প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততার জনপ্রিয় পানীয় কফি তৈরি হয় বিনস থেকে। বলা হয়ে থাকে কফি এসেছে ইথিওপিয়া থেকে। যেখানে কফির গাছ সর্বপ্রথম আবিস্কার করা হয়েছিল। তবে পানীয় হিসেবে সর্বপ্রথম ইয়েমেনে কফির প্রচলন শুরু হয়। আমেরিকা, আফ্রিকা, ভারত সহ পুরো বিশ্বের প্রায় ৭০ টির মতো ভিন্ন দেশে কফি চাষ করা হয়ে থাকে।
কফি সম্পর্কে এই তথ্যগুলো না জানা থাকলেও, অনেকেই কফি পান ছাড়া একটি দিনের কথা কল্পনা করতে পারেন না। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথম যে জিনিসটির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় সেটা হলো কফি। এরপর সারাদিনে থেকে থেকেই কফি পান চলতেই থাকে। পানীয় হিসেবে কফি দারুণ। এই উপাদানটির বেশ কিছু ইতিবাচক দিক থাকলেও, বেশ কিছু কারণে কফি পান ক্ষতির কারণ হিসেবে দেখা দিতে পারে। রাতে পড়ালেখার জন্য অথবা অফিসের কাজ শেষ করার জন্য কফি পান করেন অনেকেই। কিন্তু এর ফলেও যে দেখা দিতে পারে মানসিক চাপ সহ নানাবিধ সমস্যা সেটা কি জানেন? তুলে ধরা হলো কফি পানের নেতিবাচক সমস্যা সমূহ।
উচ্চরক্ত চাপ বৃদ্ধি করে
গবেষণা থেকে দেখে গেছে যে, কফি পানের সাথে হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দেওয়া এবং চাপ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। যাদের আগে থেকেই হৃদযন্ত্রের সমস্যা রয়েছে তাদের কফি পান থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। কারণ হৃদযন্ত্রের সমস্যা আগে থেকেই থাকার পরেও, রক্তচাপ বৃদ্ধিতে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবার সম্ভবনা দেখা দিতে পারে।
অ্যাসিডিটির সমস্যা বৃদ্ধি করে
কফিতে রয়েছে অ্যাসিডিক উপাদান। এছাড়াও, কফি পানের ফলে যে প্রশান্তিমূলক অনুভূতি কাজ করে সেটা ক্যাফেইন নামক উপাদান থেকে তৈরি হয়। যা অনেক বেশী আসক্তিপূর্ণ। কফি পানের ফলে অ্যাসিডিটি তৈরি হলে খাদ্য পরিপাক জনিত সমস্যা, বদহজম হওয়া, বুক জ্বালাপোড়া করা সহ হৃদযন্ত্রের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ডায়বেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এই সকল সমস্যা আরো প্রকট হয়ে দেখা দেয়।
আসক্তি তৈরি হওয়া
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, কফিতে থাকে ক্যাফেইন নামন উপাদান প্রশান্তিমূলক অনুভূতি তৈরি করে থাকে। কফি পানের প্রতি আসক্তি তৈরি হলে, কফিতে আসক্ত ব্যক্তির শরীরে স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ও শক্তি সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল হয়ে পরে কফি পানের উপর। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, কফি পানে আসক্ত ব্যক্তি কফি পান করা ছেরে দিলে তার প্রতিক্রিয়া হয় ভয়াবহ। মাদক আসক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে মাদক সেবন করা ছেড়ে দিলে শরীর যেভাবে প্রতিক্রিয়া করে, কফিতে আসক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও একইরূপ ঘটনা ঘটে থাকে।
অতিরিক্ত মূত্রজনিত সমস্যা দেখা দেওয়া
কফি মূত্রবর্ধক উপাদান হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ, অতিরিক্ত কফি পানের ফলে মূত্র বিসর্জনের হার বৃদ্ধি পায়। এই অতিরিক্ত মূত্র বিসর্জনের সমস্যা থেকে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় মিনারেল সমূহ বের হয়ে যায়। যার ফলে শরীরে অনেক কিছুর ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
শরীরের ড্রাগ মেটাবলিজম হ্রাস পাওয়া
কফিতে থাকা উপাদান সমূহ শরীরের স্বাভাবিক ড্রাগ মেটাবলিজম কমিয়ে ফেলে অনেকাংশে। ড্রাগ মেটাবলিজম হলো কোন ধরণের ওষুধ গ্রহণের পরে শরীরে তার কার্যকারিতা তৈরি করা। কফির তীব্রতা সেই মেটাবলিজমের অনেকটাই দূর্বল করে তোলে। থাইরয়েডের সমস্যার জন্য কোন প্রকার ওষুধ গ্রহণ করলে কফি পানকারীর শরীরে অনেক সময় ওষুধ সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, কফির প্রভাবের ফলে।
নিদ্রাহীনতা, মানসিক চাপ ও হতাশা বৃদ্ধি পায়
আপনার যদি আগে থেকেই নিদ্রাহীনতার সমস্যা থাকে তবে কফি পান করা থেকে বিরত থাকা হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, কফি পানের ফলে এই সমস্যা আরো বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। কফিতে থাক ক্যাফেইন নিদ্রাহীনতা তৈরি করা ও বৃদ্ধি করার পাশাপাশি মানসিক চাপ ও হতাশা তৈরি করে থাকে মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা অতিরিক্ত বৃদ্ধি করার মাধ্যমে।
কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যা বৃদ্ধি করে
অনেকের মাঝেই একটি ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেকেই ভেবে থাকেন যে, কফি পানের ফলে কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয় কিংবা কমে যায়। যেটা পুরোপুরিভাবে একটি ভ্রান্ত ও ভুল ধারণা। কিছু সময় কফি পানের ফলে কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যা সাময়িকভাবে কমে। তবে এরপরেই এই সমস্যা পুনরায় ফিরে আসে এবং বৃদ্ধি পায়। কফি অনেক বেশী ডিহাইড্রেশন মূলক উপাদান। যা পানি শূন্যতা তৈরি করে। যার ফলে অতিরিক্ত কফি পানের ফলে দেখা দিয়ে থাকে কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যা। এছাড়া, কফিতে কোন ধরণের দ্রবীভূত আঁশ নেই। যে কারণে যথাসম্ভব কফি পান থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।
সন্তান জন্মদানের সম্ভবনা হ্রাস করে
গবেষণা জানাচ্ছে, কফি পানের ফলে বন্ধ্যাত্ব তৈরি হতে পারে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এই নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয় নারীদের মাঝে। যে সকল নারীরা গর্ভধারণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের কফি পান থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। কারণ, কফি ডিম্বানুর গঠনে বাধাপ্রদান করে থাকে। যা থেকে দেখা দিতে পারে বন্ধ্যাত্ব।
গর্ভপাতের আশঙ্কা তৈরি হয়
কফিতে থাকা ক্যাফেইন এবং তার উদ্দিপক তৈরিমূলক প্রভাবকে গর্ভপাতের জন্য দায়ী করা হয়ে থাকে। যে কারণে, গর্ভবতী নারীদের কফি পানের ক্ষেত্রে সতর্ক করা হয় এবং প্রতিদিন ১-২ কাপ কফি পানের সীমারেখা দিয়ে দেওয়া হয়। অনেকসময় প্রিম্যাচিউর সন্তান জন্ম নেওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে অতিরিক্ত কফি পান ও ক্যাফেইনের প্রভাবের ফলে।
This post has received a 0.18 % upvote from @boomerang thanks to: @sajeeb240896
@boomerang distributes 100% of the SBD and up to 80% of the Curation Rewards to STEEM POWER Delegators. If you want to bid for votes or want to delegate SP please read the @boomerang whitepaper.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit