অনেক বেশি বাঙালি মুর্তজা বশীর

in esteem •  6 years ago 

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌। শিক্ষাবিদ, বহুভাষাবিদ, জ্ঞানতাপস, ধর্মাচারী। এসবের বাইরে এই মনীষীর আরেকটি বড় পরিচয়—তিনি বাঙালি। আজ তাঁর ৫০তম মৃত্যুদিন। এ উপলক্ষে তাঁর ছেলে বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর উন্মোচন করেছেন পিতার অজানা অধ্যায়।

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ (১০ জুলাই ১৮৮৫–১৩ জুলাই ১৯৬৯) ড্রইং: মুর্তজা বশীর, ১৯৫৩
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ (১০ জুলাই ১৮৮৫–১৩ জুলাই ১৯৬৯) ড্রইং: মুর্তজা বশীর, ১৯৫৩
বাবা ও আমি
আমার আর্ট ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়ার পেছনে, এটা সত্যি যে, আমার বাবা মুহম্মদশহীদুল্লাহ্‌র আগ্রহ বা অনাগ্রহ কোনোটাই ছিল না। কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশে ওখানে ভর্তি হই আমি। আমার নিজেরও তেমনভাবে ছবি আঁকার ইচ্ছে ছিল না; ছোটবেলা থেকে আমি ছবি আঁকতামও না। স্কুলজীবনে শ্রেণিকক্ষে যে ড্রয়িং হতো, সে ড্রয়িংয়ে প্রায় সময়ই আমি শূন্য পেতাম।

কমিউনিস্ট পার্টি আমাকে বলল, আর্ট ইনস্টিটিউটে ভর্তি হতে হবে, এখানে পার্টিকে সংগঠিত করতে হবে। সে সময় ছাত্র–শিল্পীদের দেখে মনে হতো তারা ভিন্ন জগতের মানুষ। বড় বড় চুল, আধো আধো কথা, পরিষ্কার কথা নয়, কেমন জানি একটা ভাব নিয়ে থাকত। সেখানে কমিউনিস্ট পার্টির সামাজিক অবস্থা, শিক্ষা—এগুলো প্রচার করার জন্য আমাকে আর্ট কলেজে ভর্তি হতে হয়।

১৯৩৯ সালে ছোটবেলায় ঢাকায় নবকুমার ইনস্টিটিউশনে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কাউট হয়েছিলাম। আমি ছিলাম বয়েজ স্কাউট। আমার স্বপ্ন ছিল কিং স্কাউট হব। তখন কিং স্কাউটের ব্যাজটা ছিল এমব্রয়ডারি করা রাজার মুকুট। তখন তো ব্রিটিশ আমল। স্কাউটদের শপথ নিতে হতো ইংল্যান্ডের জাতীয় পতাকা ‘ইউনিয়ন জ্যাক’ নিয়ে। আমি যখন কিং স্কাউটের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি, সে সময় ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে গেল। পাকিস্তানে কিং স্কাউটের নাম পাল্টে হলো ‘কায়েদে আজম স্কাউট’। তখন আমি রাজনীতিতে ঢুকেছি, কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র ফেডারেশনের সদস্য। আমরা বলছি, ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়, সাচ্চা আজাদি লেনা হ্যায়’, ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়, লাখো ইনসান ভুখা হ্যায়।’ যেহেতু পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে আমাকে শপথ নিতে হবে, তাই আমার ছোটবেলার যে স্বপ্ন, সেই কিং স্কাউট হওয়ার জন্য আমি পরীক্ষাই দিলাম না।

ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর বাবাকে প্রথম যখন আমার আর্ট স্কুলে ভর্তি হওয়ার কথা বলি, তিনি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। বলেছিলেন, ‘আমি প্যারিসে ছিলাম, সেখানে আর্টিস্টদের দেখেছি খুব অভাব, অনটনে থাকে। তুমি আমার ছেলে, তুমি অভাব-অনটনে পড়ো, এটা আমি চাই না। অতএব, তুমি আলিগড়ে যাও, বিএ পাস করো, তারপর তুমি ছবি আঁকো।’ কিন্তু যখন তিনি দেখলেন, আর্ট স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য আমি খুব অটল এবং ঢাকাতেই পড়তে চাচ্ছি আমি, তখন বললেন, ‘ঠিক আছে, তুমি শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতীতে পড়ো।’ তিনি রবীন্দ্রভক্ত ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা শেষে তাঁকে কার্যনির্বাহী পর্ষদের সদস্য নিযুক্ত করে পত্র লিখেছিলেন। তবে আমার তো উদ্দেশ্য আর্ট পড়া নয়। আমার উদ্দেশ্য হলো এখানে থেকে আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয় কর্মী হিসেবে যুক্ত থাকা। একই সঙ্গে ময়মনসিংহের সুসং দুর্গাপুরের হাজং অধ্যুষিত এলাকায় কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে সংঘটিত জনযুদ্ধে শরিক হওয়া। সেই সময় পশ্চিবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কাকদ্বীপে ও অন্ধপ্রদেশের তেলেঙ্গানাতে মুক্তির লড়াই শুরু হয়েছে। কিন্তু আমার ভাই কমিউনিস্ট নেতা মুহম্মদ তকীয়ূল্লাহ ভ্রাতৃস্নেহ হেতু চাননি, তাই সেই লড়াইয়ে যুক্ত হতে পারিনি।

তো, ঢাকায়, আর্ট স্কুলে ভর্তির ব্যাপারে আমি যখন খুব নাছোড়বান্দা, বাবা মানে বাবু (আমি তাঁকে বাবু বলে ডাকতাম) আমার সঙ্গে কথা বললেন না দুদিন। আমার বয়স তখন সতেরো। এরপর তিনি যেটা করলেন, তাতে আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম। প্যারিস থেকে তিনি যখন ১৯২৮ সালে ফিরে আসেন, তখন ভারতীয় ছাত্র অ্যাসোসিয়েশন তাঁকে দুই খণ্ড ল্যুভর মিউজিয়ামের ছবির রঙিন রিপ্রোডাকশনের অ্যালবাম উপহার দিয়েছিল। তিনি যদি শিল্পপ্রেমী না হন, তাহলে তারা তাঁকে ওটা কেন দেবে! তাঁকে কলম দিতে পারত। চর্যাপদ নিয়ে গবেষণা করতে গেছেন, সে সম্পর্কে বই দিতে পারত। তারা তো তা দেয়নি। এই অ্যালবামটা তাঁর অন্য মূল্যবান বইপত্রের সঙ্গে ছোট্ট মেহগনি কাঠের আলমারিতে তালা মারা থাকত। একদিন আমার হাতে অ্যালবামটা তুলে দিয়ে তিনি আমাকে বললেন, এত দিন আমার কাছে ছিল, আজ থেকে তোমার। যেখানে অনেক নগ্ন নারীর ছবি আছে, তাঁর অন্যান্য ছেলে, যারা যৌবনপ্রাপ্ত বা বিবাহিত, তাদের কিন্তু তিনি এটা দেননি। কারণ হলো, তিনি এটুকু বুঝেছিলেন, ডিফারেন্স বিটুইন ন্যুড অ্যান্ড ন্যাকেড বা ন্যুড ও ন্যাকেডের ভেতরের পার্থক্য। এতে বোঝা যায়, শিল্পকলার প্রতি শহীদুল্লাহ্‌র একটা ভালোবাসা ছিল।

দ্বিতীয় হলো ইতালিতে আমি কিন্তু বৃত্তি নিয়ে পড়িনি। যখন আমি ইতালি যাই, বাবা আমাকে রেনেসাঁসের পীঠস্থান ফ্লোরেন্সে অ্যাকাডেমিয়া দি বেল্লেআর্তিতে পড়ার পয়সা দিয়েছেন। আমি উনিশ শ ছাপ্পান্ন থেকে আটান্ন সাল পর্যন্ত ফ্লোরেন্সে ছিলাম। ফ্লোরেন্সে থাকাকালীন ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘নাইন পাকিস্তানি আর্টিস্ট’ শিরোনামে একটা প্রদর্শনী হয়েছিল। এই প্রদর্শনীর একজন অংশগ্রহণকারী ছিলাম আমি। পাকিস্তান অবজার্ভার পত্রিকায় যাদের যাদের ছবি প্রশংসিত হয়েছে, সেখানে আমার নাম ছিল। কিন্তু আমার নাম ভুলভাবে মুদ্রিত হয়েছিল। ওখানে আমার নাম লেখা হয়েছিল মুর্তজা রশীদ। এতে বাবা অবজার্ভার পত্রিকার লেটার টু এডিটর–এ রিজয়েন্ডার দেন। সেখানে তিনি লেখেন যে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন তাঁর ছেলের ছবি প্রশংসিত হয়েছে, এই জেনে। তবে তার নাম এখানে মুদ্রণবিভ্রাট হয়েছে। তার নাম মুর্তজা রশীদ নয়, মুর্তজা বশীর। তবে তার আসল নাম এ কে এম বশীরুল্লাহ্‌, অর্থাৎ আবুল খয়ের মুর্তজা বশীরুল্লাহ্‌। আবুল খয়ের মুর্তজা বশীরুল্লাহ্‌—এই নামটা ব্যবহার করার জন্য তিনি আমাকে বারবার অনুপ্রাণিত করতেন, কিন্তু এই নামটাকে আমি বাদ দিয়েছিলাম। কারণ, আমি দেখেছিলাম, আমি সমাজে যা কিছুই অন্যায় করি না কেন, শহীদুল্লাহ্‌র ছেলে বলে আমাকে কেউ কিছু বলে না।

১৯৪৯ সাল। বগুড়ার করোনেশন ইনস্টিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা শেষে ঢাকায় চলে এসেছি আমরা। একদিন বাবার লাইব্রেরিতে দাঁড়িয়ে আছি আমি। এমন সময় ডাকপিয়ন অনেকগুলো চিঠি দিয়ে গেল। আমার বাবা ওগুলো দেখে একটা চিঠি ফেরত দিয়ে বললেন, এই নামে এখানে কেউ থাকে না। তখনই আমি বললাম, দেখি। তারপর দেখে বললাম, এটা আমার চিঠি। বাবু অবাক হয়ে গেলেন, তোমার চিঠি! তুমি মূর্তজা বশীর কবে থেকে হলে! আমি বললাম, আমি আপনার নামে পরিচিত হতে চাই না। আমি আমার নামে পরিচিত হতে চাই। তিনি শুনলেন। চুপ করে থাকলেন। তখন পর্যন্ত আমার নামের বানান ম দীর্ঘ-ঊ কার লিখতাম—মূর্তজা। তিনি তখন বললেন, দেখো, মূর্খের বানান হয় ম দীর্ঘ-ঊ কার। কিন্তু তুমি তো বুদ্ধিমান। তুমি ম হ্রস-উ কার লিখবে—মুর্তজা। তারপর থেকে ম হ্রস-উ কার লিখি। পরবর্তীকালে যখন ১৯৬০ সালে লাহোর থেকে করাচিতে গিয়েছি, বাবা তখন করাচিতে উর্দু ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের প্রধান সম্পাদক। আমি তাঁকে বলেছি, আমার জন্য রং নিয়ে আসবেন। তিনি আমার জন্য রং নিয়ে এসেছেন। ১৯৫০–এ যখন দেশের বাড়ি চব্বিশ পরগনায় গিয়েছেন, তাঁকে চিঠি লিখেছি, আসার সময় কলকাতার চৌরঙ্গিতে জে সি লাহার দোকান থেকে আমার জন্য রং নিয়ে আসবেন। তিনি এনেছেন।

১৯৫৯–তে যখন করাচিতে আমার ছবির প্রদর্শনী করছি, আমার বাবা—বাবু—সেই প্রদর্শনীতে এসেছেন। সেই সময় শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন বগুড়ার হাবিবুর রহমান। প্রদর্শনীটা তিনি উদ্বোধন করেছিলেন। আমেরিকার একটা সংগঠন ‘অ্যামেরিকান ফ্রেন্ড অব দ্য মিডিলইস্ট’। এর পরিচালক ছিলেন স্ট্যানলি ওয়াটসন সাহেব। তিনিও আসতেন প্রদর্শনীতে। তো, সেখানে ককটেল, মদ—এগুলাও পরিবেশন করা হতো। এসবের মধ্যেই বাবু এলেন। চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, শহীদুল্লাহ্‌ প্রদর্শনীতে ঢুকলেন। চারদিকের পেইন্টিংয়ে নারীমূর্তিসহ নানা ছবি। এর মধ্যে একটি স্টিললাইফ ছবি, যেখানে কোনো নারী কিংবা জীবজন্তুর ছবি নেই, এমন এক জায়গায় দাঁড়ালেন তিনি। পাঞ্জাবির পকেট থেকে কাপড়ের জায়নামাজটা বিছিয়ে মাগরিবের নামাজও পড়লেন। এদিকে আমার ততক্ষণে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে গেছে, লোকে ভাববে যে আমি একটা গোঁড়া মুসলমানের ছেলে! আমি তো আধুনিক, ইতালি থেকে সদ্য ফেরত। তিনি যদি ধর্মান্ধ হবেন, তাহলে আমার প্রদর্শনীতে গেলেন কেন!

১৯৬১ সালে বাংলা একাডেমিতে সমকালীন চিত্রকলার এক প্রদর্শনীতে ‘ডেড লিজার্ড’ (মৃত টিকটিকি) শিরোনামে একটা ছবি ছিল আমার। বাসায় এসে সোজা আমার ঘরে ঢুকে বাবা বললেন, ‘তোমার সেই ছবিটা আমি কিছুতেই ভুলতে পারছি না।’ তাঁর কথায় আমার ভেতরটা নড়ে ওঠে। তিনি দরজায় নক না করে কখনো ঘরে ঢুকতেন না। কিন্তু তাঁর এই ব্যতিক্রম দেখে বিস্মিত হই এবং আমার ছবি সম্পর্কে যে কথাটা তিনি বললেন, আমার জন্য তা ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান। আমাকে তিনি বললেন, তুমি আর্টিস্ট, সুন্দর জিনিস আঁকবে। প্যারিসে ল্যুভর মিউজিয়ামে দেখেছি শিল্পকলা কত চমৎকার। সেগুলো সুন্দর। আমার এই প্রদর্শনী উপলক্ষে এক ঘরোয়া আলোচনা অনুষ্ঠান হয়েছিল। বিষয় ছিল ‘আধুনিক চিত্র ও আধুনিক শিল্পী’। পাকিস্তানের আইনজীবী ও বুদ্ধিজীবী এ কে ব্রোহি ছিলেন প্রধান বক্তা। শহীদুল্লাহ্‌কে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ডক্টর সাহেব, আপনার ছেলে তো একজন আধুনিক শিল্পী। জবাবে তিনি হেসে বলেছিলেন, আধুনিক চিত্রের মতোই আমার ছেলে আমার কাছে দুর্বোধ্য।

১৯৬৮ সালে আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের (তদানীন্তন স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান) মূল ব্যাংকিং হলে ‘টাকার ক্রমবিকাশ’ শিরোনামে ৭ ফুট বাই ১০০ ফুট ম্যুরাল চিত্র রচনাকালে যখন হাসপাতালে বাবুকে দেখতে যেতাম, আমার কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইতেন তিনি। সে বছরের জুলাই মাসে আমার মা মরগুবা খাতুন মারা যান। তখন আমি যেন কেমন হয়ে গেলাম, কাজ করতে মন চাইত না। সে সময় সাহস জুগিয়েছেন বাবু। বলেছেন, কাজ করে যেতে হবে তোমাকে। তাঁর এই কথা শুনে পূর্ণোদ্যমে আবার ছবি আঁকা শুরু করি। ডিসেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এই ম্যুরাল চিত্রটা উদ্বোধন করেন।

বাবু আমার জন্য রংটং এনে দেন কেন? আবার পত্রিকায় যদি আমার কথা বেরোয়, তিনি কেন এটা পড়েন? ১৯৬৯ সালে বাবু যখন মৃত্যুশয্যায়, সুফি দর্শনের লেখক ড. এনামুল হককে বললেন, এনাকে চেনেন? মুর্তজা বশীর। হি ইজ আ ফেমাস আর্টিস্ট। আমাকে চিঠিপত্রও লিখেছেন, মুর্তজা বশীর আর্টিস্ট নামে। এই হলেন আমার বাবু। আমার সম্পর্কে, আমার ছবি সম্পর্কে তাঁর মমতা ছিল এমনই।

কিছু ভ্রান্তি বিষয়ে
পবিত্র সরকার শহীদুল্লাহ্‌ প্রসঙ্গে এক আলোচনায় আমার ছবি আঁকার ঘটনাকে ইঙ্গিত দিয়ে দেখিয়েছেন যে যেহেতু তিনি ধর্মনিষ্ঠ মুসলমান ছিলেন, তাই আমার ছবি আঁকাকে সমর্থন করতে পারেননি। আমার সঙ্গে ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে তাঁর দেখা হলে এই প্রসঙ্গের সূত্র এবং উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। ২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি থেকে প্রকাশিত সুনন্দন কুমার সেন রচিত মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ জীবনী গ্রন্থেও এই ভুল ধারণারই প্রতিধ্বনি দেখতে পাই। সেখানে উল্লেখিত হয়েছে তাঁর ধর্মীয় গোঁড়ামির জন্য আমাকে চিত্রশিল্পচর্চায় সম্মতি দিতে পারেননি। তাঁর ধর্মবিশ্বাসকে একধরনের অনড় প্রতিক্রিয়াশীল মানসিকতারূপে চিত্রিত করা হয়েছে, যা শহীদুল্লাহ্‌-চরিত্রে কালিমা লেপন ছাড়া আর কিছু নয়।

তাঁর দুটি বই বিদ্যাপতি শতক ও পদ্মাবতীর প্রচ্ছদ করেছিলাম আমি। ১৯৫৪ সালে তিনি বিদ্যাপতি শতক গ্রন্থটির প্রচ্ছদের কথা বললে আমি তাঁর কাছে জানতে চাই, প্রচ্ছদের জন্য কত দেবেন? শুনে বিস্মিত হন তিনি। বলেন যে, তোমাকে আমি আর্ট পড়ালাম। উত্তরে আমি বলেছিলাম, এটা পিতার কর্তব্য। আপনি সাধারণত প্রচ্ছদের জন্য যা দেন, তার অর্ধেক দেবেন। বাবু কোনো কথা না বলে মানিব্যাগ থেকে পঞ্চাশ টাকা এগিয়ে দিলেন আমার দিকে।

১৯৬৬ সালে ঢাকা জাদুঘরের ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পাকিস্তান জাদুঘর সমিতির সভাপতি মমতাজ হাসানসহ শহীদুল্লাহ্‌কে হিন্দু-বৌদ্ধযুগের ভাস্কর্যের নিদর্শন পর্যবেক্ষণের ছবি দেখতে দেখা যায় (মাহে নও, ১৮ বর্ষ, ৬ষ্ঠ সংখ্যা)। তা ছাড়া মৃত্যুর কয়েক দিন আগে বাবু একজন পেশাদার মডেলের মতো বসে তাঁর ছবি আঁকতে বলেছিলেন আমাকে। তাঁর ছবি এর আগেও এঁকেছি, তবে দূর থেকে তাঁকে না জানিয়ে। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রকারান্তরে শহীদুল্লাহ্‌র অসাম্প্রদায়িক মনোভাবই ফুটে ওঠে।
(আংশিক লেখা)ছবিটি prthom-aloথেকে নেওয়া।
Screenshot image

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

World of Photography
>Visit the website<

You have earned 6.50 XP for sharing your photo!

Daily Stats
Daily photos: 2/2
Daily comments: 0/5
Multiplier: 1.30
Block time: 2018-07-14T11:47:03
Account Level: 0
Total XP: 26.00/100.00
Total Photos: 4
Total comments: 0
Total contest wins: 0
When you reach level 1 you will start receiving up to two daily upvotes

Follow: @photocontests
Join the Discord channel: click!
Play and win SBD: @fairlotto
Daily Steem Statistics: @dailysteemreport
Learn how to program Steem-Python applications: @steempytutorials
Developed and sponsored by: @juliank