বাংলা ব্যাকরণ পর্বঃ৩

in hive-107931 •  2 years ago 

ঊর্ণনাভ সংস্কৃত শব্দ, অর্থ মাকড়সা। ‘ঊর্ণানাভ যে সূত্র দিয়া জাল প্রস্তুত করে।’ টিকটিকি শব্দটি আলংকারিক অর্থে গোয়েন্দা বোঝায়। আরশোলার প্রতিশব্দ তেলাপোকা। বল্মীক অর্থ উইপোকা।

‘প্রকর্ষ’ বিশেষ্যবাচক শব্দটির সমার্থক শব্দ: উৎকর্ষ, শ্রেষ্ঠত্ব, উন্নতি।শিখণ্ডী শব্দের অর্থ: ময়ূর। এছাড়াও ময়ূরের অন্য সমার্থক শব্দ হলো: শিখী, কলাপী, বহী। কবুতরের সমার্থক শব্দ: পায়রা, কপোত, পারাবত। কোকিলের সমার্থক শব্দ: পিক, পরভৃত। খরগোশের সমার্থক শব্দ: শশক।‘হৃষ্ট-পুষ্ট’ দ্বারা বোঝায় বলিষ্ঠ ও প্রফুল্ল অর্থাৎ মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যযুক্ত।

‘চৌ-হদ্দি’ হলো চৌ + হদ্দি। এখানে ‘চৌ’ অংশটুকু ফারসি এবং ‘হদ্দ’ অংশটুকু আরবি ভাষার শব্দ। ফারসি ‘চৌ’ অর্থ চার এবং ‘হদ্দ’ অর্থ সীমানা। সুতরাং চৌ-হদ্দি শব্দের অর্থ চতুঃসীমা। যেমন- বাড়ি বা জমির চৌহদ্দি।
‘পেরেশান’ শব্দটি ফারসি শব্দ, যার অর্থ উদ্বিগ্ন বা চিন্তিত। ‘তকদির’ শব্দটি আরবি শব্দ, যার অর্থ অদৃষ্ট, নসিব বা ভাগ্য। ‘মুসাফির’ শব্দটি আরবি শব্দ, যার অর্থ বিদেশে ভ্রমণকারী ব্যক্তি। ‘মজলুম’ শব্দটিও আরবি শব্দ, যার অর্থ অত্যাচারিত।
‘এজেন্ট’ (agent) ইংরেজি ভাষা থেকে আগত একটি শব্দ। এটার অর্থ শাসক, ব্যবসায়ী বা অন্য কারো প্রতিনিধি বা উকিল। ‘দাখিল’ শব্দটি এসেছে আরবি ভাষা থেকে যার অর্থ পেশ বা উপস্থাপন করা। ‘আইন’ শব্দটি এসেছে ফারসি ভাষা থেকে, যার অর্থ সরকারি বিধি, বিধান বা কানুন। ‘মুচলেকা’ শব্দটি এসেছে তুর্কি ভাষা থেকে, যার অর্থ শর্তভঙ্গ করলে দণ্ডভোগ করতে হবে- এই মর্মে লিখিত অঙ্গীকারপত্র।


WhatsApp Image 2022-03-24 at 11.01.01 PM.jpeg

অশুদ্ধ বিপরীত শব্দজোড় উত্তম-মধ্যম। এর শুদ্ধরূপ: উত্তম-অধম।সংস্কৃত ঔদ্ধত্য শব্দের অর্থ ধৃষ্টতা,অবিনয়; যার বিপরীত শব্দ বিনয়।আকুঞ্চন শব্দের অর্থ কুঁকড়ানো, সঙ্কোচন। আকুঞ্চন শব্দের বিপরীতার্থক শব্দ প্রসারণ।‘আবির্ভাব’-এর বিপরীত শব্দ ‘তিরোভাব’। অভাব এর বিপরীত শব্দ ‘সচ্ছল’। অনুভাবের বিপরীত শব্দ মহিমাহীন।

তাতা শব্দের অর্থ গরম হওয়া, তপ্ত হওয়া; তাতিয়ে উঠা, ক্রুদ্ধ বা পরাজিত হওয়া। তাতা শব্দের বিপরীত শব্দ: ঠাণ্ডা।ঊষর- এর বিপরীত শব্দ উর্বর। সরল ও উজ্জ্বল-এর বিপরীত শব্দ যথাক্রমে বক্র ও ম্লান।অর্বাচীন শব্দের অর্থ নবীন, আধুনিক, অপ্রবীণ। সুতরাং অর্বাচীন-এর বিপরীত শব্দ প্রাচীন।‘সূর্য’ এর প্রতিশব্দ তপন। সূর্য-এর আরও কয়েকটি প্রতিশব্দ- রবি, আফতাব, সবিতা, অর্ক, ভানু, প্রভাকর, ভাস্কর, আদিত্য, দিনেশ, মিহির। অন্যদিকে সুধাংশু, শশাঙ্ক এবং বিধু হলো চাঁদের সমার্থক শব্দ।

অংশু এর সমার্থক শব্দ রশ্মি। অংশু এর আরও কয়েকটি সমার্থক শব্দ- কর, দীপ্তি, জ্যোতি, কিরণ, রশ্মি, আলোকচ্ছটা, বিভা ইত্যাদি।কোপিত শব্দের অর্থ ক্রুদ্ধ করা হয়েছে এমন, রোষিত, যাকে রাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাকে রাগানো বা চটানো হয়েছে; ক্রোধিত; রোষিত।‘উজবুক’ শব্দের অর্থ বোকা, আহাম্মক।কমল শব্দের সমার্থক শব্দ হলো: পুষ্কর, উৎপল, অরবিন্দ, রাজীব, সরোজ, নলিন ইত্যাদি।
লহর - ঢেউ।

পাহাড়-এর সমার্থক শব্দ মহীধর । পাহাড়-এর আরও কয়েকটি সমার্থক শব্দ – পর্বত, শৈল, অদ্রি, ভূধন, অচল, শৃঙ্গলর, নগ। খগ-এর সমার্থক শব্দ- পাখি, বিহগ, বিহঙ্গ, খেচর, পক্ষী, বিহঙ্গম, শকুন্ত।কুঞ্জর শব্দের প্রতিশব্দ হাতি, করী, দ্বিপ, মাতঙ্গ, বারণ, গজ, দন্তী, দ্বিরদ ইত্যাদি।

যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে কিছুটা বিকৃত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত ও ব্যবহৃত হয়েছে, সেসব শব্দকে অর্ধ-তৎসম শব্দ বলা হয়। যেমন- কেষ্ট, গিন্নি, রাত্তির, মিছা ইত্যাদি অর্ধ-তৎসম শব্দ।গঞ্জ, কুলা, চোঙ্গা, টোপর, ডাব, ডাগর, ঢেঁকি ইত্যাদি দেশি শব্দ। হরতাল গুজরাটি শব্দ, ভবন তৎসম শব্দ, চেয়ার ইংরেজি শব্দ।যেসব শব্দের মূল সংস্কৃত ভাষায় পাওয়া যায়, কিন্তু ভাষার স্বাভাবিক বিবর্তন ধারায় প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে আধুনিক বাংলা ভাষায় স্থান করে নিয়েছে, সেসব শব্দকে বলা হয় তদ্ভব শব্দ। যেমন- কামার, হাত, চামার, চাঁদ ইত্যাদি।
ঢেঁকি, কুলা, ঝাঁটা ইত্যাদি দেশি শব্দ।

‘তালাশ’ তুর্কি ভাষার শব্দ। তুর্কি ভাষার আরও কয়েকটি শব্দ- উজবুক, কাবু, কুর্নিশ, কুলি, ঠাকুর, তক্‌মা, তুর্কি, বাবা, বেগম, লাশ, সওগাত, বাবুর্চি ইত্যাদি।‘বিষ’ শব্দের সমার্থক: কালকূট, গরল, জহর। ‘ময়ূখ’ শব্দটির সমার্থক: কিরণ, আলো, জ্যোতি, রশ্মি।‘পদ্ম’ শব্দের প্রতিশব্দ নলিনী, শতদল, উৎপল, অরবিন্দ, সরসিজ, কমল, রাজীব, পুষ্কর, কোকনদ, কুবলয়। নগ, শম্পা ও ইন্দু অর্থ যথাক্রমে পাহাড়, বিদ্যুৎ ও চাঁদ।
কান্তার - বন।
আস্তর - পলেস্তারা।

মূঢ়তা শব্দের অর্থ মূর্খতা, নিষ্ক্রিয়তা। মূর্খতা ও নিষ্ক্রিয়তা মানুষকে অনভিজ্ঞ করে তোলে। সুতরাং মূঢ়তা দ্বারা অনভিজ্ঞতাকে বুঝানো হয়েছে।‘নালিশ’ ফারসি ভাষার শব্দ। ফারসি ভাষার আরও কয়েকটি শব্দ-খোদা, নামাজ, রোজা, চশমা, আওয়াজ, আমদানি, নমুনা, রপ্তানি, হাঙ্গামা, দফতর ইত্যাদি। যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে সোজাসুজি বাংলায় এসেছে এবং যাদের রূপ অপরিবর্তিত রয়েছে, সেসব শব্দকে বলা হয় তৎসম শব্দ। যেমন: চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, ভবন, ধর্ম, পাত্র, মনুষ্য ইত্যাদি। অপরদিকে ‘চামার’ তদ্ভব শব্দ।

সমাস নিষ্পন্ন যে সকল শব্দ সম্পূর্ণভাবে সমস্যমান পদসমূহের অনুগামী না হয়ে কোনো বিশিষ্ট অর্থ গ্রহণ করে, তাদের যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমন: বহুব্রীহি, উদ্ভিদ, পীতাম্বরপঙ্কজ, রাজপুত, মহাযাত্রা, জলধি ইত্যাদি।

ফরাসি শব্দ: ডিপো, কার্তুজ, কুপন, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি।
ওলন্দাজ শব্দ: ইস্কাপন, টেক্কা, তুরুপ, রুইতন, হরতন ইত্যাদি।
জাপানি শব্দ: রিক্সা, হারিকিরি ইত্যাদি।
ইংরেজি শব্দ: ইউনিভার্সিটি, ইউনিয়ন, কলেজ, টিন, নভেল, নোট, পাউডার, পেন্সিল, স্কুল ইত্যাদি। অপর দিকে ‘চামার’ তদ্ভব শব্দ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!