
পায়েলটা তোমার শরীরে জড়িয়ে রেখো।দেখবে আমার নিশ্বাসের শব্দ অনুভব করতে পারবে।ঠুং ঠাং শব্দে, আশে-পাশে আমাকে খুঁজবে।
যদি খুব মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য কর,উষ্ণস্বরে কাউকে বলতে শুনবে, "তামান্না, বিশুদ্ধ অক্সিজেন পেতে হলে তোমাকে জড়িয়ে ধরেই নিশ্বাস নিতে হবে।তোমার গা ঘেষে বিষাক্ত বাতাশ আসলেও সেটা নির্মল অক্সিজেনে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।নইলে বরাবরই শ্বাস-প্রশ্বাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড পাই,কিন্তু অক্সিজেন আর পাইনা।"
ইচ্ছে করে, নিশ্বাসে অক্সিজেনের পরিবর্তে তোমাকে নিবো, আর দম আটকে রেখে মরে যাবো।
আমার একটা আজন্মা আফসোস থেকে গেলো।
আমি বোধহয় আর ম্যাচুর্ড হতে পারলাম না।
কেউ একজন লিখেছিলো, "হুট করে কাউকে মনে পড়ার পর চট করে থাকে ভূলে থাকার নাম ম্যাচুরিটি। "
তুমি হুট করেই মনে পড়ো ঠিকই, কিন্তু চট করে আমি আর ভূলে থাকতে পারিনা।ভেতরটা জুড়ে বিচরণ কর।
মনের খুব গভীরে দিবালোকে হাটা-চলা কর।আমি তোমার অস্তিত্ব টের পাই।
আচ্ছা, তুমি কখনো নির্ঘুম রাত কাটিয়েছো?
হয়তো না। নির্ঘুম রাতগুলা বড্ড সু-দীর্ঘ হয়।কোনভাবেই যেন পুরাতে চায়না।
বালিশে এদিক-সেদিক হতে হতে সকাল এসেছে,কিন্তু ঘুম আসেনি।
কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয়নি।সকালে একনিষ্ঠ,দায়িত্ববান ছেলের মত চোখ মুছতে মুছতে ডিউটিতে গিয়েছি। এর নাম হয়তো কারো তুমুল প্রেমে পড়া।
যদি কারো ঘুম কেড়ে নেওয়ার অপরাধে ফাসিঁর বিধান থাকতো তাহলে তুমি কাদের মোল্লার আগেই ফাসিঁতে ঝুলে পড়তে
ইউ এস বাংলা বিমান বিধ্বস্ত হলে খবরের শিরোনাম হয়,কিন্তু মনের ভিতরের নিয়মিত বিধ্বস্ত হওয়া বুঝতে পারার কোন যন্ত্র আজো বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারেনি।
বেশি কিছু চাইনা আমি।শুধু একটু অধিকার চাই।কাছে থাকার অধিকার। তোমাকে স্পর্শ করার অধিকার।প্রচন্ড জ্বরের রাতে তোমার কপালে জলের পট্টি দেওয়ার অধিকার।একটা বালিশ ভাগাভাগি করে থাকার অধিকার, ব্যাস।
প্রতিটা সকাল ঘুমন্ত তোমাকে দেখেই শুরু করতে চাই।তোমার শাষণে শাষিত হতে চাই।
"কাজল মাখা চোখ দুটো একান্ত আমার" কথাটা সিনা টান-টান করে বলতে চাই।
জগতের একটা কঠিন নিয়ম আছে।আর সেটা হলো, মানুষ যার কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায়,তারেই সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গাটায় থাকতে দেয়।যাতে করে ক্ষত গুলা যত্নসহকারে করতে পারে। আচ্ছা, এমন কেন?বলতে পারো?
কবি শামসুর রাহমানের একটা কবিতা খুব মনে পড়ছে আজ।তোমাকে শুনিয়েই দিই নাহয়।
"তুমি হে সুন্দরিতমা নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলতেই পারো,"এই আকাশ আমার"
কিন্তু নীল আকাশ কোন উত্তর দেবেনা।
সন্ধাবেলা ক্যামিলিয়া হাতে নিয়ে বলতে পারো,
" ফুল তুমি আমার।"
তবু ফুল থাকবে নীরব নিজের সৌরভে আছন্ন হয়ে।
জোৎস্না পড়লে তোমার ঘরে,তোমার বলার অধিকার আছে,"এ জোৎস্না আমার"
কিন্তু চাঁদনি থাকবে নিরুত্তর।
মানুষ আমি,আমার চোখে চোখ রেখে যদি বলো, তুমি একান্ত আমার,কি করে থাকবো নির্বাক?
তারায় তারায় রটিয়ে দেবো,
তুমি আমার।
আমি তোমার
জীবনে অনেক উত্তাণ-পতন দেখেছি।
দেখেছি সহস্র প্রত্যাবর্তন।
কিন্ত আজো একটা জিনিষ শিখতে পারলাম না, সেটাই হয়তো আমার সবচেয়ে বড় দূর্ভাগ্য।সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি বলা যায়।
সেটা হইলো তোমার অবহেলাকে অবহেলা করতে পারছিনা।
বলতে পারছিনা, 'তোমাকে দরকার নাই।'
কারণ তোমাকে আমার ভীষণ প্রয়োজন।
যতদিন তুমিহীনতাই ভোগতাম তখন দাতেঁ দাতঁ চেপে সহ্য করে নিতাম।
ইদানীং নতুন রোগে আক্রান্ত হয়েছি।
ভীষণ আমিহীনতায় ভোগছি।
বারবার নিজেকে হারিয়ে ফেলছি।আবার খুঁজে বের করছি।
খুজেঁ বের করার পরই মনে হয় তুমি থাকলে, বোধহয় তুমিই আমাই খুজেঁ বের করতে।
ব্যাপারটা খুবই যন্ত্রণা দিচ্ছে।
আগে ভোগতাম তুমিহীনতায় আর এখন ভোগতেছি আমি হীনতায়।
ইতি
-নীল হিমু