বাংলা বর্ষবরণ বাংলাদেশের একটি সার্বজনীন উৎসব। নতুন বছরের প্রথম দিন সবাই যার যার সাধ্যমতো উৎযাপনের মাধ্যমে দিনটি পালন করেন। বর্ষবরণ যে কয়টি জিনিস এখন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পান্তা ইলিশ বা ইলিশ মাছ খাওয়া।
‘ঐতিহ্য অন্বেষণ’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার সংস্থা। এর সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক শারমিন রেজওয়ানা পহেলা বৈশাখে ইলিশ যোগ হওয়ার বিষয়টি বিশ্লেষণ করেন।
কোথা থেকে এল পান্তা-ইলিশ?
কালের পরিক্রমণে অনেক সংস্কৃতির গ্রহণ বর্জনে আমাদের মূল সংস্কৃতির কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে অবশ্যই! তবে পান্তা ইলিশ আমাদের আদি আদর্শ বাঙালি খাদ্যাভ্যাসে ছিল এমন রীতি কোথাও পাওয়া যায় না।
ইতিহাসের জন্ম থেকে যে দেশের প্রথম ও প্রধান উৎপন্ন ফসল ধান, সে দেশে প্রধান খাদ্য তাই হবে এটাই স্বাভাবিক! ভাত খাওয়ার এই অভ্যাস ও সংস্কার আদি-অস্ট্রীয় জনগোষ্ঠীর সভ্যতা ও সংস্কৃতির দান! সমাজের উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত সকল স্তরের লোকের প্রাধান খাদ্য ছিল ভাত, হয়ত রান্নার পদ্ধতিতে কিছুটা তারতম্য হত!
চতুর্দশ শতকের শেষ ভাগের একটা বই, প্রাকৃত ভাষার গীতি কবিতার সংকলিত গ্রন্থ ‘প্রাকৃত পৈঙ্গল’য়ে আছে- ‘ওগগারা ভত্তা গাইক ঘিত্তা’। মানে হল, খাঁটি ঘি সহযোগে গরম ভাত!
নৈষধচরিতে ভাতের আরও বিস্তারি বর্ণনা আছে, ‘পরিবেশিত অন্ন হইতে ধুম উঠিতেছে, তাহার প্রতিটি কণা অভগ্ন, একটি হইতে আরেকটি বিচ্ছিন্ন! সে অন্ন সুসিদ্ধ, সুস্বাদু আর শুভ্রবর্ণ, সরু ও সৌরভময়!’
মৎস্যসম্পদ গবেষক অধ্যাপক আবদুল ওয়াহাব জানিয়েছেন, ‘মার্চ-এপ্রিলে ইলিশ থাকে জাটকা অবস্থায়। তাই তা ধরার ওপরে নিষেধাজ্ঞা থাকে। কারণ, জাটকা ইলিশ ধরা হলে এর উৎপাদনও কমবে। এখন যে দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে তা মূলত উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত ছাড়া কেউ কিনতে পারছেন না। ইলিশকে সারাবছর সব শ্রেণির মানুষের কাছে সহজলভ্য করতে চাইলে বৈশাখে ইলিশ খাওয়া বন্ধ করতে হবে।’
বাংলা নববর্ষে পান্তা ইলিশ খাওয়ার প্রচলন আগে একবারেই ছিল না। এর সঙ্গে হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির কোনো সংযোগ নেই। বাংলা নববর্ষ সৌর পঞ্জিকা অনুসারে প্রবর্তিত হয়। এই এলাকায় পান্তা ভাত সব সময়ই কৃষকের কাছে পরিচিত খাবার। এর সঙ্গে বিভিন্ন শাকসবজি ও শুটকি ভর্তা ছিল খাবারের তালিকায়। কিছু এলাকায় কচু শাকের ডাঁটা মিশিয়ে চাঁদা মাছের শুটকির প্রচলন বেশি ছিল বলে জানা যায়।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাংলা নববর্ষ উৎসবের দুটি দিক আছে। প্রথমটি আবহমান বাংলায় ধারাবাহিক ভাবে চলে আসা সামজিক রীতি। অন্যটি ষাটের দশকে পাকিস্তানি শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিক আন্দোলন। রমনা পার্কক ঘিরে শুরু হলেও বর্তমানে যার বিকশিত রূপ সারা বাংলাদেশ এবং বিশ্বে প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট।
নববর্ষে পান্তা ইলিশ খাওয়া প্রসঙ্গে ছায়ানটের সভাপতি ও রবীন্দ্র-গবেষক সন্জীদা খাতুন মন্তব্য করেন, ‘একসময় আমাদের অনুষ্ঠানস্থলের (ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজন) আশপাশে অনেক দোকান বসত। সেখানে পান্তা-ইলিশ খাওয়ানো হতো। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এসব দোকান দিত। দোষটা এসে চাপে আমাদের ঘাড়ে। অথচ গ্রামের হালখাতার নববর্ষ আর রমনার নববর্ষ উদযাপনের মধ্যে পার্থক্য আছে। এটা হচ্ছে বাঙালির নবজাগরণ। যারা বোঝেন না, তারা এ নিয়ে বিদ্রুপ করেন। পত্র-পত্রিকায় উপসম্পাদকীয়ও লেখেন। এসব কথায় কখনও কান দিই নি। নববর্ষ উদযাপনে পান্তা ইলিশ খেতে হবে- এমনটা কখনও দেখি নি, শুনি নি। কারণ গ্রামের মানুষ এ সময় কাঁচা লঙ্কার সঙ্গে কাঁচা পেঁয়াজ দিয়ে অথবা শুকনো মরিচ পুড়িয়ে পান্তা ভাত খায়। সেখানে ইলিশ থাকে না। ইলিশ তো খুব দামি মাছ। এটা গ্রামের মানুষ কোথায় পাবে?’
মানিক বন্দ্যোপাধায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাস ইলিশ ধরা জেলেদের জীবন নিয়ে লেখা হয়েছে। উপন্যাসের চরিত্র কুবের ও অন্যান্য জেলেদের দুঃখ কষ্ট আনন্দ বেদনার বিষয়টি এসেছে সেখানে। ঋতুভিত্তিক সামাজিক অবস্থাও ফুটে উঠেছে উপন্যাসে। কিন্তু পুরো উপন্যাসের কোথাও বৈশাখ মাসে নববর্ষ পালনের জন্য ইলিশের যোগান দেয়ার কথা লেখা হয় নি।
লোক গবেষক শামসুজ্জামান খান মনে করেন, ‘বৈশাখে খরার মাসে যখন কোনো ফসল হতো না তখন কৃষকদের হাতে পয়সাও থাকতো না। সুতরাং তাদের পক্ষে ইলিশ কিনে খাওয়া সম্ভব হতো না। সুতরাং এটা মোটেও সত্যি নয় যে, কৃষকরা নববর্ষ উদযাপনে পান্তা ইলিশ খেয়ে বছর শুরু করতো। গ্রামবাংলায় নববর্ষের উৎসবই ছিল খুব ছোট আকারে। কৃষাণী আগের রাতে একটি নতুন ঘটে কাঁচা আমের ডাল ভিজিয়ে রাখতো, চাল ভিজিয়ে রাখতো। সকালে কৃষক সেই চাল পানি খেত এবং শরীরে কৃষাণী পানিটা ছিটিয়ে দিত। তারপর সে হালচাষ করতে যেত। দুপুরবেলায় পান্তা খেতে পারতো কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ দিয়ে। কখনো কখনো একটু শুটকি, একটু বেগুন ভর্তা ও একটু আলু ভর্তা দিয়ে খেত।’
যতটুকু জানা যায়- আশির দশকে রমনাকে কেন্দ্র করে নববর্ষে কিছু খাবারের দোকান বসে। যারা ছায়ানটের অনুষ্ঠান দেখতে যেতেন তারা সেখানে খেয়ে নিতেন। এমনই একবার অল্প কয়েকজন মিলে পান্তা ভাতের সঙ্গে ইলিশ মাছ ভাজা বিক্রি করলেন এবং তা সব বিক্রি হয়ে গেল। কয়েকজন বেকার তরুণ এই কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাদেরকে উৎসাহিত করতে এবং ‘নতুন একটা কিছু প্রবর্তন’ করার মানসিকতা নিয়ে একটি গ্রুপ এর প্রচারণা চালাতে লাগলেন। যাদের মধ্যে দুই একজন গণমাধ্যমকর্মীও ছিলেন। বিষয়টা আর কয়েকজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে নি। মুনাফালোভী গ্রুপ সক্রিয় হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে বৈশাখের অনেক কিছুই কর্পোরেটদের দখলে চলে যায়।
কর্পোরেট সংস্কৃতি সব কিছুকেই পণ্য বানাতে চায়। সেজন্য তারা উপকরণ খোঁজে। পান্তা ইলিশ হয়ে যায় সেই উপকরণ। বৈশাখী খাবারের ব্র্যান্ডে পরিণত হয় পান্তা ইলিশ। মিডিয়ায় ইলিশের নানাপদের রেসিপি, বিজ্ঞাপন, নাটক, সামাজিক অনুষ্ঠানসহ সবখানে এমন ভাবেই বৈশাখের সঙ্গে ইলিশের সংযোগ ঘটানো হয় যে, মনে হয় পান্তা ইলিশ ছাড়া বৈশাখের কোনো মানে নেই। যার প্রভাব পড়ে আর্থ-সামজিক পরিমণ্ডলে। ইলিশের চাহিদা কেবল বাড়তেই থাকে। এক হালি ইলিশের দাম এক লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। ইলিশ বলতে নির্বিচারে জাটকা নিধন শুরু হয়। দেশে সারা বছর যতো জাটকা ধরা হয় তার অন্তত শতকরা ৬৫ ভাগ মার্চ এপ্রিল মাসে নিধন হয়। তা কেবল এই বৈশাখকে কেন্দ্র করে। এ সময় মা ইলিশের ডিমসহ নিধন কেবল একটি মাছ নয়, লাখ লাখ ভবিষ্যতের ইলিশকেও ধ্বংস করা হয়।
পরবর্তীতে সুধী সমাজ, মিডিয়া বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হন। এ বিষয়ে কবি আসাদ চৌধুরী মন্তব্য করেন, ‘ইলিশ আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। তবে বর্ষবরণে পান্তা-ইলিশ কোনোভাবেই বাঙালি সংস্কৃতির অংশ নয়। এ সময়টা ইলিশ সংরক্ষণের সময়। বৈশাখ উপলক্ষে কিছু লোক পয়সার গরম দেখানোর জন্য চড়া দামে ইলিশ কিনছে, কিছু লোক সুযোগ নিয়ে ব্যবসা করছে; এরা আত্মসম্মানবোধহীন বাঙালি।’
বৈশাখে ইলিশ না খাওয়ার জন্য ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যমও এগিয়ে এসেছে। তারা নিয়মিত প্রতিবেদন, টক শো, টিজার, মানববন্ধনসহ নানা উদ্যোগ নেয়। এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে নববর্ষ পালনে ইলিশ বর্জনের ঘোষণা দেন এবং ধারাবাহিক ভাবে তিনি এই সিদ্ধান্ত বজায় রাখেন।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় ব্যাপক প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে সরকারি বৈশাখী আয়োজনগুলো থেকে ইলিশ বাদ পড়ে। নববর্ষের আগে চাঁদপুরসহ ইলিশের জেলাগুলোতে যে বিরূপ চাপ পড়তো তা অনেকটাই কমে আসে প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণায়।
দেশের একটি বড় অংশ ইলিশ খাওয়া থেকে বিরত হওয়ায় ইলিশের উৎপাদন বেড়ে চলেছে। তার প্রমাণ পাওয়া যচ্ছে ইলিশ প্রধান এলাকাগুলোতে। সম্প্রতি আড়াই কেজি ওজনের একটি ইলিশ মাছ ধরা পড়েছে নাফ নদীতে। ‘ইলিশের উৎপাদন ৯ বছরে ৬৬ শতাংশ’ বেড়েছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গত ৯ বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, গত ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল দুই লাখ ৯৮ হাজার মেট্রিক টন, যা গত ৯ বছরে বেড়ে প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। এর বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা।
তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ সালে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮৪ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ বেশি উৎপাদিত হয়েছে। ২০১৭-১৮ সালে ইলিশের উৎপাদন ৫ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। পাশাপাশি এ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৪২ দশমিক ৭৭ লাখ মেট্রিক টন হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের দেওয়া তথ্য মতে, ২০০২-০৩ অর্থবছরে দেশে উৎপাদিত ইলিশের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। ২০০৮-০৯ অর্থবছর দেশে ইলিশ উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল দুই লাখ ৯৮ হাজার মেট্রিক টনে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে এর পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা চার লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যায়। ২০১৫-১৬ অর্থবছর দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল ৪ লাখ ২৭ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৭ সালের শেষদিকে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ৫ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মা ইলিশ সুরক্ষা ও ডিম ছাড়ার পরিবেশ সৃষ্টি করায় এ সফলতা এসেছে। এ অর্জন ধরে রাখতে হবে।
মৎস্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের প্রায় ৩১ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ভাবে মৎস্যখাতে জড়িত এবং ১১ শতাংশের বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে এর ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আসে শুধু ইলিশ থেকে। দেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান এক দশমিক ১৫ শতাংশের অধিক।
মৎস্য মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, মা ইলিশ রক্ষা ও জাটকা বড় হওয়ার সুযোগ দিতে বছরে দুই বার ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। ২০১১ সালে সংশোধিত আইন অনুযায়ী ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম আশ্বিন মাসের প্রথম চাঁদ উদয় হওয়ার আগে তিন দিন ও চাঁদ উদয় হওয়ার পরের সাত দিন মোট ১১দিন উপকূলীয় এলাকাসহ সারাদেশে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫ দিন।
এ ছাড়া, জাটকা সংরক্ষণে এবং প্রজননের সুযোগ দিয়ে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই দুই মাসও নদীতে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ। এ সময়ে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় নিবন্ধিত জেলেদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। দেশের ১৬টি জেলার প্রায় দুই লাখ ২৪ হাজার ১০২টি জেলে পরিবার এ খাদ্য সহায়তা পায় বলে জানায় মৎস্যসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র।”
তবে শুধু মা ইলিশ বা জাটকা নয়, ইলিশ বাঁচাতে এর ডিম সংরক্ষণও বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “চাঁদপুর থেকে ইলিশের পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে রপ্তানি করা হচ্ছে ইলিশের ডিম। প্রতিদিন অন্তত ৫০০ কেজি করে ইলিশের ডিম প্রক্রিয়াজাত করার পর ছোট ছোট বাক্সে করে পাঠানো হচ্ছে চট্টগ্রামে। সেখান থেকে এসব ইলিশের ডিম ভারত হয়ে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে।
ডিম প্রক্রিয়াজাতকারক ও বিক্রেতা আজাদ হোসেন বলেন, কয়েক বছর ধরে স্থানীয় ও চট্টগ্রামের কিছু ব্যবসায়ী ইলিশের ডিম চাঁদপুর থেকে প্রক্রিয়াজাত করে ট্রেনে করে প্রথমে চট্টগ্রাম নিয়ে বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে দিচ্ছেন। সেখান থেকে এসব ডিম বিদেশে পাঠানো হচ্ছে।
আড়াই কেজি করে ইলিশের ডিম প্রতিটি বাক্সে ভর্তি করার পর বরফজাত করা হয়। পরে ককশিটের ভেতর ঢুকিয়ে চট্টগ্রাম পাঠানো হয়। আর এসব ইলিশ ও ডিম ছাড়ানোর জন্য ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে চুক্তিতে শত শত শ্রমিক দিনরাত কাজ করছেন। লোনা ইলিশ মণ হিসেবে ১২ হাজার টাকায় এবং ইলিশের ডিম কেজি ১ হাজার ২০০ টাকায় পাইকারি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এক মণ ইলিশে প্রায় পাঁচ কেজি ডিম পাওয়া যায়। ডিমওয়ালা নরম ইলিশ ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা পাইকারি দামে বিক্রি হয়। চাঁদপুর মাছঘাটের ইলিশ ব্যবসায়ী আবদুল মালেক খন্দকার বলেন, ইলিশ ও ইলিশের ডিমের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু এ বছর ইলিশ কম থাকায় ইলিশের ডিমও কম। তবে স্থানীয়ভাবে ইলিশের ডিমের চাহিদা কম থাকলেও বিদেশে এর চাহিদা অনেক বেশি। তবে সরকার সরাসরি বিদেশে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ রাখায় চট্টগ্রামে এই ইলিশের ডিম পাঠানো হচ্ছে। সেখানকার ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কৌশলে এসব ডিম বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।’
এভাবে ইলিশের ডিম যদি বিদেশে চলে যেতে থাকে তবে ইলিশের উৎপাদন ব্যাহত হবে চরমভাবে। অবিলম্বে ডিম বিদেশে পাঠানো নিষেধ করা প্রয়োজন। সম্প্রতি মাওয়া ঘাটেসরেজমিনে গিয়ে দেখা গিয়েছে সেখানে ইলিশের ডিম জোরা দুইশ টাকা ভেজে বিক্রি করা হচ্ছে। মা ইলিশ ধরা এবং ডিম বিক্রি করা থেকে সবাইকে বিরত রাখতে হবে।