অন্নপূর্ণা

in hive-120823 •  3 months ago 

নমস্কার বন্ধুরা, সকলে কেমন আছেন? আমি বেশ ভালোই আছি ।এখানে প্রত্যেক দিনই অল্প অল্প করে বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু তাও গরম যায় না। যাইহোক আমি ভাবলাম আজকে আপনাদের সাথে আমাদের হিন্দু ধর্মের আরেকটি পুজোর ব্যাপারে আলোচনা করি ।আজকে আমি আলোচনা করতে চলেছি অন্নপূর্ণা পূজোর ব্যাপারে।

20240417_210824.jpg

আমার খুব পরিচিত একজন কাকার বাড়িতে, বলা চলে আমার বাবার বন্ধুর বাড়িতে প্রত্যেক বছর অনেক আগে থেকে অন্নপূর্ণা পুজো হয়ে থাকে। ওদের বাড়িতে প্রায় তিন দিন ধরে এই অন্নপূর্ণা পূজো হয়। প্রত্যেকবারে আমাদের বাড়ির সবাইকে কাকা নিমন্ত্রণ করে। কিন্তু কারোরই যাওয়া হয়ে ওঠে না সময়ের জন্য। এবারে আমি বাবার সাথে তৃতীয় দিন ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। অন্নপূর্ণার মূর্তিটি এতই অপরূপ সুন্দর হয়েছিল, যে বলে বোঝাবার নয়। ওদের বাড়ির পুজোর ছবি দিয়ে আমি এই অন্নপূর্ণা পূজা সম্পর্কে আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করছি।

20240417_210815.jpg

বাড়িতে পুজো হলে লোকজন স্বাভাবিকভাবেই থাকে। ওদের বাড়িতে তাই তিন দিন ধরে নানান মানুষ আসছেন এবং ওখানে গিয়ে আমরা প্রসাদ খেয়েছি। সাথে মেইন পুজোর দিন সকালবেলায় কাকা লোক পাঠিয়ে আমাদের বাড়িতে মায়ের মেইন ভোগের প্রসাদ পাঠিয়ে দিয়েছিল। অন্যান্য খাবারের তুলনায় ঠাকুরের প্রসাদের আলাদাই যেন একটা স্বাদ হয়। আমি যে কোন পুজোর প্রসাদের কথাই বলছি।

20240417_210809.jpg

মূর্তি

প্রতিবছর চৈত্র নবরাত্রিতে শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে অন্নপূর্ণা পূজা শুরু হয় সব জায়গাতেই। ঐদিন সব জায়গাতেই বাসন্তী পূজা হয় ।বাসন্তী পূজার অষ্টমী তিথিতেই মা অন্নপূর্ণাকে পূজা করা হয়।

হিন্দু ধর্মে দেবী অন্নদা, মা পার্বতীর একটি রূপ। মা অন্নপূর্ণাকে সমৃদ্ধির দেবী বলা হয়।অন্যান্য পূজার মতো হিন্দু ধর্মে এই পুজোর সময়ও প্রতিমা তৈরি করা হয় এবং প্রতিমার রূপ অনেকটা এরকম হয় - মা পার্বতী ভিক্ষারত শিবকে অন্নপ্রদান করছেন ,এরকম একটি চিত্রকল্প মূর্তির মাধ্যমে রূপ দেওয়া হয় এবং এর পিছনে পৌরাণিক নানান ধরনের কাহিনী রয়েছে।

কাশিতে অন্নপূর্ণার একটি বিখ্যাত মন্দিরও আছে। বলা হয়ে থাকে কাশি বিশ্বনাথ অর্থাৎ শিব কাশিধামের নির্মাতা এবং মা অন্নপূর্ণা হলেন কাশি ধামের অধিষ্ঠাত্রী দেবী।হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী দেবী অন্নপূর্ণার পূজা করলে বাড়িতে অন্নাভাব থাকে না। তবে এই অন্নদা মায়ের পুজো নিয়ে একটি জনপ্রিয় মঙ্গলকাব্য রয়েছে। যারা সাহিত্যের সাথে যুক্ত তারা হয়তো এ ব্যাপারে অনেকটাই জানেন। তাও আমি আপনাদের সাথে আজকে আলোচনা করব, কারণ বিষয়টি আমার অত্যন্ত কাছের।

20240416_163342.jpg

অন্নদামঙ্গল

ভারতচন্দ্র রায় অন্নদামঙ্গল নামে একটি মঙ্গলকাব্য রচনা করেছিলেন, যা বাংলা সাহিত্যের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। সাহিত্য নাড়তে থাকলে মনসা মঙ্গল ,চন্ডীমঙ্গল জাতীয় অনেক ধরনের মঙ্গলকাব্য পাওয়া যাবে ।আদি কবিদের অনুসরণ করেই ভারতচন্দ্র ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে এই মঙ্গলকাব্য রচনা করেন। ভারতচন্দ্র ছিলেন কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের রাজসভার একজন সদস্য কবি। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় ভারতচন্দ্রকে উপাধি প্রদান করেছিলেন "রায়গুনাকর"। এই অন্নদামঙ্গল কাব্যগ্রন্থে দেবী অন্নপূর্ণার মাহাত্ম্য বর্ণনা রয়েছে। যা রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ভারতচন্দ্রকে লেখার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।
কৃষ্ণনগর আমার শহর তাই অন্নদামঙ্গল আমার খুবই পছন্দের এবং প্রিয় মঙ্গলকাব্য।

20240417_210821.jpg

কাহিনী

পৌরাণিক কাহিনীতে প্রচলিত আছে, সংসারে অভাব অনটনের কারণে শিব পার্বতীর সংসারে যখন প্রচন্ড কলহ লাগে, পার্বতী ভোলানাথের উপর রাগ করে ঘর-সংসার ত্যাগ করে মর্তে চলে এসেছিলেন। পার্বতীকে ছাড়া শিবের সংসার হয়ে গেছিল একেবারেই অচল। ত্রিলোক জুড়ে খাদ্যের হাহাকার শুরু হয়ে যায়। ভক্তদের রক্ষা করতে ভগবান শিব ভিক্ষা করতে বার হন।

এদিকে মা পার্বতীর মায়ায় তিনি কোন জায়গাতেই ভিক্ষা পাচ্ছিলেন না । চারিদিকে অনেক অনেক খোঁজ করেও খাবারের জোগাড় করতে পারেননি শিব ঠাকুর। তিনি শোনেন কাশিতে এমন একটা জায়গা আছে যেখানে গেলে অবশ্যই তিনি অন্ন পাবেন । সেই কাশিতে গিয়ে শিব ঠাকুর দেখেন একজন নারী তার সমস্ত ভক্তদের খাবারের ব্যবস্থা করছেন , শিব মা অন্নপূর্ণাকে দেখে ওখানেই চিনতে পারেন এবং নিজের ভুল বুঝতে পারেন। তারপর তিনি নিজেই মা পার্বতী অর্থাৎ মা অন্নপূর্ণার কাছ থেকে ভিক্ষা নেন এবং এভাবেই অন্নপূর্ণা পূজোর প্রচলন শুরু হয়।


আশা করছি এই কাহিনী আপনাদের সকলের ভালো লাগলো ।হিন্দু ধর্মে এরকম নানান দেব-দেবীদের মাহাত্ম্যের কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। আজকে এখানেই শেষ করছি। সকলে সুস্থ থাকুন ।সকলের ঘর পরিপূর্ণ থাক ।মা অন্নপূর্ণা সকলের বাড়িতে বিরাজ করুক।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

জয় মা অন্নপূর্ণা। আপনার পোষ্টটি পড়ে সত্যিই খুব ভালো লাগলো। অনেক অজানা কোথাও জানতে পারলাম। ধন্যবাদ দেবীর মাহাত্ম্য সম্পর্কে আমাদের জানানোর জন্য।

আমি হিন্দু ধর্মের সম্পর্কে অনেক বেশি অজ্ঞ। অন্নপূর্ণা পূজা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারলাম আর হ্যাঁ খুবই সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছিল।। আমাদের ঈদে যেমন বাসায় মানুষ সব সময় থাকে তেমনি আপনাদের পূজাও বাসায় অনেক রকম মানুষ থাকে।

খুবই আনন্দের সাথে এবারের অন্নপূর্ণা পূজা করেছেন সেটা পোস্ট পড়েই বোঝা যাচ্ছে।।

বরাবরের মতোই বলবো এই বিষয়গুলো আমার একেবারেই জানার বাহিরে। যেহেতু আপনাদের ধর্মের এই বিষয়গুলো আপনারা পালন করে থাকেন। আপনারা এই বিষয় সম্পর্কে অনেকটাই জানেন। তবে অন্নপূর্ণা পূজা কিভাবে তৈরি হয়েছিল।সেই বিষয়টা আপনি খুব সুন্দরভাবেই আমাদের সাথে উপস্থাপন করেছেন এবং আপনার বাবার বন্ধুর বাড়িতে, খুব সুন্দর ভাবে অন্নপূর্ণা পূজা পালন করেছেন। ধন্যবাদ ভাল থাকবেন।