লালবাগ কেল্লায় ঘুরতে গিয়ে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি,,।

in hive-120823 •  26 days ago 

Neutral Minimalist Romantic Photo Collage.png
Photo edited by canva

দুই দিন যাবত মনটা ভীষণ অস্থির কেন জানিনা,বাবার বাড়িতে যাওয়ার জন্য মনটা খারাপ লাগছিল। সংসারের কাজকর্ম কোন কিছুই ইচ্ছা করছিল না,, হাজবেন্ডের সাথে অকারণে ঝামেলা করছিলাম মনে হয় যেন কোনো ভালো কথাও ভালো লাগে না,,।

তাই আজ সে অফিস থেকে এসে আমাকে বললো লালবাগ কেল্লায় ঘুরতে নিয়ে যাবে,, কথাটা শুনে কিছুটা খুশি হয়েছিলাম,এরপরে তার কথা অনুযায়ী দুপুরের খাবার খাওয়া শেষে এই রেডি হয়ে নিলাম, কারণ, বেলা খুব ছোট এবং সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরতে হবে।

Neutral Minimalist Romantic Photo Collage.png

Photo edited by canva

এরপরে, আমরা মানে আমাদের এই ছোট্ট পরিবার আমি, আমার মেয়ে, এবং আমার হাসবেন্ড মিলে বেরিয়ে পড়লাম লালবাগ কেল্লায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে, আমাদের বাসা থেকে খুব একটা দূরে নয় লেগুনায় যেতে ২০ টাকা লাগে এরপরে পাঁচ মিনিটের মত হেটে ছিলাম,এবং গেটের কাছে গিয়ে আমরা ৬০ টাকার দিয়ে দুই টা টিকিট কেটে নিয়েছিলাম। একটা টিকিটের মূল্য ৩০ টাকা এবং পাঁচ বছর বয়স থেকে টিকিট কাঁটতে হবে, যেহেতু আমার মেয়ের বয়স পাঁচ বছর হয়নি তাই ওর টিকিট লাগেনি।

এরপরে আমরা টিকিট নিয়ে ভিতরে ঢুকে এবং ঢোকার সাথে সাথেই, টিকিট আমাদের কাছ থেকে নিয়ে ছিড়ে ফেলে দিল ডাস্টবিনে,, একটা ছবিও তুলতে পারলাম না টিকিটের ভিতরে ঢোকা মাত্রই নিয়ে নিলো,,সে যাই হোক এরপর সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম,,।

Neutral Minimalist Romantic Photo Collage.png

Photo edited by canva

ভিতরে পরিবেশ টা একদম শান্ত এবং খুবই সুন্দর ,,, এখানে সম্রাট আওরঈজেবের পুত্র শাহজাদা আজম ৭৮ খ্রিস্টাব্দে এই প্রাসাদ দুর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে সুবাদার শায়েস্তা খানের শাসনামলে ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত অবস্থায় রেখে দুর্গটি পরিত্যক্ত হন। দুর্গের অভ্যন্তরে হাম্মাম খানা সহ একটি সুরফা দ্বিতল দরবার হল, একটি সমাধি সৌধ তিন টি গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ ও একটি পুকুর অবস্থিত তিনটি সুদৃশ্য তোরন ছাড়াও দক্ষিণ এবং পশ্চিম দুর্গ প্রাচীরের নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর একটি করে পলকাটা তোপমঞ্চ রয়েছে, এছাড়াও রয়েছে এই দুর্গের নিচ দিয়ে বিশাল আয়তনের সুরঙ্গ,,,।যদিও এই সুরঙ্গ দিয়ে এখন ঢোকার নিষেধ।

হাঁটতে হাঁটতে আমরা আরো ভিতরে যাই এবং চারদিক টা খুব সুন্দরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলাম, একা করে সবগুলো স্থানীয় আমরা ঘুরে ঘুরে দেখলাম, সেই সাথে তো এলোমেলো ফটোগ্রাফি রয়েছে,, তবে অনেক দিন পরে বাসা থেকে বের হওয়ার কারণে খুব একটা হাঁটতে পারছিলাম না,,তাছাড়া আমরা যেহেতু দুপুরের পরে এই বের হয়েছিলাম সেই কারণে রোদের তাপটা ও একটু বেশি ছিলো,ছবি তোলার সময় কোনভাবেই ঠিকমতো তাকাতে পারছিলাম না,,। তবে পুরো সময়টা এই আমরা অনেক আনন্দ পেয়েছি ,,,।
Neutral Minimalist Romantic Photo Collage.png

Photo edited by canva

চেষ্টা করেছি প্রত্যেকটা জায়গায় একটু ঘুরে দেখার, এখানে সেই পুরনো আমলের পাঁচিল গুলো দেখতে সত্যি ভালো লাগে,,এবং বোঝা সেই আমলের মানুষেরা কি নিখুঁত ভাবে কাজ করেছে যা এখনো পর্যন্ত অক্ষয় আছে,, তার সাথে ছিল অনেক পুরনো দেওয়াল বড় বড় গম্বুজে মসজিদ , দুই এক জায়গাতে উঁচু উঁচু খানিক টা পাহাড়ের মত,তার আশেপাশে নানান রকমের ফুলের গাছ, এরপর একটু হাম্মাম খানার ভিতর ঢুকে দেখছিলাম, সে কালের সম্রাটরা কিভাবে গোসল করতে, ওজু করতেন নিজেকে পবিত্র করতেন। তার খানিক টা পাশেই ছিল বিশাল বড় একটা পুকুর।

যদিও পুকুরে ভিতরে এক ফোটাও পানি নেই ঘাসে ভরা এবং এর ভেতর দিয়েও অনেক মানুষেরা এই ঘোরাঘুরি করছিলো,তবে আমি আর নিচে নামতে যাইনি। নিচে নামা অনেক টা কষ্টসাধ্য, উপর থেকে এটার গভীরতা অনেকটা বেশি ছিল যে তা বোঝা যায়,,,।

Neutral Minimalist Romantic Photo Collage.png

Photo edited by canva

পুকুরের পাশেই বসার খানিক টা জায়গা ছিল যেখানে বসে আপনি বিশ্রাম নিতে পারবেন,, সুন্দর সময় কাটাতে পারবেন গল্প করে,, সেই সাথে চারদিকের পরিবেশ টা ও খুব কাছ থেকে দেখতে পারবেন,,।ভেবে ছিলাম একটু বসবো তবে,, তারা আর সুযোগ হয়নি এখানে কিছু লোক ছিলো যারা এমন আপত্তিকর ভাবে মেলামেশা করছিল যে,, আমি আর বসার সাহস পাইনি,, আমাদের সমাজ টা এইসব লোকেদের জন্যই আরো বেশি নষ্ট হচ্ছে,,।যদি একবার নিজেদের রুচির কথা চিন্তা করতো তাহলে হয়তো পরিবেশ টা অনেক সুন্দর থাকতো,,,সে সব কথা আর নাই বলি চলুন সামনের দিকে যাই,,,।

মোটামুটি সম্পূর্ণ জায়গাটা ঘোরা শেষ করে আমরা তিনটি গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির কাছে আসি, আমার কাছে এই জায়গাটা খুবই ভালো লেগেছে,,আর হ্যাঁ এখানে আসার পর আমার মেয়ে তো এদিকে সেদিকে মানে ওর মনে হচ্ছিলো বাড়ির উঠান পেয়েছে,,মানে এক কথায় খুশিতে কি করবে বুঝতে পারছি না,,। আর মেয়ের সাথে সাথে তার বাবারও এদিক সেদিক ছবি তোলা পরবর্তীতে দেখে আমি হাসতে হাসতে শেষ,,,।

Neutral Minimalist Romantic Photo Collage.png

Photo edited by canva

মাঝে মধ্যে মনটা খারাপ লাগে তবে, যখন আবার এরকম সুন্দর যাবে সময় কাটাতে পারি। এই পাগল দুই টা কে সাথে নিয়ে,,তখন মনে হয় জীবনে আর কোন কিছু চাওয়া পাওয়াই নেই সবকিছু পেয়ে গিয়েছি আমি, এমনি তে ও আমি সব সময় শুকরিয়া আদায় করি আলহামদুলিল্লাহ। সৃষ্টিকর্তা আমাকে যতটুকু দিয়েছে হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করি।।।।

এইতো ভাবে আমার আজকের এই সুন্দর মুহূর্ত টা কাটিয়ে ছিলাম,যেটা আপনাদের সাথে শেয়ার না করে আর থাকতে পারলাম না,, তো সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, ও আমার এবং আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।। আল্লাহ হাফেজ।।।।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

আপনার লালবাগ কেল্লায় ঘুরে বোড়ানোর ছবি দেখে অনেক স্মৃতি মনে পরে যাচ্ছিল।আমার বেশ কয়েকবার যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে এই ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত এই জায়গায়।
আপনারা যে এই জায়গাটা বেশ উপভোগ করেছেন সেটা বোঝাই যাচ্ছে আপনাদের ছবি দেখে। চমৎকার এই লেখাটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।