যখন মূর্খের মুখোমুখি হবেন....
তর্ক যুদ্ধে, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আরেকজনের সাথে তর্ক, ঝগড়াঝাটি করা । যখন আমরা ঝগড়া করি, তখন মস্তিষ্ক থাকে উত্তপ্ত। ঝগড়া শেষ হবার পরও উত্তেজনার রেশ থেকে যায়। তৈরি হয় (শত্রু তা )।
ঝগড়াঝাটি এতে কেউ জিতে না; বরং এতে করে নিজের ও বিপরীত ২ পক্ষের সম্মান হানি ঘটে / আমাদের চার পাশের মানুদের কাছে / তর্ক যুদ্ধের সর্বোত্তম সমাধান হলো এগুলো এড়িয়ে যাওয়া।
"যে ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়াঝাটি পরিহার করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার।" [সুনানে আবু দাউদ: ৪৮০০]
তারমানে ইচ্ছে করলে আপনি একটা কমেন্ট যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারতেন, যুক্তি দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পারতেন ।
অনেক সময় আমরা এমন টা ভেবে থাকি যে আমি ত ভিল কিছু করি নি বা বলিনি ত আমি কেন চুপ থাকব আমি চুপ থাকলে তা ম্নে নেওয়া ইত্তাদি হবে ভেবে অনেকে তর্ক জরিয়ে পরি ।
মূর্খদের মুখোমুখি হলে কী করতে হবে? কুরআনে আল্লাহ সুন্দর একটা সমাধান দেন।
"রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মূর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে- সালাম।" [সূরা আল-ফুরকান: ২৫:৬৩]
'মূর্খ' কারা? যারা পড়ালেখা জানে না, নিরক্ষর তারা? না, বরং এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরবিদরা বলছেন, "জাহিলূন মানে বিদ্যাহীন ব্যক্তি নয়; বরং যারা মূর্খতার কাজ ও মূর্খতাপ্রসূত কথাবার্তা বলে, যদিও বাস্তবে বিদ্বানও বটে। মূর্খ মানে অশিক্ষিত বা লেখাপড়া না জানা লোক নয় বরং এমন লোক যারা জাহেলী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবার উদ্যোগ নিয়েছে এবং কোনো ভদ্রলোকের সাথে অশালীন ব্যবহার করতে শুরু করেছে।"
আপনি তাদেরকে 'সালাম' দিবেন বলতে কিন্তু এটা বুঝাচ্ছে না, আপনি তাদেরকে বলবেন- "তুমি মূর্খ, তোমাকে সালাম।" এটার মানে হলো, আপনি বরং তাকে এভোয়েড করবেন।
ইমাম আশ-শাফে'ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) ছিলেন খুব সহনশীল একজন ব্যক্তি। ভিন্নমত সহ্য তো করতেনই, এমনকি তাঁকে কেউ গালাগালি করলে সেটাও হজম করে নিতেন।
একবার এক ভরা মজলিশে একজন অপরিচিত লোক জিজ্ঞেস করলো- “আপনি কি শাফে’ঈ?” ইমাম শাফে’ঈ ‘হ্যাঁ’ বললে লোকটি বলে উঠলো- “তুই একজন নিকৃষ্ট পাপী।”
ইমাম শাফে'ঈ চাইলে তাঁর ছাত্রদেরকে বলতে পারতেন, "ওকে ধরো।" কিন্তু না। ইমাম শাফে’ঈ তৎক্ষণাৎ দু’আ করলেন, “ইয়া আল্লাহ! লোকটি যা বললো তা যদি সত্যি হয় তাহলে আমাকে ক্ষমা করুন। আর যা বললো তা যদি মিথ্যে হয় তাহলে মিথ্যে বলার জন্য তাকেও ক্ষমা করুন।”
তাঁর মতো সহনশীল, উদার ব্যক্তিও কিন্তু মূর্খ, নির্বোধদের দ্বারা খুব ডিস্টার্বড ছিলেন। মূর্খদের কথাশুনে নিজেকে সান্ত্বনা দিতেন কবিতা লিখে। তাঁর একটা কবিতার নজীবানুবাদ পড়ে দেখুন, আমরাও কি নিজেদেরকে এভাবে সান্ত্বনা দিতে পারি কি-না।
“নির্বোধ আর অজ্ঞ লোকের কাছ থেকে দূরে থাকো!
দেখবে নিজের কথাই ডুবাবে তাকে, তুমি জেনে রাখো।
ফোরাতের মতো সমুদ্রসম এত বড় এক নদী
কী হবে, একটা দুইটা কুকুর মরে ভেসে যায় যদি?
ফোরাতে কয়টা কুকুর মরে তো নাপাক হয় না পানি
ওদের কতেক কথায় তোমার হবে সম্মানহানী?”