ফ্যানের ঘূর্ণিতে বিজ্ঞান : পর্ব ২

in hive-107931 •  2 years ago 

আরাফাত হো সে ন

image.png

চিত্রে: উত্তপ্ত পানি বাষ্পে পরিণত হচ্ছে আচ্ছা, এই উদাহরণটা আগের পানির ঘটনার সাথে তুলনা করো। তাহলে পানির যে অণুগুলো পানি সংলগ্ন বাতাসে চলে গেল সেগুলো যদি কম পরিমাণে আবার পানিতে ফিরে আসে তবে পানি শুকিয়ে যাবে তাই না? আশা করি তোমরা এটা বুঝেছো।

তবে এখানে লক্ষ্যণীয় হচ্ছে এই যে পানির অণুগুলো লাফিয়ে লাফিয়ে পানির বাইরে চলে গেলো এই শক্তি সে কোথা থেকে পেলো? যদি আশপাশে থেকে তাকে এই শক্তি সরবরাহ না করা হয় তাহলে দুটি ঘটনা ঘটতে পারে। ১. হয় সে লাফালাফি বন্ধ করে দিবে অথবা ২. পাত্রের পানির তাপমাত্রা কমিয়ে দিবে। তবে পাত্রের তাপমাত্রা সে চাইলেই কমিয়ে ফেলতে পারেনা। প্রকৃতি তাকে সেই অনুমতি দেয় না। তাই সে লাফালাফি কমিয়ে দিবে। অর্থাৎ আমরা বুঝতে পারছি যে তাকে এই লাফালাফির মাধ্যমে সকল পানিকে বাতাসে উড়িয়ে দিতে চাইলে অবশ্যই আশপাশ থেকে শক্তি সরবরাহ করতে হবে।

চিত্র-৩: উপরের পানিটুকু কোথায় গেলো? আরেকটা বিষয় আমাদের জানা দরকার। এই যে বাতাসে তরলের অণুগুলো লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যাচ্ছে, এতে কী যত ইচ্ছা যেতে পারবে? নাকি এর কোন সীমা আছে? অবশ্যই সীমা আছে। একটা সময় পর আর যতই লাফালাফি করুক না কেন ঐ বাতাস কিন্তু ঠিক যতগুলো অণুতরল থেকে লাফিয়ে বাতাসে যাবে ঠিক ততগুলো অণু আবার ঐ তরলে ফেরত পাঠাবে! সুতরাং তরলকে/পানিকে শুকাতে হলে এর উপরের পানিকে সরিয়ে নতুন বাতাস আনতে হবে। ফলে আবার অনেকগুলো অণু এর মধ্যে নিতে পারবে। অনেক কিছুই জানলাম। এবার আমরা আমাদের মূল আলোচ্য বিষয়ে ফিরে আসি। মানুষের শরীরের যে চামড়া আছে তার প্রকৃতি হলো ‘অর্ধভেদ্য’। মানে, এর শুধু ভিতর থেকে বাইরে কোন কিছু আসতে পারে। তবে বাইরে থেকে কোনো কিছু ভিতরে ঢুকানো অনেক কঠিন। সাধারণত ঢুকে না। তাই আমরা যখন ঘামি তখন আমাদের শরীর তরল/পানি-র পাত্রের মত কাজ করে। আর আমাদের শরীরের আশপাশে যে বাতাস থাকে তা তরল সংলগ্ন বাতাসের মত কাজ করে। এই ঘামের অণুগুলোও ছুটাছুটি করে। এই ছুটাছুটিতে শক্তি যোগাতে আমাদের শরীর থেকে তাপ সরবরাহ করা হয়। তাই আমরা ঘামলে ঠাণ্ডা অনুভব করি। কিন্তু, কতক্ষণ? যতক্ষণ আমাদের আশেপাশের বাতাস আমাদের ঘামের অণুগুলো নিজের মধ্যে বেশি করে নিচ্ছে ঠিক ততক্ষণ। আর ফ্যান এই জায়গাতেই কাজ করে। ফ্যানের বাতাসে ঘামের অণু দ্বারা ভর্তি (সম্পৃক্ত) বাতাস আমাদের চামড়া থেকে দূরে চলে যায় এবং নতুন বাতাস আমাদের চামড়ার সংস্পর্শে আসে। এতে নতুন অনেকগুলো ঘামের অণু বাতাসে মিশতে পারে। আর এই অণুগুলোকে বাতাসে মিশে যেতে যে শক্তি সরবরাহ করতে হয় তা আমাদের শরীরের ভিতর থেকে আসে। আর এতেই আমাদের শরীর থেকে অধিক পরিমাণ তাপ বেরিয়ে যায় আর আমাদের ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। আর এভাবেই ফ্যান আমাদের আরাম-আয়েশ ও প্রয়োজনীয় মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে একটা প্রশ্ন মনে জাগতে পারে যে, আমি তো আগেই বললাম ফ্যান অল্প পরিমাণ তাপ উৎপন্ন করে। তাহলে এই অতিরিক্ত তাপ তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিলে তো আমাদের আরো গরম লাগার কথা। আসলে এতে খুব অল্প পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয়। তাই সেটা অনুভূত হয়না। অনেক সময় জোরে বাতাস বইলে মাথার উপর রৌদ্র থাকলেও স্বস্তিদায়ক লাগে!

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!