ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসের আদলে গ্রহণ করা শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যান তথা 'ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০'কে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে দেখছে সরকার। বন্যা, নদী ভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদী কৌশল হিসেবে আলোচিত 'ডেল্টা প্ল্যান-২১০০' ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বরে অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। পানি, জলবায়ু, পরিবেশ ও ভূমির টেকসই ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণসহ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্যে এ পরিকল্পনা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বদ্বীপ
স্রোতের গতিবেগ হ্রাসের ফলে নদী মোহনায় নদী বাহিত কাঁদা, পলি, বালি, কাঁকড়, নুড়ি প্রভৃতি স্তরে স্তরে জমা হয়ে যে ত্রিভুজাকৃতি ভূমিরূপ গঠন করে তাই ব-দ্বীপ।
• গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডেটাস নীল নদের মোহনায় তিনকোণাকৃতির নদীর সঞ্চয়জাত ভূমিকে গ্রিক অক্ষর ডেল্টা এর মত কল্পনা করে একে ডেল্টা নামে অভিহিত করেন। বাংলায় মাত্রাহীন 'ব' এর মত বলে ব-দ্বীপ বলা হয়।
• মোহনায় নদীর স্রোত খুব কমে যায়। একারণে,
- চরজেগে ওঠে মোহনার সম্মুখে। নদীর স্রোত চরের পাশ দিয়ে হালকাভাবে প্রবাহিত হয়। এ কারণে দুই পাশ ক্ষয় হয়ে প্রান্ত সরু হয়। মোহনাতে সমুদ্রস্রোত বা জোয়ার-ভাঁটা প্রবল হলে ব-দ্বীপ তৈরি হয় না।
বাংলাদেশকে বিশ্বের বৃহত্তর ব-দ্বীপ বলার কারণ:
পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র (যমুনা) নদীর মিলিত প্রবাহ পরে মেঘনার সাথে মিলে যে ব-দ্বীপ সৃষ্টি করেছে তাই গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ব-দ্বীপ বা বঙ্গীয় ব-দ্বীপ নামে পরিচিত। আয়তন ৮০,০০০ বর্গকিলোমিটার। যেখানে ভিয়েতনামের মেকিং ব-দ্বীপের আয়তন ৩৯,০০০ বর্গকিলোমিটার এবং নাইজেরিয়ার নাইজার ব-দ্বীপের আয়তন মাত্র ৩৬,০০০ বর্গ কি.মি.। বাংলাদেশ ম্যাপ দিয়ে ব-দ্বীপ চিহ্নিত করে দিলেই হবে।
ডেল্টা প্ল্যান প্রকল্প: ব-দ্বীপ পরিকল্পনাটি হল বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের অধীন General Economic Division (GED) এবং নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তার ফসল।
অফিসিয়াল নাম: “বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ প্রণয়ণ প্রকল্প”
অর্থনৈতিক সহায়তায় : নেদারল্যান্ডস সরকার
কারিগরি সহায়তায়: BanDuDelAs consortium and Bangladesh Policy Research Institute.
অনুমোদন: National Economic Council (NEC) ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ অনুমোদন দেয়।
মূল লক্ষ্য : জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো।
ব্যয়: ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০৩০ সাল নাগাদ)
জিডিপিতে অবদান: জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১.৫% বৃদ্ধির মাধ্যমে ১০% উন্নীত করবে।
ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এর বিশ্লেষণী কাঠামো:
১ম পদক্ষেপ (২০২০-২০৩০): এর অধীনেই থাকবে ৮০টি প্রকল্প এবং ব্যয় হবে প্রায় US $37 Billion.
২য় পদক্ষেপ (২০৩১-২০৫০): প্রথম পদক্ষেপ বাস্তবায়নের পর দ্বিতীয় পদক্ষেপের কাজ শুরু হবে।
৩য় পদক্ষেপ (২০৫১-২১০০): পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় পদক্ষেপের পর তৃতীয় পদক্ষেপের কাজ শুরু হবে। এটি ২১০০ সাল পর্যন্ত চলবে।
সরকারের ডেল্টা প্ল্যানের রূপকল্প, মিশন ও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
রূপকল্প : নিরাপদ, জলবায়ু পরিবর্তনে অভিঘাতসহিষ্ণু সমৃদ্ধশালী ব-দ্বীপ গড়ে তোলা।
মিশন : দৃঢ়, সমন্বিত ও সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনশীল কার্যকরী কৌশল অবলম্বন, এবং পানি ব্যবস্থাপনা ন্যায়সঙ্গত করা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ,
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত এবং অন্যান্য ব-দ্বীপ সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবিলা করে দীর্ঘমেয়াদী পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা,
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।
জাতীয় পর্যায়ের লক্ষ্যগুলো:
১. ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ।
২. ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যদা অর্জন এবং
৩. ২০৪০ সাল নাগাদ একটি সমৃদ্ধ দেশের মর্যদা অর্জন।
'ডেল্টা গ্ল্যান ২১০০'-এর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য হচ্ছে ৬টি। এগুলো হলো:
১. বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিপর্যয় থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
২. পানি ব্যবহারে অধিকতর দক্ষতা ও নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা।
৩. সমন্বিত ও টেকসই নদী অঞ্চল এবং মোহনা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
8.. জলবায়ু এবং বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ এবং সেগুলোর যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৫. অন্তঃ ও আন্তঃদেশীয় পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর প্রতিষ্ঠান ও সুশাসন গড়ে তোলা এবং
৬. ভূমি ও পানিসম্পদের সর্বোত্তম সমন্বিত ব্যবহার নিশ্চিত করা।