সকল সদস্যকে জানাই নমস্কার 🙏🏾
১৯১৯ সালের ১০ মার্চ বলবৎ করা কুখ্যাত ‘রাওলাট অ্যাক্ট’ প্রতিবাদে এক সভা ডাকা হয় পাঞ্জাব প্রদেশের জালিয়ানওয়ালাবাগ ময়দানে ঐ সালের ১৩ এপ্রিল বৈশাখীর দিন।
কঠোর আইনী বাধা নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে বিপুলসংখ্যক স্বাধীনতাপ্রেমী বৃটিশ অত্যাচারিত সাধারন মানুষ ভোর থেকে ঐ মাঠে সামিল হয়েছিল।
জেনারেল রেগিনাল্ড ডায়ারের নির্দেশে মুহুর্তে গুলি চলে নিরীহ মানুষের উপর সরকারি হিসেবে মারা যায় ৩৭৯ জন কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের মত অনেক অনেক বেশি। এর পিছনে পাঞ্জাবের গভর্নর মাইকেল ও’ডায়ারের ভূমিকাও ছিল অতি নৃশংস।
সংবাদপত্রের ওপর ইংরেজ সরকারের নানা সেন্সরশিপের জন্য এই বর্বর হত্যাকান্ডের খবর উপমহাদেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারল না। লোক মুখে বিকৃতভাবে অর্ধ সত্য, গুজব চারিদিকে ছড়িয়ে পরতে থাকলো।
১৯১৯ পয়লা মে রাজধানী দিল্লি থেকে শিক্ষক ও ধর্মযাজক সি এফ অ্যান্ডরুজ রবীন্দ্রনাথকে চিঠি লিখে বিস্তারিত জানান। ঐ চিঠিতে তিনি জানান
‘অসহায় গ্রামবাসীর ওপর এয়ারপ্লেন বোমা ফেলছে আর কেবল লাঠি হাতে থাকা জনসমাবেশে মেশিনগান গুলি ছোটাচ্ছে।’
এই চিঠি পেয়ে রবীন্দ্রনাথ খুব বিচলিত হয়েও তার কোন বহিঃপ্রকাশ না করে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে থাকেন। কিন্তু তার বিবেককে ঐ জালিয়ানওয়ালাবাগ চিন্তা দংশন করে। তিনি স্থির করেন গান্ধীজীর সঙ্গে ওখানে যাবেন কিন্তু গান্ধীজী ঐ সময় অন্য পরিকল্পনায় ব্যস্ত থাকায় তার অপারগতা প্রকাশ করলেন। তখনো রবীন্দ্রনাথ তাঁর উদ্দ্যম না হারিয়ে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনকে পাশে পাবেন আশা করে তাকে অনুরোধ করলেন কলকাতায় একটা সভা ডাকতে কিন্তু চিত্তরঞ্জনও তা এড়িয়ে গেলেন। কিন্তু তিনিও তাকে সঙ্গ দিতে রাজি হলেন না। এই বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ প্রশান্ত মহালানবীশকে চিঠি লিখে জানলেন
‘মহাত্মাজী রাজি হলেন না পাঞ্জাবে যেতে। কাল তাই নিজেই গিয়েছিলুম চিত্তরঞ্জনের কাছে। বললুম যে, এই সময় সমস্ত দেশ মুখ বন্ধ করে থাকবে তা অসহ্য। তোমরা প্রতিবাদসভা ডাকো।’
রবীন্দ্রনাথ চিত্তরঞ্জনের সিদ্ধান্তে একটু মনখুন্য হয়ে নিজে ঠিক করলেন তার নাইট উপাধি ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বড়লাটকে চিঠি দিয়ে জানাবেন। সেই চিঠির ভাষা ছিল অত্যন্ত রূঢ় । তার ঐ চিঠি অনেকেই সাদরে গ্রহণ করেনি। স্বয়ং গান্ধীজী ঐ চিঠির সমালোচনা করে কটূক্তি করেন।
যখন ভারতের অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব জালিয়ানওয়ালাবাগ ঘটনায় চুপ করে ছিলেন তখন রবীন্দ্রনাথ একক চেষ্টায় সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।
Design with Canva
তথ্যসূত্র: জালিয়ানওয়ালাবাগ: অ্যান এম্পায়ার অব ফিয়ার অ্যান্ড দ্য মেকিং অব অমৃতসর ম্যাসাকার, কিম এ ওয়াগনার। রবিজীবনী ৭ম খণ্ড, প্রশান্তকুমার পাল।
রবীন্দ্রনাথের কাছে পুরস্কার বা খেতাবের থেকে মনুষ্যত্বের মূল্য ছিল অনেক বেশি দামী। তাই তিনি নোবেলজয়ী হওয়ার পরে গান লিখেছেন 'এ মনিহার আমায় নাহি সাজে'। তিনি ছিলেন মানবতাবাদী এবং তার সমগ্র কর্মকান্ড ছিল মানব মুখী। বাস্তবিক তিনি নামের আগে স্যার ইংরেজি উপাধিটা মুছে ফেলে স্বস্তি বোধ করেন।
আমার ব্যক্তিগত অনুরোধ আপনারা রবীন্দ্রনাথকে নিজের বুদ্ধি ও বিবেক দিয়ে উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন। কতিপয় খুদ্র্য স্বার্থান্বেষী মানুষের ভাব ধারায় প্রভাবিত হবেন না। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির ফসল সংগ্রহ মানব জাতির জন্য উন্মুক্ত।
আমার এই ব্লগটি পড়ার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।