কোষবিদ্যা (Cytology): জীবদেহের কোষের গঠন, কার্যাবলি ও বিভাজন সম্পর্কে যাবতীয় আলোচনা এ শাখার বিষয়। বিজ্ঞানী রবার্ট হুক ১৬৬৫ সালে নিজের তৈরি অনুবীক্ষণ যন্ত্রে কর্কের পাতলা ছেদ থেকে প্রথম কোষ আবিষ্কার করেন। ১৮৩৯ সালে বিজ্ঞানী Matthias Jakob Schleiden এবং Theodor Schwann কোষ তত্ত্ব আবিষ্কার করেন। কোষের প্রাণশক্তি বলা হয় মাইটোকন্ড্রিয়াকে। এতে শ্বসন অঙ্গাণু থাকে। মানবদেহে শক্তি উৎপাদনের প্রধান উৎস শ্বসন। শ্বসন প্রক্রিয়ায় শর্করা, আমিষ, চর্বি, জৈব এসিড ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য অক্সিজেন সহযোগে জারিত হয়ে শক্তি ও কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে। কোষের প্রাণকেন্দ্র হলো নিউক্লিয়াস। একে কোষের মস্তিষ্ক, কেন্দ্রিকা ইত্যাদি নামেও অভিহিত করা হয়।
জীব কোষের কেন্দ্রক-এ সুতার মতো আকৃতি বিশিষ্ট উপাদানের নাম ক্রোমোজোম। কোষস্থ নিউক্লিয়াসে অবস্থিত অনুলিপন ক্ষমতা সম্পন্ন, রং ধারণকারী এবং নিউক্লিওপ্রোটিন দ্বারা গঠিত যে সব সূত্রাকৃতির ক্ষুদ্রাঙ্গ বংশগতীয় উপাদান ধারণ ও প্রকরণ করে তাদের ক্রোমোজোম বলে। ১৮৭৫ সালে এডওয়ার্ড স্ট্রাসবুর্গার ক্রোমোজোম আবিষ্কার করলে ১৮৮৮ সালে বিজ্ঞানী ওয়ালডেয়ার এর নামকরণ করেন। প্রকৃত কোষে সুগঠিত ক্রোমোজোম দেখা গেলেও আদি কোষে ক্রোমোজোমের উপাদানগুলো সাইটোপ্লাজমে ছড়িয়ে থাকে, সুগঠিত ক্রোমোজোম থাকে না। মানুষের দেহ কোষে ক্রোমোজোমের সংখ্যা ৪৬টি বা ২৩ জোড়া । এর মধ্যে ২২ জোড়া অটোজোম বা সোমাটিক ক্রোমোজোম। এগুলোর মাধ্যমে বংশগতির সাধারণ বৈশিষ্ট্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়ে থাকে। বাকি ১ জোড়া সেক্স ক্রোমোজোম।
![724px-Animal_cell_structure_fr.svg.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmfEVZdmVosiHt9foTV8t4UXfwgTwoGvXseDQYHCcSTSJ5/724px-Animal_cell_structure_fr.svg.png)
কোষের প্রাণশক্তি বলা হয় মাইটোকন্ড্রিয়াকে। এতে শ্বসন অঙ্গাণু থাকে। কোষের প্রাণকেন্দ্র হলো নিউক্লিয়াস। একে কোষের মস্তিষ্ক, কেন্দ্রিকা ইত্যাদি নামেও অভিহিত করা হয়। কোষমধ্যস্থ আঠালো ও জেলির ন্যায় অর্ধতরল স্বচ্ছ, দানাদার, থকথকে কোলয়েড জাতীয় সজীব পদার্থকে প্রোটোপ্লাজম বলে। এটি কোষের মূল গঠন উপাদান। এতে পানির পরিমাণ ৭০% - ৯০%। একে জীবনের ভৌত ভিত্তি বলা হয়।
প্রাণীদেহের দীর্ঘতম কোষ নিউরন। স্নায়ুতন্ত্রের গঠনমূলক ও কার্যকরী একককে নিউরন বা স্নায়ুকোষ বলে। এই একটি মাত্র মানব মগজে রয়েছে ১,০০০ কোটি স্নায়ুকোষ বা নার্ভ সেল।
মায়ো তন্তু ইংরেজিতে Myofibril পেশী কলার অন্তর্ভুক্ত। মায়োফাইব্রিল হচ্ছে মাংস পেশীর লম্বা রড আকৃতির কোষ। বৃহৎ প্রোটিন চেইন দ্বারা তৈরি হয় এক একটি লম্বা রড কোষ, এদের মায়োসাইট বলে। অনেক মায়োসাইট লম্বায় যুক্ত হয়ে গঠন করে মায়োফাইব্রিল। মাংস পেশী ছাড়াই রগে কঠিন নমনীয় মায়োফাইব্রিল থাকে।
স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যু দিয়ে ফ্লোয়েম ফাইবার গঠিত হয়। এগুলো এক প্রকার দীর্ঘ কোষ যাদের প্রান্তদেশ পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে। এদের বাস্ট ফাইবারও বলে। পাটের আঁশ এক ধরনের বাস্ট ফাইবার। উদ্ভিদ অঙ্গের গৌণবৃদ্ধির সময় এ ফাইবার উৎপন্ন হয়। এসব কোষের প্রাচীরে কূপ দেখা যায়। ফ্লোয়েম টিস্যুর মাধ্যমে পাতায় উৎপাদিত শর্করা ও মূলে শেষিত খাদ্য একই সাথে উপরে ও নিচে পরিবাহিত হয়।