দুবাই শহরটা অনেক কিছুর জন্যই বিখ্যাত, কিন্তু সবচেয়ে বিখ্যাত সম্ভবত হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং বুর্জ খালিফা। আমি পৃথিবী ঘুরে অনেক উঁচু উঁচু জায়গায় গিয়েছি। আজকে আমি বুর্জ খালিফার একদম উপরে উঠে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো এই বিখ্যাত বিল্ডিংটা কী দেখার মতো কোনো কিছু নাকি।এখন বাজে সকাল ৫:৫০, এবং আমি মাত্র এক ঘণ্টার কম ঘুমিয়ে উঠেছি। কারণ আজকের যে জায়গাটায় যাচ্ছি, যদি সকাল সকাল না যাই তাহলে ভিড়ের জন্য শান্তিতে উপভোগ করতে পারবো না।
আর আমি ঘুমাতে গিয়েছিলাম দুইটা তিনটার দিকে, স্বাভাবিকভাবে যখন যাই। সম্ভবত সাধারণ একটি দিনে দুই তিন ঘন্টা ঘুমিয়ে উঠতে পারতাম, কিন্তু আমার চিন্তায় ঘুম আসছিলো না। যদি ঘুম না ভাঙে সকালবেলা, $৫০ দিয়ে আজকে যেখানে যাচ্ছি, টিকিটটা কিনেছি, টাকাটা পুরো অপচয় হবে। এবং দুবাইয়ে আমার বেশিদিন বাকি নেই, তাই এই জায়গাটায় যেতেই হবে। এক ঘণ্টা আগেও আমি ফোন চেক করেছিলাম শেষবার, তারপর মনে হয় আধা ঘণ্টার মতো চোখ বন্ধ ছিলো বা কিছু একটা। এখন এতো ক্লান্ত লাগছে না সত্যি বলতে। কিন্তু দুই তিন ঘন্টা পর ভালোই ক্লান্ত অবস্থা হবে।
তখন মেট্রোতে না, তখন ট্যাক্সিতে করে সম্ভবত বাসায় আসা লাগবে। এবং আমার মনে আছে প্রথম যখন আসছিলাম এখানে প্রথম দিনের ভিডিওটা বানাচ্ছিলাম, তখন মনে হচ্ছিলো, বাহ! নতুন জায়গা, বিল্ডিং এর রঙ কীরকম... এখন ২০ দিন ধরে আছি, এখন দেখে মনে হচ্ছে নিজেদের বাসায় আছি। প্রত্যেকটা স্টেশনের নাম জানি, কোথায় উঠতে নামতে হবে এটা জানি, অন্তত জনপ্রিয় রুটগুলো। প্রতিটি স্টেশনের নাম সাধারণভাবে জানি না। তো আজকের প্রথম স্পট যেখানে যাচ্ছি, হচ্ছে আইকনিক বুর্জ খালিফা। মানুষ সাধারণত দুবাইতে এসে প্রথম দিনে যায়। আমি ২০ নম্বর দিনে গিয়ে শেষমেশ যাচ্ছি, কিন্তু অন্তত যাচ্ছি।
এবং বুর্জ খালিফাতে বাইরে থেকে ঢোকা যায় না, তাই দুবাই মলের ভিতরে ঢুকতে হয়। মেট্রো থেকে এরকম ১৫ মিনিট এই ব্রিজটার মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতে হবে৷ এবং এই ব্রিজটি বানানোর আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে, গরমকালে যখন ৫০ ডিগ্রি থাকে তখন মানুষ হাঁটতে গিয়ে মরে না যায়। এসির মধ্য দিয়ে পুরো সময়টা থাকতে পারে। তো ১৫ মিনিটের হাঁটার পথ, তারপর গিয়ে খুঁজতে হবে কোন দিক দিয়ে উপরে উঠে। দেখা যাক! আমাদের গন্তব্য আমাদের সামনে, দেখতে পাচ্ছি। একটা অপ্রত্যাশিত বিলম্ব হয়েছে, কারণ আমরা ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করছিলাম, এখানের মানুষের ভালো লাগে নাই।
আমাকে ধরে আমার কিছু ফুটেজ ডিলিট করানো হলো। আশা করি খুব বেশি দেরি হয়নি। এখন বাজে ৬:৪৪, এখনই আমার থাকার কথা ছিলো, কিন্তু দেরি করিয়ে দিয়েছে। আসার সময় চিন্তা একটু বেশিই করছিলাম, কারণ আমি ওখানে দ্বিতীয় মানুষ ছিলাম লাইনে। খোলার আগে গিয়ে পৌঁছেছি। পরে ভিতরে লিফটে ঢুকলাম, লিফটে করে ১০০ তলার বেশি উপরে উঠলাম, এবং তারপর শেষমেষ পৌঁছালাম। সকালে এসে মনে হয় লাভ হয়েছে, পুরা একা একা দেখতে পাচ্ছি জিনিসটা। তো আমরা এখন ১২৪ তলায় আছি, মানে ৪৪০ মিটারের মতো।
এবং এই জায়গাটাকে বলে হচ্ছে At the Top Burj Khalifa, At the Top Sky বলে আরেকটা আছে কিন্তু ওটাতে পরে হচ্ছে এই টিকেট এর তিন গুণ। এটা পরেছে $৫০ বা মানে ৳৬০০০ মতো, ওটা পরে হচ্ছে $১৫০ বা ৳২০০০০ মতো। তো কোনো ভাবেই আমি সুবিচার করতে পারছিলাম না তিন গুণ টাকা খরচ করা ২০ তলা ওঠার জন্য। বুর্জ খালিফা কিন্তু আসলে এটার চেয়ে আরও অনেক উঁচুতে, আমি এখন আছি হচ্ছে ৪৫০ মিটারের কাছাকাছি। উপরে এটা আরও ৮০০ মিটার উঁচু পর্যন্ত গেছে কিন্তু উপরের দিকে মূলত হচ্ছে একটা টাওয়ার। এর উপরে মানে...
মানুষ যেতে পারে না। শেষের অংশগুলোতে মনে হয়, বা অন্তত অবজারভেটোরিটা নেই। বাঙালি ভাইকে পেয়ে গেছি! বুর্জ খালিফার উপরেও, সব জায়গায় বাংলাদেশী। নাম কী আপনার? - আরাফাত, ভাই। আরফাত ভাই? দুবাই শহরের ব্যাপারে একটা মজার জিনিস হলো, যেখানেই যান না কেনো, শহরের যে কোনো কোণায় বা দেশের যে কোনো কোণায় বাঙালী প্রবাসীদের সাথে আপনার দেখা হয়ে যাবেই, কোনো না কোনভাবেই। প্রবাসীদের কথা যেহেতু বলছি, আপনারা যদি দেশের বাইরে থেকে থাকেন এবং বাইরে থেকে দেশে টাকা পাঠানো নিয়ে ঝামেলার সম্মুখীন হচ্ছেন, আমি বলবো একটি অ্যাপ চেক আউট করতে, যেটার নাম হচ্ছে Taptap Send.
একটা জিনিস বলি কনটেক্সটে, এখন আছি হচ্ছে আমরা ৪০০-৪৫০ মিটারের মতো। ‘মার্দি হিমাল’ যে নেপালে গিয়েছিলাম, বা গুয়াতেমালায় আকাটেনাঙ্গো হাইকটা করেছিলাম বা হাওয়াই তে মাউই থেকে ভিডিও বানিয়েছিলাম... ওগুলো সব কয়টা ছিলো হচ্ছে ৪০০০ মিটারের উপরে। তো এটা হচ্ছে ওই উচ্চতার ১০ ভাগের এক ভাগ বলতে পারেন। আমার সত্যি বলতে ওই ধরনের দৃশ্য গুলো আরো ভালো লাগে শহরের দৃশ্য থেকে। কিন্তু তার মানে এটা না যে ওইটা ১০ গুণ ভালো এটার চেয়ে, কারণ এটা খুবই আলাদা। এখান থেকে সরাসরি আপনি নীচে রাস্তায় একদম স্ট্রিট লেবেলে জিরো মিটার দেখতে পাচ্ছেন।
ওখানে পাহাড়ের উপর থেকে সাধারণত আপনি দেখবেন অন্যান্য উঁচু উঁচু পাহাড় বা পাশে কিছু ভ্যালি। কিন্তু একদম এরকম করে চোখের সামনে পায়ের নীচে এত বড় শূন্যস্থান সাধারণত দেখা যায় না। তো খুবই আলাদা! মানে একটা শহরের মধ্যে এটা আরো আকর্ষণপূর্ণ। স্বাভাবিকভাবে মনে হয় এখান থেকে সমুদ্র দেখা যাওয়ার কথা, কিন্তু আজ কুয়াশা বেশি তাই কিছু দেখা যাচ্ছে না এত দূরে। কিন্তু নিচে শেখ জায়েদ রোড, দুবাই এর মধ্যে প্রধান রাস্তা যেটা যায়, ওটাকে একদম স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। খুবই জোস একটা দৃশ্য! ম্যান, আসলেই কিন্তু জোস! আমি ভুলেই গেছি যে আমি সারারাত ঘুমাইনি এখানে আসার পরে।
অন্য পাশে যাচ্ছি কারণ একটা বাচ্চা চিৎকার করছিলো ওইপাশে, মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। কালকে দেরি করে এডিট করেছিলাম, ভাবছিলাম পরে আসবো নাকি। কিন্তু সকালে উঠে খুব ভালো একটা কাজ করেছি। কারণ এখানে লাইটিংটা খুবই সুন্দর, ভিড় সবচেয়ে কম। চমৎকার! তো আমি ২০১৫ সালে আমার পরিবারের সাথে নিউইয়র্কে One World Tower, যেটা World Trade Center এর জায়গায় বানিয়েছে আর কী, ওখানে উঠেছিলাম। এবং ওইটা আসলে এইটার ৮০-৯০% এর মতো উচ্চতায় ছিলো অবজারভেটোরি, কিন্তু ওইটা পুরোপুরি ইন্ডোর ছিলো। ওইটাতে এত মজা লাগছিলো না, এটা আউটডোর বলে এখান থেকে দৃশ্যটা আরো সুন্দর লাগছে।
তো আমি উপলব্ধি করলাম যে উল্টো দিকে সমুদ্র খুঁজছিলাম, এদিকে পিছনে সমুদ্র ঠিকই দেখা যাচ্ছে, যদিও এখানে একটু কুয়াশা ধরণের এখন আছে, একটু ধোঁয়াটে এখানো আছে। আপনারা কখনো ঐ ছবিগুলো দেখছেন নাকি জানি না কিন্তু ৩০ বছর আগে দুবাইয়ের কী চেহারা ছিলো... ১৯৯০ এর দিকে এই জায়গাটা মোটামুটি খালি একটা মাঠের মতো ছিলো, মাঝখান দিয়ে হাইওয়ে। তারপর এত দ্রুত নির্মাণ করে এতগুলো বিল্ডিং বানিয়েছে, এগুলো আগে বলতে গেলে কিছুই ছিল না এখানে। তো এখন ৭:৫৭ বাজে, প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এখানে আছি। এবং এখনো মোটামুটি খালি। হয়তো ভোরবেলা আসা লাগবে না, আপনার সেরা জায়গাটা পাওয়ার জন্য।
হয়তোবা কাজের দিনগুলোতে আসলে সকাল ১০ টা পর্যন্ত খালি থাকবে, শুনেছি অনেকের কাছে। কিন্তু আজকে সোমবার, এটা জরুরি, সাপ্তাহিক ছুটিতে নাকি আরো অনেক ব্যস্ত থাকে। এক ঘন্টা ধরে যেহেতু এখানে আছি, জায়গাটাকে এভালুয়েট করতে পারব এখন। অভিজ্ঞতা থেকে এটা বলবো, ৭/১০ দিবো। কারণ ভালোই! এত উপর থেকে একটা শহরকে দেখা আসলে একটা বিরল অভিজ্ঞতা। কিন্তু এখন চোখে রোদ পরা শুরু হচ্ছে। তাই সময় বুঝে সূর্য বুঝে আসতে হবে আপনাদের। না হলে হয়ত গরমে অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে, পুড়ে শেষ। খরচ অনুযায়ী বা দাম অনুযায়ী এটা বলব আমি ৭/১০ ।
অতো বেশি কিন্তু না দামটা, মানে $৫০ হ্যাঁ, বাংলাদেশি টাকায় ৳৫০০০ চিন্তা করলে বেশি লাগে। কিন্তু দুবাইয়ে আপনি খুবই সহজে এর চেয়ে অনেক বেশি টাকা খরচ করতে পারবেন আরো ফালতু জিনিসের উপরে। তো খারাপ না। এবং এর চেয়ে যদি খুব বেশি কম হতো, এত মানুষ এখানে উঠতো যে আপনি দাঁড়ানোর জায়গা পেতেন না। তাহলে মানুষ প্রত্যেক দিনই আসতো এখানে। তাই দামটা বেশি হওয়ায় এখানে অন্তত জায়গা পাচ্ছেন বা প্রাইভেসিটা পাচ্ছেন যে আপনারা উপভোগ করতে পারছেন জিনিসটা। তো একঘণ্টা পাঁচ মিনিট ধরে এখানে আছি, এখন অন্য কোথাও যাই। উপরে এক তলা যাওয়া যাবে।
উঠি। একটা কফি অর্ডার দিলাম যেটার দাম খুব বেশি পরে নাই। মনে হয় $৫ বা ৳৫০০ মতো পরেছিলো। মাহেশ ভাই কফি বানাচ্ছে আমাদের জন্য। এক ঘণ্টা ঘুমিয়েছি, তাই অনেক দরকার এই কফি। কফিটা খেয়ে দেখলাম, খারাপ লাগলো না। তারপর সিঁড়ি দিয়ে অবশেষে উপরের তলায় উঠে টপ ফ্লোরে গেলাম। তো উপরের লেভেল থেকে মানে শুধু নীচের ডেকটার একটি দৃশ্য দেখবেন। তো মনে হচ্ছে কুয়াশা একটু কমেছে, ওইদিকে সমুদ্রটা একটু ভালো করে দেখা যাচ্ছে। যদিও ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু চোখে আরও ভালো দেখা যাচ্ছে। তো ১২৫ তলায় আপনারা নীচের তলা থেকে যা দেখেছেন, হুবুহু একই জিনিসটা দেখবেন,
শুধু ভিতরে এসি আছে আর একটা কাচের পিছন থেকে দেখবেন। তারপর বের হওয়ার আগে শেষ বারের মতো দেখে নিলাম দৃশ্যটাকে। তারপর আবার সেই লিফটে করে নিচে নামলাম। উপর থেকে এত নীচে জলদি নামলে, আপনার কিন্তু কান বন্ধ হয়ে যায়। বিমান অবতরণের সময় যেমন কান বন্ধ হয়ে যায়, ওইরকম। এই ভিডিওর স্পন্সর Taptap Send কে আরেকবার ধন্যবাদ বলতে চাই৷ এবং আপনাদের যদি দেশে টাকা পাঠানোর দরকার হয় অবশ্যই এই অ্যাপটি চেক আউট করবেন নিচের লিংকটি ফলো করে। ঠিকাছে, তো এই ভিডিওটি এখান থেকেই শেষ করছি। এই ভিডিওটি আসলে আরেকটা বড় ভিডিওর একটা অংশ।
আশা করি পরবর্তী ভিডিওতে দেখা হবে, এই বড় অংশটা থেকে, দুবাই থেকেই।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit