প্রাদেশিক নির্বাচন এবং ফজলুল হকের মন্ত্রীসভা (১৯৩৭-১৯৪১)
→ অবিভক্ত বাংলার (প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩৭ সালে প্রথম প্রাদেশিক নির্বাচনের ফলাফল- মুসলিম লীগ ৪০টি, কৃষক প্রজা পার্টি ৩৫টি, স্বতন্ত্র মুসলমান ৪১টি এবং স্বতন্ত্র হিন্দু ১৪টি আসন পায়।
→ প্রথম মন্ত্রিসভা: এই নির্বাচনের মাধ্যমে ১৯৩৭ সালে এ. কে. ফজলুল হক অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৩৮ সালে ফ্লাউড কমিশন গঠন করেন। তিনি ঋণ সালিসি বোর্ড গঠন করেন এবং নারী শিক্ষার জন্য ঢাকায় ইডেন কলেজ সম্প্রসারণ করেন।
→ দ্বিতীয় মন্ত্রিসভা: এ. কে. ফজলুল হক ১৯৪১ সালে মুসলিম লীগ ত্যাগ করেন এবং ড. শ্যামাপ্রসাদের সাথে কোয়ালিশন সরকার গঠন করেন। শ্যামা-হক মন্ত্রিসভা'র মুখ্যমন্ত্রী হন এ. কে. ফজলুল হক। ১৯৪৩ সালে এই মন্ত্রিসভার পতন হয়।
খাজা নাজিমউদ্দীনের মন্ত্রিসভা (১৯৪৩)
১৯৪৩ সালে শ্যামা-হক মন্ত্রিসভার পতন ঘটলে খাজা নাজিমউদ্দীনের নেতৃত্বে মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভা গঠন করে।
দ্বিজাতিতত্ত্ব
দীর্ঘ দুইশত বছরের বৃটিশ শাসনের অবসান ঘটাতে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়েছিল দুটি রাষ্ট্র- ভারত ও পাকিস্তান।(১৯৩৯ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বিজাতিতত্ত্ব ঘোষণা করেন। দ্বিজাতিতত্ত্বের মূলকথা ছিল (ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা হিন্দু ও মুসলমান দুটি জাতির পৃথক রাষ্ট্রব্যবস্থা স্থির করবে। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ভারতীয় মুসলমানদের স্বাতন্ত্র্য ও আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের ভিত্তিতে পাকিস্তানের জন্মলাভ হয়। পাকিস্তানের দুটি অংশ একটি পূর্ব পাকিস্তান, অপরটি পশ্চিম পাকিস্তান। লাহোর প্রস্তাবের মধ্যেই স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ নিহিত ছিল।
লাহোর প্রস্তাব
(১৯৪০ সালের ২৩শে মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম কাউন্সিল অধিবেশনে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক কর্তৃক উপস্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়, উপমহাদেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে একটি এবং পূর্বাঞ্চল নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন হবে। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের উপস্থাপিত প্রস্তাবই লাহোর প্রস্তাব। ১৯৪০ সালের ২৪ মার্চ, মুসলিম লীগ কর্তৃক দ্ব্যর্থহীনভাবে লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হয়।
ক. ভারতের উত্তর-পশ্চিম এবং পূর্ব ভূ-ভাগের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোকে নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ গঠন করতে হবে।
খ. এসব স্বাধীন রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট অঙ্গ রাষ্ট্রগুলো স্বায়ত্তশাসিত ও সার্বভৌম হবে।
গ. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর সাথে পরামর্শ করে তাদের সব অধিকার এবং স্বার্থরক্ষার জন্য সংবিধানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে।
ঘ. প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, যোগাযোগ ইত্যাদি বিষয়ে ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট অঙ্গ রাজ্যগুলোর হাতে ন্যস্ত থাকবে।
ক্রিপস মিশন (১৯৪২)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান মিত্র পক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদান করলে জাপানি আক্রমণের বিরুদ্ধে এ দেশিয় সাহায্য সহযোগিতা লাভ করার জন্য তৎকালীন (ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসকে ১৯৪২ সালে এ উপমহাদেশে প্রেরণ করেন। তিনি রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে যে কয়টি প্রস্তাব করেন, তা 'ক্রিপস প্রস্তাব' নামে খ্যাত।
ভারত ছাড় আন্দোলন (১৯৪২)
ভারতের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ক্রিপস মিশন ব্যর্থ হলে ১৯৪২ সালের আগস্ট মাসে (মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ‘ভারত ছাড়’ দাবিতে ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন গুরু হয়।
(১৩৫০ সালের দুর্ভিক্ষ (১৯৪৩)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানিরা বার্মা দখল করলে এখান থেকে বাংলায় চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে বাংলার খাদ্য শস্য ক্রয় করে বাংলার বাহিরে সৈন্যদের রসদ হিসাবে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অসাধু লোভী ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা খাদ্য গুদামজাত করে। এছাড়া অনাবৃষ্টির ফলে বাংলার খাদ্য উৎপাদনও হ্রাস পায়। ফলে ১৯৪৩ সালে বাংলায় এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়। এ দুর্ভিক্ষে আনুমানিক ৩০ লক্ষ লোক প্রাণ হারায়। বাংলা ১৩৫০ সালে সংঘটিত এই দুর্ভিক্ষে ‘পঞ্চাশের মন্বন্তর' নামে পরিচিত।
তেভাগা আন্দোলন (১৯৪৬-১৯৪৭)
মোট উৎপন্ন ফসলের তিনভাগের দুইভাগ পাবে চাষী, একভাগ পাবে জমির মালিক এই দাবি থেকে তেভাগা আন্দোলনের সূত্রপাত। ১৯৪৬-৪৭ সালে দিনাজপুর ও রংপুর জেলায় এই আন্দালন তীব্র আকার ধারণ করেছিল। এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন ইলা মিত্র, হাজী মোহাম্মদ দানেশ প্রমুখ।
মন্ত্রিমিশন (১৯৪৬)
১৯৪৬ সালে ভারতের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক সংকট নিরসনের জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এটলি তাঁর মন্ত্রিসভার তিন সদস্যকে ভারতে প্রেরণ করেন। এই প্রতিনিধি দল ‘মন্ত্রিমিশন' নামে পরিচিত। এ মিশনের সদস্যরা হলেন ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার সদস্য ভারত সচিব লর্ড পেথিক লরেন্স, স্যার স্টাফোর্ড ক্রিপস এবং এ, ভি, আলেকজান্ডার।
কলকাতা দাঙ্গা (১৯৪৬)
১৬ আগস্ট, ১৯৪৬ পাকিস্তান দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে মুসলিম লীগ নেতারা দেশব্যাপী প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস পালনের ডাক দেয়। এর ফলে কলকাতায় সংঘটিত হয় হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। কলকাতা দাঙ্গায় হাজার হাজার নিরীহ মানুষ নিহত হয়। এ দাঙ্গা ক্রমশ বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তার লাভ করে।
১৯৪৬ সালের নির্বাচন ও সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রিসভা (১৯৪৬)
১৯৪৬ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে মুসলিম লীগ জয়লাভ করে। ১৯৪৬ সালের ২৪ এপ্রিল হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। এটি ছিল অবিভক্ত বাংলার শেষ মন্ত্রিসভা। অবিভক্ত বাংলার শেষ গভর্নর ছিলেন স্যার ফ্রেডরিক জন বারোজ।
ভারত বিভাগ
→ লর্ড মাউন্টব্যাটেন বড়লাট হিসেবে শপথ নেন- ২৪ মার্চ, ১৯৪৭ সালে
→ ভারতীয় স্বাধীনতা আইন পাস হয়- ১৮ জুলাই, ১৯৪৭ সালে (ব্রিটিশ পার্লামেন্টে)।
→ ‘ভারতীয় স্বাধীনতা আইন' দ্বারা ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে।
পূর্ববঙ্গ জমিদারি দখল ও প্রজাস্বত্ব আইন (১৯৫০)
পূর্ববঙ্গ জমিদারি দখল ও প্রজাস্বত আইন ১৯৫০ সালে পাস হয়। এ আইনের ফলে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়।