সৌদি আরবে বিপুল সম্পদ এবং অর্থপাচারের অভিযোগ তোলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া উকিল নোটিশের জবাব পাননি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
গত ১৯ ডিসেম্বর বিএনপি প্রধানের আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের পক্ষ থেকে পাঠানো ওই নোটিশে এক মাসের মধ্যে সব জাতীয় দৈনিক ও ইলেকট্রনি মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু এই ধরনের কোনো কাজ করেননি সরকার প্রধান।
নোটিশ পাঠানো আইনজীবী খোকন ঢাকাটাইমসকে জানান, নোটিশের বিপরীতে লিখিত কোনো জবাবও আসেনি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে।
প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো নোটিশে এক মাসের মধ্যে ক্ষমা না চাইলে ক্ষতিপূরণ আদায়ে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী বলেন, ‘মিডিয়াতে দেয়ার পর রেজিস্ট্রি করে এবং কুরিয়ারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে নোটিশ পাঠিয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমি কোনো জবাব পাইনি।’
জবাব তো পেলেন না, এখন কী করবেন-এমন প্রশ্নে আইনজীবী খোকন বলেন, ‘আমরা আরও কিছুদিন অপেক্ষা করব। জবাব না পেলে মক্কেলের সিদ্ধান্ত মত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ ক্ষেত্রে সচরাচর কী করা হয়- এমন প্রশ্নে খোকন বলেন, ‘সাধারণত আইনি নোটিশ পাঠালে এক সপ্তাহ বা ১০ দিনের মধ্যে জবাব দেয়া হয়। কিন্তু এক মাসেও আমরা জবাব পাইনি। আমরাও আরও কিছুদিন অপেক্ষা করব। এর মধ্যে জবাব না পেলে আমার ক্লায়েন্ট যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেই অনুযায়ী কাজ করব।’
কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে এমন প্রশ্নে নোটিশ পাঠানো আইনজীবী বলেন, ‘চাইলে অনেক ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যায়। ক্লায়েন্ট চাইলে ক্রিমিনাল মামলাও করতে পারেন। আমার আইনজীবী হিসেবে তো এখানে ব্যক্তিগতভাবে কিছু করার নেই। ক্লায়েন্ট (খালেদা জিয়া) যেভাবে চাইবেন সেভাবে কাজ করব।’
গত ৭ ডিসেম্বর গণভবনে করা সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার বিরেুদ্ধে সৌদি আরবে বিপুল সম্পদ থাকার অভিযোগ করেন বলেন প্রধানমন্ত্রী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো একটি ভিডিওকে ভিত্তি করে তার এই অভিযোগ তোলার পরদিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
আর ২০ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীকে আইনি নোটিশ পাঠানোর কথা জানান ফখরুল। তিনি জানান, রেজিস্টার্ড ডাকযোগে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঠিকানায় তা পাঠানো হয়।
১৯ ডিসেম্বর পাঠানো নোটিশে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ প্রত্যাহার করে ক্ষমা না চাইলে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী।
প্রধানমন্ত্রী যা বলেছিলেন
একটি বিদেশি টেলিভিশনের সংবাদ হিসেবে ছড়ানো ভিডিওতে বলা হয়, খালেদা জিয়া সৌদি আরবে আল আরাফাহ নামে একটি শপিং মল এবং একটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবনের মালিক। তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর নামে কাতারে আরও একটি বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে। খালেদার পরিবার ১২টি দেশে ১২ বিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় এক লাখ কোটি টাকার মালিক বলে ওই ভিডিওতে বলা হয়েছে।
কম্বোডিয়া সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী খালেদা পরিবারের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ এনে বলেন, ‘মানিলন্ডারিং করে পাঠানো টাকা ফেরত এনেছি (খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর) এবং প্রক্রিয়া চলছে। সম্প্রতি বের হয়েছে সৌদি আরবে এবং এটা খুঁজে বের করে দিয়েছে সৌদি আরব। তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে, কী করছে তারা জানে। তবে অবশ্যই জনগণের টাকা যারা এভাবে বাইরে গিয়ে নিজেদের বিলাসবসনে ব্যবহার করছে; দেশের মানুষকে বঞ্চিত করবে, দেশের মানুষ তাদের বিচার করবে।’
‘আইন অনুযায়ী মানি লন্ডারিং এর বিচার বাংলাদেশে হবে এবং এটা হওয়া উচিতও। কারণ এভাবে দেশের উন্নয়ন না করে, দেশের মানুষকে বঞ্চিত করে, দেশের মানুষকে কষ্ট দিয়ে বাইরে এভাবে সম্পত্তি বানানোর কী অধিকার আছে, এটা আমাদেরও প্রশ্ন। অবশ্যই এর বিচার হবে, এতে কোনো সন্দেহ নাই্।’
আইনি নোটিশে যা ছিল
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে পাঠানো নোটিশে বলা হয়, খালেদা জিয়া একং তার ছেলেদের সম্পর্কে শেখ হাসিনা যে অভিযোগ এনেছেন তাকে সাজানো, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিদ্বেষমূলক।
নোটিশে বলা হয়, খালেদা জিয়ার সুনাম বিনষ্ট করার হীন উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে এসব অভিযোগ এনেছেন শেখ হাসিনা। এই অভিযোগ খালেদা জিয়ার প্রতি অবমাননা ও ঘৃণার সৃষ্টি এবং তাকে হাস্যকর করার জন্য করা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, ‘আপনার এই বেপরোয়া ও বিদ্বেষপূর্ণ কটূক্তি একাধারে পরনিন্দা, অপবাদপূর্ণ ও মানহানিকর, যা বেগম খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ সুনাম সম্মান সততা এবং মর্যাদাকে বিনষ্ট করার এবং দেশে ও বিদেশে তাকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে খাটো করার হীন উদ্দেশ্য করা হয়েছে। এই মানহানিকর বিবৃতির কারণে অপূরণীয় লোকসান ও ক্ষতি হয়েছে যার জন্য আইনত আপনি দায়ী।’
নোটিসে এই চিঠি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে সব জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতায়, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন সংবাদপত্র এবং সামাজিক মাধ্যমে আউটলেটে যথাযথভাবে প্রকাশ ও প্রচার করার আহ্বান জানানো হয়।
নোটিশের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী যা বলেন
খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে আইনি নোটিশ পাঠানোর দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় পর গত ৬ জানুয়ারি গণভবনে এক অনুষ্ঠানে এ নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিদেশি গণমাধ্যমের খবর তুলে ধরেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সে খবর যেখান থেকে এসেছে সেখানে উকিল নোটিশ পাঠাক, আমাকে কেন?’
‘তার (খালেদা জিয়া) গোটা পরিবারের সম্পদের হিসাব বের করে আন্তর্জাতিক মিডিয়া। আর এটা বললাম কেন এজন্য আমাকে নোটিশ দেয়। এ রকম নোটিশ বহু দেখেছি, সময়মত জবাব দেবো।’
‘যদি সৎ সাহস থাকে আর সত্যি কোন অপরাধ না করে থাকেন তাহলে যেসব মিডিয়া খবর দিয়েছে তাদের নোটিশ দিন। তাদের প্রতিবাদ জানান। তাহলে বুঝব সততার একটা শক্তি আছে। কিন্তু সেটাও পারেননি।’
ঢাকাটাইমস/২১জানুয়ারি/বিইউ/ডব্লিউবি)
Really it's wrong
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit