'ডেল্টা প্ল্যান -২১০০'

in hive-107931 •  2 years ago 

ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসের আদলে গ্রহণ করা শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যান তথা 'ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০'কে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে দেখছে সরকার। বন্যা, নদী ভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদী কৌশল হিসেবে আলোচিত 'ডেল্টা প্ল্যান-২১০০' ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বরে অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। পানি, জলবায়ু, পরিবেশ ও ভূমির টেকসই ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণসহ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্যে এ পরিকল্পনা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

image.png

বদ্বীপ
স্রোতের গতিবেগ হ্রাসের ফলে নদী মোহনায় নদী বাহিত কাঁদা, পলি, বালি, কাঁকড়, নুড়ি প্রভৃতি স্তরে স্তরে জমা হয়ে যে ত্রিভুজাকৃতি ভূমিরূপ গঠন করে তাই ব-দ্বীপ।

• গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডেটাস নীল নদের মোহনায় তিনকোণাকৃতির নদীর সঞ্চয়জাত ভূমিকে গ্রিক অক্ষর ডেল্টা এর মত কল্পনা করে একে ডেল্টা নামে অভিহিত করেন। বাংলায় মাত্রাহীন 'ব' এর মত বলে ব-দ্বীপ বলা হয়।

• মোহনায় নদীর স্রোত খুব কমে যায়। একারণে,

  • চরজেগে ওঠে মোহনার সম্মুখে। নদীর স্রোত চরের পাশ দিয়ে হালকাভাবে প্রবাহিত হয়। এ কারণে দুই পাশ ক্ষয় হয়ে প্রান্ত সরু হয়। মোহনাতে সমুদ্রস্রোত বা জোয়ার-ভাঁটা প্রবল হলে ব-দ্বীপ তৈরি হয় না।

বাংলাদেশকে বিশ্বের বৃহত্তর ব-দ্বীপ বলার কারণ:

পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র (যমুনা) নদীর মিলিত প্রবাহ পরে মেঘনার সাথে মিলে যে ব-দ্বীপ সৃষ্টি করেছে তাই গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ব-দ্বীপ বা বঙ্গীয় ব-দ্বীপ নামে পরিচিত। আয়তন ৮০,০০০ বর্গকিলোমিটার। যেখানে ভিয়েতনামের মেকিং ব-দ্বীপের আয়তন ৩৯,০০০ বর্গকিলোমিটার এবং নাইজেরিয়ার নাইজার ব-দ্বীপের আয়তন মাত্র ৩৬,০০০ বর্গ কি.মি.। বাংলাদেশ ম্যাপ দিয়ে ব-দ্বীপ চিহ্নিত করে দিলেই হবে।

ডেল্টা প্ল্যান প্রকল্প: ব-দ্বীপ পরিকল্পনাটি হল বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের অধীন General Economic Division (GED) এবং নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তার ফসল।
অফিসিয়াল নাম: “বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ প্রণয়ণ প্রকল্প”
অর্থনৈতিক সহায়তায় : নেদারল্যান্ডস সরকার
কারিগরি সহায়তায়: BanDuDelAs consortium and Bangladesh Policy Research Institute.
অনুমোদন: National Economic Council (NEC) ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ অনুমোদন দেয়।
মূল লক্ষ্য : জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো।
ব্যয়: ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০৩০ সাল নাগাদ)
জিডিপিতে অবদান: জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১.৫% বৃদ্ধির মাধ্যমে ১০% উন্নীত করবে।

ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এর বিশ্লেষণী কাঠামো:
১ম পদক্ষেপ (২০২০-২০৩০): এর অধীনেই থাকবে ৮০টি প্রকল্প এবং ব্যয় হবে প্রায় US $37 Billion.
২য় পদক্ষেপ (২০৩১-২০৫০): প্রথম পদক্ষেপ বাস্তবায়নের পর দ্বিতীয় পদক্ষেপের কাজ শুরু হবে।
৩য় পদক্ষেপ (২০৫১-২১০০): পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় পদক্ষেপের পর তৃতীয় পদক্ষেপের কাজ শুরু হবে। এটি ২১০০ সাল পর্যন্ত চলবে।

সরকারের ডেল্টা প্ল্যানের রূপকল্প, মিশন ও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
রূপকল্প : নিরাপদ, জলবায়ু পরিবর্তনে অভিঘাতসহিষ্ণু সমৃদ্ধশালী ব-দ্বীপ গড়ে তোলা।
মিশন : দৃঢ়, সমন্বিত ও সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনশীল কার্যকরী কৌশল অবলম্বন, এবং পানি ব্যবস্থাপনা ন্যায়সঙ্গত করা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ,
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত এবং অন্যান্য ব-দ্বীপ সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবিলা করে দীর্ঘমেয়াদী পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা,
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।

জাতীয় পর্যায়ের লক্ষ্যগুলো:
১. ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ।
২. ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যদা অর্জন এবং
৩. ২০৪০ সাল নাগাদ একটি সমৃদ্ধ দেশের মর্যদা অর্জন।
'ডেল্টা গ্ল্যান ২১০০'-এর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য হচ্ছে ৬টি। এগুলো হলো:

১. বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিপর্যয় থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
২. পানি ব্যবহারে অধিকতর দক্ষতা ও নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা।
৩. সমন্বিত ও টেকসই নদী অঞ্চল এবং মোহনা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
8.. জলবায়ু এবং বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ এবং সেগুলোর যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৫. অন্তঃ ও আন্তঃদেশীয় পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর প্রতিষ্ঠান ও সুশাসন গড়ে তোলা এবং
৬. ভূমি ও পানিসম্পদের সর্বোত্তম সমন্বিত ব্যবহার নিশ্চিত করা।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!