মহালয়ায় মায়েদের সাথে

in hive-120823 •  last month 

নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন। গত পরশু ছিল মহালয়া। দুর্গাপুজোর ঠিক সাত দিন আগে মহালয়ার দিন ধরা হয়। এবং বলা হয় সেদিন থেকে দেবীপক্ষের সূচনা হয়।

গত পরশুর পোস্টে আমি মহালয়া সম্পর্কিত কিছু কথা লিখেছিলাম, আমি কিভাবে মহালয়ার ভোরবেলা কাটিয়েছি এবং আগে কিভাবে কাটাতাম সেগুলো নিয়েও লিখেছিলাম । সাথে জানিয়েছিলাম মহালয়ার দিন আমার প্রোগ্রাম ছিল। আজ সেসব কথাই শেয়ার করতে এসেছি।

1000145112.jpg

মহালয়ার দিন আমাদের শহরের একটি সমাজ সেবামূলক কেন্দ্রতে আমার প্রোগ্রাম ছিল। এ কেন্দ্রের নাম ' ইওর ফ্রেন্ড '। আমার বাবা এবং আমি বেশ অনেক বছর ধরে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কেন্দ্র র সাথে যুক্ত আছি। তার মধ্যে এটিও একটি। এনাদের হাত ধরে পুজোর আগে প্রত্যেক বছর অনেক প্রজেক্ট করা হয়।

তার মধ্যে প্রত্যেক বছর এই মহালয়ার দিন একটি শুভ কাজ করা হয়। এই কেন্দ্রের সাথে অনেক বড় বড় ডাক্তার জড়িত। তার মধ্যে একজন ডাক্তার হলেন ডক্টর প্রবীর মিত্র। তিনি বর্তমানে ৬৫ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী। কৃষ্ণনগরের তিনি একজন বিশিষ্ট মাপের ডাক্তার। তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকেই, তিনি মহালয়ার দিন কিছু করার চিন্তাভাবনা করেন। এবং এই কেন্দ্রের সাথে যুক্ত হয়ে, সেই কার্য পূর্ণ করার চেষ্টা করেন।

1000145132.jpg

এই দিনকে প্রত্যেক বছর মোটামুটি দেড়শ থেকে ২০০ জন মহিলাকে বস্ত্র দান করা হয়। সাথেই থাকে তাদের জন্য খাবার ব্যবস্থা। যে সকল মায়েরা আর্থিকভাবে পিছিয়ে আছেন। এই পুজোর দিনে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে, তাদেরও যাতে নতুন জামা কাপড় হয়, সেই সুবাদে এই আয়োজন করা হয়।

এই কেন্দ্রের হাত ধরে প্রচুর জনের ফ্রিতে চিকিৎসা করা হয়। বছরের বিশেষ বিশেষ দিনগুলিতে এই কেন্দ্র থেকে নানান ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। যাইহোক আমাকে জ্যোতি জেঠু অর্থাৎ এই সমাজ সেবামূলক কেন্দ্রের যিনি হেড খুবই স্নেহ করেন। তিনি আমাকে অনেকদিন আগে থেকেই বলে রেখেছিলেন সেদিনকে যেন আমি একটি গান এবং একটি আমার লেখা কবিতা সবার মাঝে শেয়ার করে নিই।
1000145115.jpg

জেঠু এরকম নানান আবদার মাঝেমধ্যেই আমার কাছে করে থাকেন। নানান কাজের চাপে সবসময় যাওয়া হয়ে ওঠে না। কিন্তু এবারে যেহেতু ছুটির দিন ছিল, আমি সকাল সকাল তৈরি হয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু সকাল থেকেই ঝমঝম বৃষ্টি। ভেবেছিলাম বোধহয় প্রোগ্রামে যেতে পারবনা। অবশেষে বৃষ্টি থামল।
1000145125.jpg

সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ আমি পৌঁছে গেলাম বাবার সাথে। সাথে ঈশান ও গিয়ে ছিল। গিয়ে দেখলাম মায়েরা স্টেজের সামনে বসে আছেন। এবং সকলকে নাম ধরে ধরে ডেকে এক এক করে তাদের জন্য উপহার দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্র থেকে শীতকালের দিকে আর্থিক দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা মানুষদের জন্য অনেক ধরনের সাহায্য করা হয়। অবশ্যই আমাদের শহরের অনেক বড় নামিদামি বিখ্যাত মানুষেরা এই সংস্থার সাথে যুক্ত থাকায় এই কার্যটি করা আরও সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

1000145121.jpg

তবে একটা জিনিস ভালো, এনারা খুঁজে খুঁজে সেই মানুষজনকে বের করেন। এই জায়গায় কেউ কোনরকম ঠকবাজি করতে পারে না। আমি অনেক জনকেই দেখেছি, তাদের স্বভাবটাই এরকম যে, তারা গরিব সেজে মানুষের কাছ থেকে পয়সা এবং জিনিসপত্র হাতিয়ে নেয়। এরকম মানুষের পরিমাণ এখনকার দিনে খুবই বেশি। যারা আসলেই ভুক্তভোগী এবং যাদের আসলেই প্রয়োজন তারা পিছিয়ে পড়ে এই জায়গায়।

আমাদের এই সংস্থা সেই সকল মানুষকে খুঁজে বার করে। আমাদের বাড়ির চারিদিকে পরিচিত অনেকেই রয়েছে। তাদেরকে আমরা এই সংস্থার কাছে তুলে ধরি। সংস্থা থেকে সবাই মিলে আমরা তাদেরকে সাহায্য করার চেষ্টা করি।

1000145128.jpg

আমি পৌঁছানোর পর যদি জেঠু কিছুক্ষণ পরেই আমার নাম এনাউন্স করল। এবং আমি কিছু কথা বলার পরেই গান গাইলাম। তারপর আমারই লেখা একটি কবিতা পাঠ করে শোনালাম।

সবশেষে সকলের প্রশংসা পেয়ে খুবই ভালো লাগলো। এবং ভগবানের কাছে প্রার্থনা করলাম এটাই যে আরো যেন ভালো গাইতে পারি। সংস্থাতে এত মানুষ আসেন এবং সকলের সাথে কথা বলে, পরিচিত হতে পেরে খুব ভালো লাগে।

1000145118.jpg

প্রায় অনেকক্ষণ থাকার পর, বাড়ি আস্তে আস্তে সাড়ে বারোটা পার হয়ে গিয়েছিল। মহালয়ার দিন ঠিক এরকম ভাবেই কেটেছে। আমার মনে হয় এর থেকে ভালো মহালয়া আমি এর আগে কখনো কাটাইনি। আজকে এখানেই শেষ করছি। সকলে ভাল থাকবেন।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

Your post has been rewarded by the Seven Team.

Support partner witnesses

@seven.wit
@cotina
@xpilar.witness

We are the hope!

এইরকম সমাজ মূলক কাজে যুক্ত থাকা অনেক ভালো। সবাইকে সেবা করা বা বস্ত্র দান করা খুবই ভালো কাজ। তুমি মহালয়ার দিন প্রোগ্রামে গান গাইতে গিয়েছিলে। তোমার গান শুনতে সকলেরই খুব ভালো লাগে। সকলে প্রশংসা তো করবেই। মহালয়ার দিনটি খুব ভালোভাবে কাটিয়েছো জেনে খুব ভালো লাগলো।