হারিয়ে গেছে শৈশব, সাথে পাঠশালা ও বর্ণপরিচয় আজ আর কেউ খোঁজে না নকশী কাঁথার মাঠ।

in hive-120823 •  2 years ago 

(পাঠশালা)

প্রিয় পাঠকগণ,
কেমন আছেন সবাই? নিশ্চই আপনাদের সকলের নাকে এখন পুজোর গন্ধ এবং কানে কেবলমাত্র মনমাতানো গানের সুর ভেসে আসছে।

আমার মনটা আজ বিশেষ ভালো নেই, সত্যি বলতে গতকাল অফিস থেকে ফেরার সময় হটাৎ করে শৈশবে ফিরে গেছিলাম এবং দেখলাম এখন কত কিছু পাল্টে গেছে, হারিয়ে গেছে সময়ের সাথে;

শৈশবের মত, পাঠশালা, বর্ণপরিচয় এবং নকশী কাঁথার মাঠ।

টেকনোলজির পাশাপাশি বদলেছে মানুষের পড়াশোনার ধরন, জীবনযাপন এমনকি পুজোর ধরন পর্যন্ত।

আগে হয়তো প্যান্ডেল ছোট ছিল কিন্তু মানুষের একসাথে বসে গল্প করা, পাড়ার সকলের জমায়েত, একসাথে পাড়ার সকলকে নিজের পুজোয় কেনা জামা দেখানো, কোথায় এখন দেখা যায়!

এখন সবটাই অ্যানিমেটেড, কল্পনার জগতে চলে গেছে মহালয়া, যা মনে হচ্ছে তৈরি করছে আধুনিকতার ছোঁয়ার নাম করে।

শুধু কি পুজো, আরো কত কিছু এখন নেই, কান্নার আওয়াজ শুনে পাশের বাড়ির কাকিমা, জেঠিমার আর সেই ডাক শোনা যায় না, কি গো কি হয়েছে? কাঁদছে কেনো, এই প্রশ্ন করতে যাতে না হয় তাই ঘরের দরজা আটকে রাখা।

আমার বেশ মনে আছে ছোটবেলা মোটেও ডাল ছাড়া ভাত খেতে পারতাম না, মা মোটামুটি রোজই ডাল বানাতেন নিরুপায় হয়ে, একদিন কোনো কারণে (অনেক ছোট ছিলাম কারণটা মনে নেই) ডাল রাঁধেন নি।

আমার সে চিৎকার করে কান্নার আওয়াজ শুনে উল্টো দিকে থাকা মামী কারণ জানতে চাইলো, মা তো হেসে গড়াগড়ি, মামী আমার কান্নার কারণ জেনে আমার জন্য একবাটি ডাল দিয়ে গিয়েছিলেন, এবং সেটা পেয়ে আমি শান্ত হয়েছিলাম।

মায়ের ডাল না রান্নার কারণটা মনে না থাকলেও সেই একবাটি ডাল আমি আজও ভুলিনি।

এরপর, সেই স্কুল চাতালের খোলা বারান্দায় পড়াশুনা, যাকে পাঠশালা বলা হয়, এখন তো কেউ বোধ নাম শুনলেই অবাক হয়ে যাবে, সে আবার কি বলে! কারণ এখন সবার কাছে পাঠশালা মানেই মাস্তিকি পাঠশালা গান বুঝবে!

রতি সোম আমাদের পাঠশালার শিক্ষকের নাম, তখন তো বাক্স অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি হতো, তাতে বই নিয়ে পাঠশালায় যেতাম।

একদিন সেই পাঠশালা থেকে না বলে পালিয়ে গেছিলাম পাশের বাড়ির দিদির সাথে।

তারপর ফুল চুরি, ফল চুরি তো ছিলই। এখন সবাই নিজের জগৎ সাজাতেই ব্যস্ত, সময় নেই পাশে বসে থাকা মানুষটির সাথেও কথা বলার।

এখন থিম পুজো হয়, যেখানে নেই বিদ্যাসাগর, নেই রবীন্দ্রনাথ, শরৎ চন্দ্র কিংবা বঙ্কিচন্দ্রের কথা, কোন দেশের কি বিখ্যাত তার উপরে ভিত্তি করে থিম নির্ণয় করা হয়।

(পাশাপাশি হেঁটে কেউ আর এই খাবার খেতে চায় না, এখন সবটাই বিদেশী)

দুর্গাপুজো যখন বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব তখন থিম টা তো বাংলার এই সকল বরেন্যবি এবং বাংলার চির গৌরবদের নিয়ে হওয়া উচিত, তাই না?

কিছু জিনিষ সবসময় সাবেকি থাকা ভালো, কারণ বড়ো হয়ে গেলেও, শৈশব আজও কিন্তু সকলকে তাড়া করে বেড়ায়।
আমি উন্নতির বিপক্ষে নয় তবে অনুকরণে বিশ্বাসী নই।

নিজের রাজ্যে যখন এত কিছু আছে তখন কেনো অন্যের জিনিস ধার করে আনন্দ উপভোগ করা। দুর্গোৎসব বাঙালির গর্ব তথা বাংলার গর্ব, কাজেই সেটাকে বাঙালির মত করেই পালন করা উচিত বলে আমার মনে হয়।

আশাকরি আমার মনখারাপের কারণটা এখন বুঝতে পেরেছেন, আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না, আপনারা কি ভাবেন এই পরিবর্তনটা কি গ্রহণযোগ্য নাকি গ্রহণযোগ্য নয়।

আজ আমার শহর অট্টালিকায় ভরে গেছে আর মানুষের মন হয়ে গেছে পাথর, বন্দি হয়ে গেছে সবাই ফ্ল্যাট নামের ছোট্ট কুঠুরিতে, তারা বন্ধ দরজার আড়ালে কেবল নিজেরা ভালো থাকতে বিশ্বাসী।

আমি এখনও এতটা আধুনিক হয়ে উঠতে পারিনি, আপনাদের বিষয় অবশ্য জানিনা। জানতে ভুলবেন না।

আজ এখানেই শেষ করছি, ভালো কাটুক আপনাদের পুজো এই শুভেচ্ছা জানিয়ে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

মনের কথা লিখেছেন, সত্যি কত কিছু হারিয়ে গেছে এখন জীবন থেকে এবং বাজার থেকেও।
শৈশবের সেই দিনগুলোই সবচাইতে ভালো ছিল।

দুঃখিত দেরি করে উত্তর দেবার জন্য, একদম সঠিক কথা স্কুল যাবার পথে সেই কারেন্ট নুন এখন পাই না, বনকুল মাখা আরো কত কিছুই হারিয়ে গেছে।