মায়ের মতো মুখ। ☺️

in hive-120823 •  17 days ago  (edited)

নমস্কার বন্ধুরা! আশা করি সবাই ঈশ্বরের কৃপায় ভালো আছেন। আজকে আপনাদের মাঝে আমি এক ভিন্ন ধরনের গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। চলুন আর বেশি দেরি না রে শুরু করা যাক.......

1000006257.jpgSource

দিয়ার হাতের ইলিশ ভাপা খেলে আমার মায়ের কথা খুব মনে পড়ে। দিয়ার রান্নার সাথে আমার মায়ের রান্নার অনেকখানি মিল খুঁজে পাই। মাঝে মাঝে দিয়ার হাতের ইলিশ ভাপা মায়ের রান্নাকেও ছাড়িয়ে যায়। দিয়া আমার বড় বোনের মেয়ে। এবার সেই ইন্টারে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ছে। দিয়ার চেহারার সাথে আমার মায়ের চেহারার অনেকটা মিল আছে। আর দিয়ার স্বভাবও কিছুটা আমার মায়ের মতো।

দিয়াকে দেখে আমার মায়া লাগে, বড় বোন এই নয় বছর ধরে প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। দিয়া তখন অনেক ছোট। প্রথম থেকে দিয়ার বাবা রান্না করতো। রান্না করে রেখে অফিসে চলে যেত। তারপর যখন দিয়া একটু বড় হলো এবং রান্না করতে শিখলো তখন থেকে সে রান্না করতো এবং বাসার সকল কাজ সামলাতো।

1000006258.jpgSource

দিয়া কেবল ইন্টারে পড়ে বয়সই বা কতো? এমন বয়সের মেয়েরা মায়ের হাতে খাবার খায়। এখনো আমার মেজ বোনের মেয়ে রিয়া আমার বোনের হাতে খাবার খায়। দিয়া আর রিয়া দুজনেই সমবয়সী। মেয়েটার এই বয়সে মায়ের যত্ন পাওয়ার কথা,সেই সময় সে নিজেই মায়ের প্রতি যত্নবান এবং যত্ন নিয়ে ঘর সামাল দিচ্ছে। দিয়ার মন খারাপ হোক আমি কখনোই চাই না।

টিউশনের টাকা পেয়ে ভাবলাম আমার দুই ভাগ্নিকে আমি দুটো শাড়ি কিনে দিবো। বাজার থেকে নয়শো টাকা দিয়ে দুটি একই শাড়ি কিনে আনলাম। প্রথমে বড় বোনের মেয়ে রিয়াকে শাড়িটা দিয়ে আসলাম। রিয়া শাড়িটা হাতে নিয়ে বললো,"মামা আমি এসব শাড়ি পরিনা "। আসলে রিয়া ছোট থেকে বিলাসিতার ভেতর দিয়ে বড় হয়েছে। এজন্য সে আমার দেওয়া শাড়িটা কাজের বুয়াকে দিয়ে দিলো। আমি মন খারাপ করে বাসায় ফিরে এলাম।

1000006259.jpgSource

পরের দিন আমি দিয়াদের বাসায় গিয়ে দিয়ার হাতে শাড়িটা তুলে দিলাম। দিয়া শাড়ীটা দেখে খুবই খুশি হলো। শাড়িটি পাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই দিয়া শাড়িটি পড়ে এসে হাজির হলো। এসে বললো,মামা কেমন লাগছে আমাকে। আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। তারপর আমি বললাম, একদম আমার মায়ের মতো লাগছে তোকে। আসলে দিয়া রিয়ার মতোন না। সে সবার থেকে আলাদা।

কিছুদিনের ব্যবধানে বড় বোন সেই অসুখেই মারা যায়। বোনের মৃত্যুর দু'বছর পরে দিয়ার বিয়ে ও হয়ে যায়। দিয়াকে নিয়ে ওর বর সুইজারল্যান্ডে চলে যায়। দিয়া দেশে আসলো সাত বছর পরে। আমি বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে আছি, ওকে বাড়িতে নিয়ে যাব বলে। আমি দেখলাম দিয়া বিমানবন্দর থেকে বের হচ্ছে। দেয়ার পরনে সেই আমার কিনা নয়শো টাকার শাড়িটা।

আমার মনে হলো,একটা গোলাপি রঙের শাড়ি পরে আমার মা হেঁটে আসছে আমার দিকে। আমার চোখে জল চলে আসলো। মনে হলো বহুদিন পরে আমি আমার মাকে দেখছি.......!

"ধন্যবাদ সবাইকে"

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

এই পৃথিবীর বুকে কত মানুষের কত কিছু হয়। সত্যিই খুব দুঃখজনক, এই শীতে কেউ থাকে রাস্তায় আর কেউ থাকে কম্বলের ভিতরে। আপনার পোস্টটি পড়ে জানতে পারলাম আপনার ভাগিনি দিয়া অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে। সত্যিই দাদা দিয়ার গল্পটি পড়ে অনেক কষ্ট পেয়েছি আবার শেষে যখন জানতে পারি। দিয়ার বর, দিয়াকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডে থেকে বাংলাদেশে আসছে। এই কথাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো, মানুষের ভাগ্য কখন যে পরিবর্তন হয় কেউ বলতে পারে না। এত সুন্দর করে দিয়ার জীবনের গল্পটা আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন তার জন্য দাদা ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

দাদা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার লেখাটা সম্পূর্ণ পড়ার জন্য। আসলে দাদা ঠিক বলেছেন মানুষের ভাগ্য যে কখন বলদে যায় আমরা বলতে পারি না। এতো সুন্দর একটা মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।

ভালো থাকবেন। নতুন বছর আপনার ভালো কাটুক।

Loading...

একটা সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা কতটা গভীর। আজকে আপনার গল্পটা পড়ে আমি বুঝতে পারলাম, আসলে আমাদের ফ্যামিলিতে এমন অনেক ধরনের মানুষ রয়েছে একেক জন একেক রকম। যেমন আপনার বড় বোনের মেয়ে একরকম আপনার মেজ বোনের মেয়ে একরকম। যে কিনা দেখতে অনেকটা আপনার মায়ের মত।

কিছু মানুষের মনে অনেক বেশি অহংকার থাকে যেমনটা রিয়ার মধ্যে রয়েছে আর কিছু মানুষের মধ্যে ভালোবাসা থাকে অপরিসীম যেটা দেয়ার মধ্যে রয়েছে সে নয় বছর পরে দীর্ঘ সময় ধরে সুইজারল্যান্ডে থাকার পরেও আবার দেশে ফিরে এসেছে একমাত্র আপনার দেয়া শাড়ি পড়ে।

এখান থেকেই বোঝা যায় আপনার প্রতি তার ভালোবাসা অপরিসীম যদিও এটা গল্পের কথা বলছি আসলে বলতে গিয়ে আপনার কথা মনে পড়ে গেল যাইহোক আপনাকেই ধরে নিলাম ওই জায়গায় তবে তাকে দেখতে আপনার মায়ের মত লাগছে এটা দেখে আপনি আর আপনার কান্না ধরে রাখতে পারলেন না। ধন্যবাদ আপনাকে চমৎকার গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য গল্পের পরবর্তী পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম ভালো থাকবেন।

আপু আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটা মন্তব্য করার জন্য। প্রতিটি সন্তানেরই মায়ের প্রতি একটা গভির ভালোবাসার সম্পর্ক থাকে। এখানে আমার গল্পের মূল চরিত্র তার মাকে হারিয়ে তার বড় বোনের মেয়ের মধ্যে তার মাকে দেখতে পায়। এজন্য সে তার ভাগ্নীকে একটু বেশিই আদর করতো।

ভালো থাকবেন আপু।

খুবই খুবই ভালো লেগেছে আপনার আজকের পোস্টটি পড়ে।।। মায়ের ভালোবাসা কারো মাধ্যমে পাওয়া যায় সেটা আপনার বোনের মেয়ে গল্প পড়লেই বোঝা যায়।। আসলে যারা বিলাসিতা ভাবে জীবন যাপন করে তারা গিফট দেওয়ার মর্ম বুঝতে পারবে না।। দেখুন দিয়া কত সুন্দর শাড়িটা নিয়ে খুশি হয়েছে এবং আপনাকে পরিয়ে দেখিয়েছে আর এদিকে রিয়া সেটা কাজের বুয়াকে দিয়ে দিয়েছে শুনে বেশ খারাপ লাগলো।।

সবচাইতে বেশি আশ্চর্য হলাম এত বছর পরও সেই আপনার দেওয়া শাড়িটা এখনো সে তার পড়না রেখেছে সত্যি অনেক ভালো লেগেছে।।