ক্ষুদিরাম বসু, ৩ ডিসেম্বর ১৮৮৯ মোহবনী (হবিবপুর), পশ্চিম মেদিনীপুর, ব্রিটিশ ভারতে জন্ম গ্রহন করেছিলেন। তার পিতার নাম ত্রৈলোক্যনাথ বসু ও মাতার নাম লক্ষ্মীপ্রিয় দেবী। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র বিপ্লবী। তার রাজনৈতিক দল ছিল অনুশীলন সমিতি। তিনি ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন।
ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকী মিলে ব্রিটিশ বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে বোমা মরে গুপ্ত হত্যা করতে গিয়ে অন্য একটি গাড়িতে বোমা ছুঁড়েছিলেন। সে গাড়িতে থাকা দুজন ব্রিটিশ মহিলার মৃত্যু হয়, যারা ছিলেন মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা। ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড অন্য একটা গাড়িতে বসেছিলেন বলে তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
প্রফুল্ল চাকী গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই আত্মহত্যা করেন। ক্ষুদিরাম গ্রেপ্তার হন। দুজন মহিলাকে হত্যা করার জন্যে বিচারে তার ফাঁসির আদেশ হয়।
ফাঁসি হওয়ার সময় ক্ষুদিরাম ছিল মাত্র ১৮ বছর, ৭ মাস এবং ১১ দিনের কিশোর, তাই তিনি কনিষ্ঠতম ভারতের বিপ্লবী স্বীকৃত হয়েছিলেন।
ক্ষুদিরামের ফাঁসির সময়ের একটা গানে:
"একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি।
হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে ভারতবাসী।
কলের বোমা তৈরি করে
দাঁড়িয়েছিলাম রাস্তার ধারে মাগো,
বড়লাটকে মারতে গিয়ে
মারলাম আরেক ইংলন্ডবাসী।
হাতে যদি থাকতো ছোরা
তোর ক্ষুদি কি পড়তো ধরা মাগো
রক্ত-মাংস এক করিতাম
দেখতো জগতবাসী
শনিবার বেলা দশটার পরে
জজকোর্টেতে লোক না ধরে মাগো
হল অভিরামের দ্বীপচালান মা ক্ষুদিরামের ফাঁসি
বারো লক্ষ তেত্রিশ কোটি
রইলো মা তোর বেটা বেটি মাগো
তাদের নিয়ে ঘর করিস মা
মোদের করিস দাসী
দশ মাস দশদিন পরে
জন্ম নেব মাসির ঘরে মাগো
তখন যদি না চিনতে পারিস
দেখবি গলায় ফাঁসি"
পীতাম্বর দাস
ক্ষুদিরামকে মাতঙ্গিনির শহরে তমলুকের হ্যামিল্টন হাই স্কুলে ছাত্র অবস্থায় নিয়মিত ভগ্নী নিবেদিতা ও ঋষি অরবিন্দ ঘোষের স্বাধীনতা সংগ্রামের গোপন আলোচনায় সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মাত্র পনেরো বছর বয়সে প্রথম গ্রেফতার হন। ১৬ বছর বয়সে বিভিন্ন থানার কাছে বোমা মজুত করে এবং বৃটিশ কর্তাব্যক্তিদের আক্রমন করার সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি কলকাতায় বারীন্দ্র কুমার ঘোষের সার্নিদ্ধে আসেন ও তার কর্মকান্ডে সামিল হন।
১৯০৮ সালে কিংসফোর্ড মুজাফফরপুর জেলার বিচারপতি হিসেবে বদলি হয়। তাকে হত্যার প্রয়াস কখনো থামেনি। ঐ সালের এপ্রিল মাসে প্রফুল্ল চাকী ও আরেক অজ্ঞাত বিপ্লবী মজফরপুর পরিদর্শন করেন। আবার প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম হেমচন্দ্রের দেওয়া ছয় আউন্স ডিনামাইট, একটা বিস্ফোরক এবং কালো পাউডার ফিউজ তৈরি বোমা নিয়ে মুজাফফরপুর যান। তিন সপ্তাহ আত্ম গোপন করে কাটান।
২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় ক্ষুদিরাম এবং প্রফুল্ল তাদের কার্যসিদ্ধি করার জন্য পরিকল্পনা মাফিক যথাস্থানে হাজির হয়েছিলেন। প্রিঙ্গল কেনেডির মেয়ে ও তার স্ত্রী একি রকম আরেকটি গাড়িতে কিংসফোর্ডের বাড়ির চত্বরে ফেরেন। ওই ভুল গাড়ি লক্ষ্য করে তারা বোমা ছোড়েন। মিস কনেডি ও তার মেয়ে প্রান হারান এবং কিংসফোর্ড প্রাণে বেঁচে যায়।
ক্ষদিরাম পায়ে হেঁটে প্রায় পঁচিশ মাইল অতিক্রম করার পর দুই কনস্টেবলের নজরে পরে। তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও ধস্তাধস্তি হওয়ার পর ক্ষুদিরামকে গ্রেপ্তার করে।
১১ আগস্ট ১৯০৮ (বয়স ১৮) মুজাফফরপুর, বাংলা প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত ভোর ছ-টায় ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তিনি হাসি মুখে প্রান দেন ভারত মাতার মুক্তি কামনায়।
শহীদ ক্ষুদিরাম বসু - প্রফুল্ল চাকী স্মৃতি স্থান, মজফরপুর
ক্ষুদিরাম বোস ও প্রফুল্ল চাকী মেমোরিয়াল, মজফরপুর
এই স্থানটি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি তীর্থক্ষেত্র হিসেবে দর্শনীয় যায়গা।
আমার ব্লগটি পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।