ঐতিহ্যবাহী রতনকান্দি হাট প্রতি সপ্তাহের বুধবারে বসে।

in hive-120823 •  2 months ago 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

হ্যালো বন্ধুগন আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভাল আছেন এবং সুস্থ আছেন, আমিও আপনাদের দোয়া এবং সৃষ্টিকর্তার রহমতে অনেক ভাল আছি।

photo_15_2024-09-05_00-38-40.jpg
Cover photo edit by canva

আজকে বুধবার, আর বুধবার মানেই আমাদের এলাকার সব থেকে বড় হাটের দিন, এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ বুধবারের অপেক্ষায় থাকেন, বুধবার আসলেই সবাই হাটে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন, এই দিনে সবার মাঝেই সকাল থেকে হাটে যাওয়ার ব্যস্ততা থাকে, ক্রেতা বিক্রেতা উভয়েই বুধবারে হাটে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকেন।

উল্লেখ্য প্রতি সপ্তাহের বুধবারে আমাদের এলাকায় সব থেকে বড় হাট বসে, দূর দুরন্ত থেকে মানুষ এই হাটে বেচা কেনা করার জন্য আসে, আমাদের পাশের গ্রাম রতনকান্দিতে এই হাট বসে, রতনকান্দি গ্রামে এই হাট হওয়ার কারণে হাটের নাম হয়েছে "রতনকান্দি হাট", আবার অনেকেই এই হাটকে বুধবারের হাটে নামেরও চিনে থাকে, কারণ এই হাট প্রতি বুধবারে বসে থাকে।

photo_17_2024-09-05_00-38-40.jpg
photo_16_2024-09-05_00-38-40.jpg
photo_9_2024-09-05_00-38-40.jpg

আমরা ছোটবেলা থেকে ঐতিহ্যবাহী এই রতনকান্দি হাটে যাওয়া আসা করি, ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে হাটে যেতাম, বাবা হাট থেকে সুস্বাদু জেলাপি কিনে দিত, আমরা খুব মজা করে খেতাম, ছোটবেলায় দেখতাম সকাল থেকে সবাই দল ধরে হাটে যাচ্ছে।

তখন আমাদের বাড়ির সামনে হাটে যাওয়ার রাস্তা ছিল, বাবা মাঝে মাঝে আমাদের হাটে নিয়ে যেতেন না, কারণ হাটে প্রচুর মানুষ হত, আমরা ছোট হওয়ার কারণে হারিয়ে যাওয়ার ভয় ছিল, আমরা যেদিন হাটে যেতে না পারতাম, সেই দিন বাড়ির বারান্দায় বসে থেকে হাটে যাওয়ার মানুষ দেখতাম, আর মনে মনে চিন্তা করতাম যে, আমরা যখন বড় হব তখন সবার মত একা একাই হাটে যাব।

photo_4_2024-09-05_00-38-40.jpgphoto_3_2024-09-05_00-38-40.jpg
photo_13_2024-09-05_00-38-40.jpg
photo_8_2024-09-05_00-38-40.jpg

ঐতিহ্যবাহী বুধবারের এই হাটে সব ধরনের জিনিস পাওয়া যায়, এই হাটের একটা বৈশিষ্ট্য হল, এক ধরণের জিনিস এক জায়গায় পাওয়া যায়, অর্থাত প্রত্যেক জিনিসের জন্য নির্ধারিত জায়গা আছে, যেমন মাছের বাজার এক জায়গায়, গরুর বাজার এক জায়গায়, হাঁস মুরগির বাজার এক জায়গায়, আলু বেগুন সহ বিভিন্ন তরকারীর বাজার এক জায়গায়, বিভিন্ন রকম কাপড়ের বাজার এক জায়গায়। সব জিনিস নির্ধারিত স্থানে পাওয়া যায়।

রতনকান্দির এই হাট গরু ছাগলের জন্য বিখ্যাত, অনেক দূর দুরন্ত থেকে মানুষ এই হাটে গরু ছাগল বেচা কেনাকরার জন্য আসে, প্রতি বুধবারেই অসংখ্য গরু ছাগল এই হাটে বেচা কেনা হয়, যে জায়গায় গরু ছাগল বিক্রি করা হয় সেখানে চোর বাটপার বেশি থাকে, এই জন্য সবাই সাবধানতার সাথে ক্রয় বিক্রয় করে থাকে।

photo_6_2024-09-05_00-38-40.jpg
photo_11_2024-09-05_00-38-40.jpg
photo_5_2024-09-05_00-38-40.jpgphoto_7_2024-09-05_00-38-40.jpg

আজকে হাটে প্রবেশ করার সাথেই সাথেই সুন্দর সুন্দর হাত পাখা চোখে পড়ল, রঙিন হাত পাখা দেখতে খুব ভাল লাগছিল, বর্তমান সময়ে এই হাত পাখার মূল্য অনেক কমে গেছে, কিন্তু একটা সময় গরম দূর করার জন্য একমাত্র এই হাত পাখা ব্যবহার করা হত, বিশেষ করে যখন গ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুত ছিল না।

হাটের এক পাশে কয়েকজন হকার বসে, তার মধ্যে একটা হকার খুব প্রসিদ্ধ, তার ওখানে সব থেকে বেশি মানুষ থাকে, কারণ সেখানে মানুষকে বিভিন্ন ভাবে বিনোদন দেওয়া হয়, বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি হকাররা তাদের ঔষধ বিক্রি করে থাকে, অনেক মানুষ দ্বাড়িয়ে থেকে সেগুলো উপভোগ করে।

photo_2_2024-09-05_00-38-40.jpg
photo_12_2024-09-05_00-38-40.jpg

প্রতি বুধবারে এই হাটে যমুনা নদীর বিভিন্ন ধরণের অনেক মাছ পাওয়া যায়, আজকে যমুনা নদীর ছোট বড় অনেক মাছের পাশাপাশি অনেক ইলিশ মাছ দেখা গেল, এই হাটে সাধারণত ইলিশ মাছ খুব কম দেখা যায়, কারণ যমুনা নদীতে ইলিশ মাছ পাওয়া যায় না, ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ, আমাদের দেশে ইলিশ মাছের দাম অনেক বেশী।

এই হাটে অনেক মিষ্টির দোকান দেখতে পাবেন, তার মধ্যে ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি হচ্ছে জেলাপি, আপনি এই হাটে গরম অনেক খাবার পাবেন, বিশেষ করে পেয়াজু, গুলগুলি, এগুলো আমাদের আঞ্চলিক খাবারের নাম। এই হাটে প্রচুর পরিমাণে হাঁস মুরগি কবুতর পাওয়া যায়। মাছ ধরার জন্য বিভিন্ন ধরনের জাল পাওয়া যায়, কৃষকদের জন্য কৃষিকাজের সকল সরঞ্জাম পাওয়া যায়। কাঠের বিভিন্ন ধরনের ফার্নিচার পাওয়া যায়।

বর্তমান সময়ে জমিতে ধান চাষ করা শুরু হয়েছে, এই জন্য এই হাটে সব ধরনের ধানের চারা পাওয়া যায়, বৃষ্টির কারণে হাটের এক পাশে পানি জমে গেছে, যেখানেই কেউ বসতে পারছে না, পানি না থাকলে ঐ জায়গাতেও হাটের মানুষ বসত।

photo_10_2024-09-05_00-38-40.jpg
photo_14_2024-09-05_00-38-40.jpg

এই হাট পরিচালনা করার জন্য কমিটি রয়েছে, যারা দোকান পতি একটা নির্দিষ্ট ভাড়া নিয়ে থাকেন, যেটাকে আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় খাজনা বলা হয়ে থাকে, এক সময় মানুষ পায়ে হেঁটে হাটে যেত, কিন্তু এখন হাটে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন যানবাহন পাওয়া যায়।

আজকে সম্পূর্ণ হাট ঘুরেছি এবং হাটের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছবি সংগ্রহ করেছি, আরও অনেক ছবি ছিল যেগুলো আর আপনাদের সাথে শেয়ার করছি না, ঐতিহ্যবাহী এই হাটের কথা লিখে শেষ করা যাবে না, তাই এখানেই শেষ করছি।

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iPJL81FSnaUvBWcD5iZTFpjf9ezxs3kiupVWRKF61XuqhasvCtC1JRTK9P6Sz7YNnUaWYABNiuL.png

ধন্যবাদ সবাইকে আমার আজকের পোস্ট পড়ার জন্য।

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iPJL81FSnaUvBWcD5iZTFpjf9ezxs3kiupVWRKF61XuqhasvCtC1JRTK9P6Sz7YNnUaWYABNiuL.png

Device Used
Camera
Location
Short by
Samsung Galaxy A52 5G
64M camera
Bangladesh
@mahmud552

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

বেশিরভাগ গ্রাম গঞ্জে বুধবারেই হাট বসে। আপনাদের ওখানেও বুধবারে হাট বসেছে। হাটে সব রকমের জিনিসপত্র পাওয়া যায়। আপনাদের হাটে ও দেখা যাচ্ছে সব রকম জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে। আপনি হাট বসার সুন্দর সুন্দর ছবি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। সুন্দর হাটের গল্প শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

প্রতি সপ্তাহে বুধবারের সবাই এই বড় হাটের জন্য অপেক্ষা করে, আমাদের এই হাটে সব ধরনের জিনিস পাওয়া যায়, আমি এই বুধবারে পুরো হাট ঘুরে দেখেছি, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্টটি পড়ার জন্য এবং সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

"ধন্যবাদ সকলের! 🙏️ আমি তোমাদের জন্য আজকের হাটের ছবিগুলো শেয়ার করতে পেরে খুশি! 🌴 এই সম্পূর্ণ আলোচনার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

তাহলে, এটা থেকে শেষ! 😊 সর্বোচ্চ ভোট দিন! 🙌

উপযোগী আন্ডার লাইন

@xpilar.witness-এর জন্য ভোট দেন! 🤩 কাজে চলুন সাহায্য করুন: https://steemitwallet.com/~witnesses

আমি এবং আমার টিম প্রতিদিন, আমরা Steem community-এর সফলতায় অবদান রাখতে কাজ করি! 🙌

আপনার ভোট দিয়ে, আমরা এই লক্ষ্যটি অর্জনের উপরে চলতে পারি! 🌈

স্বচ্ছতা নোট

এই ভগবান দিয়ে, আমি @xpilar.witness-কে নান্দনিক ধরণে উপস্থাপন করতে চাই।

বাংলাদেশের হাট অনেকদিন পর আপনার মাধ্যমে দেখতে পেলাম যেটা সত্যিই অনেক ভালো লাগা কাজ করছে বিশেষ করে আপনার উঠানো বাহারি রঙের হাতপাখার ছবি দেখে মন ভরে গিয়েছে।

আমাদের এলাকায় পহেলা বৈশাখীতে এমন বাহারে রঙের হাতপাখার হাট বসে। ভাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ রতনকান্দি হাটের অনেক বিষয়ে আমাদের কাছে শেয়ার করার জন্য ভালো থাকবেন নিত্যনতুন এমন আর্টিকেল উপস্থাপনা করবেন যাতে করে আমরা আপনার লেখা পড়ে উপকৃত হতে পারি।

সপ্তাহে প্রতি বুধবার আমরাই হাটে যাই, আমাদের এই হাঁটে সব ধরণের জিনিস পাওয়া যায়, হাত পাখাগুলো দেখতে সত্যিই অনেক সুন্দর ছিল, অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্টটি পড়ার জন্য এবং সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

হাতপাখা আমার কাছে অনেক পছন্দনীয় কেননা প্রিয় মানুষের হাত পাখার বাতাসে প্রাণ জুড়ে আসে এটি যেমন সত্য তেমনি তালপাতার বানানো হাত পাখার বাতাস খুবই ঠান্ডা শীতল হয়ে আসে সারা শরীর। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার কমেন্টে পড়ে খুব সুন্দর একটি রিপ্লাই করার জন্য ভালো থাকবেন।