সাদা সোনাখ্যাত মধুপুরের রাবারে চলতি বছরে প্রায় ৩ গুন ফলন বেশি হয়েছে। উপজেলার পীরগাছা রাবার বাগানের বৃদ্ধ গাছে যে পরিমাণ রাবার কষ আসার কথা,অনুক‚ল আবহাওয়া ও ভালো পরিচর্যার কারণে এবার প্রায় ৩ গুন বেশি ফলন হয়েছে বলে জানান ব্যবস্থাপক তোফায়েল মিয়া।
বাংলাদেশ বন উন্নয়ন কর্পোরেশনের অধীনে টাঙ্গাইলের মধুপুরে উপজেলার পীরগাছায় ৮৬ সালের ২ ফেব্র“য়ারি প্রায় তিন হাজা একর জমিতে রাবার বাগান গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে ১০ হাজার ২৩ বিঘা জমিতে রাবার বাগান রয়েছে। বিগত ৫ বছরের মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এই বাগানে লক্ষমাত্রার চেয়ে প্রায় ১শ মেট্রিক টন বেশি উৎপাদন হয়েছে। ২০১১-১২ অর্থ বছরে লক্ষমাত্রা ছিল ১ হাজার মেট্রিক টন,উৎপাদন হয়েছিল ৭শ’ ৪৭ মেট্রিক টন,২০১২-১৩ অর্থ বছরে লক্ষমাত্রা ছিল ১ হাজার ১শ’ ৫০ মেট্রিক টন,উৎপাদন হয়েছিল ৬ শ’ ৭০ মেট্রিক টন,২০১৩-১৪ অর্থ বছরে লক্ষমাত্রা ছিল ৮শ ৫২ মেট্রিক টন,উৎপাদন হয়েছিল ৫শ ৬০ মেট্রিক টন,২০১৪-১৫ অর্থ বছরে লক্ষমাত্রা ছিল ৬ শ’ ৮০ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছিল ৬ শ’ মেট্রিক টন,২০১৫-১৬ অর্থ বছরে লক্ষমাত্রা ছিল ৭ শ’ ১৫ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছিল ৭ শ’ ৬৫ মেট্রিক টন এবং ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে লক্ষমাত্রা ছিল ৭ শ’ ৫০ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছির ৮ শ ৮৬ মেট্রিক টন। রাবার চাষ লাভজনক হলেও সেখানে চলছে হরিলুট। হরিলুট বন্ধ করা সম্ভব হলে এই লাভজনক সাদা সোনার (রাবার) সম্পদ দিয়ে জাতীয় বাজেটের মোটা একটা অংশ পূরণ করা সম্ভব বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট সচেতন মহল।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রতিনিয়তই রাবার চুরি হচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে পরের দিন তার চাকরি চলে যায়। অভিযোগ উঠেছে রাতের আঁধারে কারখানা থেকে রাবার পাচার হয় নিয়মিত। কিন্তু তা দেখলেও কারও কিছু বলার থাকে না। ব্যাপক চাপের মুখে কাজ করে এখানে কর্মরত শ্রমিকরা।
টাঙ্গাইলের মধুপুুর এক সময় এসব এলাকায় ছিল গজারির বন। ধীরে ধীরে বন উজাড় হয়ে যায়। ভূমি দস্যুরা এসব জমির বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। ২ কিলোমিটার প্রস্থ ও প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পীরগাছ রাবার বাগানে উৎপাদনশীল গাছের সংখ্যা ৩০ লাখ ৭০ হাজার ৮২টি। অনুৎপাদনশী গাছের সংখ্যা ২২ হাজার ৩শ’ ৫৫টি। রাবার গাছ রয়েছে। সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান লাভের মুখ না দেখলেও রাবার বাগান ধীরে ধীরে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এ বাগানে প্রায় ৫শ’ ৮৭ জন পিচমিল টেপার নিয়মিত কাজ করে। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারি রয়ছে ৭৫জন। একজন পিচমিল টেপার প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ৩০ কেজি রাবারের কষ কারখানায় জমা দেন। ফেব্র“য়ারি থেকে আগষ্ট পর্যন্ত সময়কে পিক এবং সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়কে অফ পিক সময় ধরা হয়। পিক সময়ে একজন শ্রমিক প্রতি কেজি রাবার কষ সংগ্রহ বাবদ পায় ৩ টাকা আর অফ পিক সময়ে পায় ৬ টাকা কেজি। খুব ভোর থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত তাদের কাজ করতে হয়। প্রতিদিন একজন শ্রমিকের আয় ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এ আয়ে তাদের সংসার চলে না বলে তারা জানান।
শুধু রাবার চুরি নয়,এখন জমি দখলেরও হিড়িক পড়েছে। সম্প্রতি মজিবুব রহমান (মজি) পীরগাছা (জালালপুর) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ের পূর্বপাশে ১৫ থেকে ২০ বিঘা জমি প্রকাশ্যে হালচাষ করে আনারসের চারা লাগানো হচ্ছে। বাগান ব্যবস্থাপকের সাথে আতাত করে জমি দখল করলেও কারও কোন মাথা ব্যথা নেই। এ যেন লুটেরমাল। শুধু এই জমিই নয়,বাগানের ভিতর ও বাহিরে গড়ে উঠেছে আনারস ও কলার অনেক বাগান। ব্যবস্থাপক থেকে শুরু করে ফিল্ড অফিসার পর্যন্ত সবার পকেটেই যাচ্ছে দখল সুযোগের অর্থ। এভাবে চলতে থাকলে জবর-দখলকারিদের দৌরাত্মে বাগানের জমিও নিরাপদ থাকবে না বলে স্থানীয়রা জানান।
এ দিকে প্রতিদিনই চুরি হচ্ছে রাবার। অভিযোগ উঠেছে, এ রাবার চুরির সাথে জড়িত বাগানের ব্যবস্থাপক থেকে শুরু করে পিয়ন পর্যন্ত এ অনিয়মের সাথে জড়িত। রাবার প্রক্রিয়াজাত কারখানার সাবেক কর্মচারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি নিজের চোখে দেখেছি রাতের আধাঁরে ছোট ছোট ট্রাক ভরে এখান থেকে রাবার চুরি হয়। আর এ চুরির সাথে জড়িত বাগান ব্যবস্থাপক সুপারভাইজারসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না। প্রতিবাদ করলে পরের দিন তার চাকরি চলে যায়। বাগানের ব্যবস্থাপক ও সুপারভাইজাররা বেশি টাকার বিনিময়ে যে কোন সময় পিচমিল টেপারের চাকরি বাতিল করে দিয়ে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকায় অন্যের কাছে তার প্লট বিক্রি করে দেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন রাবার বাগান শ্রমিক বলেন, এ বাগানে প্রকাশ্যে চলছে হরিলুট। শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনের পর আমাদের অনেকের চাকরি চলে যায়। কারণ একটাই, শ্রমিকের স্বার্থ ও বাগানের অনিয়ম নিয়ে কথা বলাটাই অপরাধ।টাঙ্গাইলটাইমস
প্রতি বছর শ্রমিকের জন্য উৎসব ভাতা আসে। সে টাকা গুলো কর্মকর্তারা লুটে খায়। এবার আমরা সে টাকা চেয়েছি। ব্যবস্থাপক আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে ৩০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছিল, আমি সে টাকা গ্রহণ করিনি। এ নিয়ে আমার সাথে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। তার কয়েকদিন পর শ্রমিক ইউনিয়নের সবার চাকরি চলে যায়। তিনি বলেন, বাগান কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা ছাড়া এখান থেকে রাবার চুরি হওয়া সম্ভব নয়। প্রতি রাতেই রাবার চুরি হয়। অভিযোগ প্রসঙ্গে পীরগাছা রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক তোফায়েল মিয়া বলেন, বাগান ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকায় কিছু শ্রমিককে বাদ দেয়া হয়েছে। বিশাল বাগানের কোন সীমানা প্রাচীর নেই। নেই পর্যাপ্ত লোকবল। ফলে রাতের বেলা এই বিশাল বাগানের পুরো অংশ পাহারা দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই কোন কোন এলাকা থেকে রাবার চুরি হলেও আমরা তা প্রতিহত করতে পারি না। তিনি বলেন, কারখানা থেকে কোন রাবার চুরি হয় না।
টাঙ্গাইলটাইমস