রাত তখন গভীর। শ্যামলপুর গ্রামের ছোট্ট পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিল রফিক। মেঘ ঢাকা আকাশ, গা ছমছমে পরিবেশ। সে ফিরছিল পাশের গ্রাম থেকে, এক বন্ধুর বাড়িতে দাওয়াত খেয়ে।
কিন্তু আজ পথটা কেমন যেন অচেনা লাগছিল। চারপাশ নিস্তব্ধ, গাছের পাতাগুলোও নড়ছে না। এমন সময় হঠাৎ সে দেখতে পেল, রাস্তার পাশে এক বটগাছের নিচে একটা ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে আছে।
রফিক থমকে গেল। সেই ছায়ামূর্তিটা ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে এলো।
"তুই... তুই কি মানুষ?" ভয় কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল রফিক।
ছায়ামূর্তিটা একটু হাসল, বলল—"মানুষ ছিলাম। এখন আর নেই!"
রফিকের শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। সে পেছনে তাকিয়ে দৌড়াতে চাইল, কিন্তু পা যেন জমে গেছে।
"তুমি... তুমি কে?"
"এই রাস্তার পাশেই একসময় একটা পুরনো বাড়ি ছিল, মনে আছে?"
রফিক মনে করার চেষ্টা করল। হ্যাঁ, ছোটবেলায় সে শুনেছিল, এই পথের ধারে এক বিধবার বাড়ি ছিল, যেখানে নাকি একসময় ভয়ংকর এক খুন হয়েছিল।
ছায়ামূর্তিটি এবার সামনে এগিয়ে এল, মুখের চেহারা স্পষ্ট হলো—ফ্যাকাসে, বিধ্বস্ত, গভীর দুঃখের ছাপ!
"আমি সেই বিধবা... আমাকে যারা মেরেছিল, তারা আজও বেঁচে আছে। কিন্তু আমি... আমি এখন কেবল এক ছায়া!"
রফিক আর সহ্য করতে পারল না। সে জোরে চিৎকার দিয়ে দৌড় দিল গ্রামের দিকে। তার মনে হচ্ছিল, ছায়ামূর্তিটা তার পেছনেই আসছে!
পরদিন সকালে গ্রামের লোকজন রাস্তার পাশে রফিককে অজ্ঞান অবস্থায় খুঁজে পেল। জ্ঞান ফেরার পর সে শুধু বলল—"ও এখনো ওখানেই আছে..."
তারপর থেকে কেউ আর রাতের বেলা সেই পথ দিয়ে হাঁটতে সাহস পায় না। কারণ, কেউ কেউ বলে, গভীর রাতে এখনো নাকি সেখানে এক ছায়া দাঁড়িয়ে থাকে...