চা বিক্রেতা সুজনের সফলতার গল্প

in hive-120823 •  2 years ago 

হ্যালো বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

tea-g635c586a3_1920.jpg

source

আজকে অনেকদিন পর সুজনের চায়ের দোকানে চা খেতে গিয়েছিলাম। তার চায়ের দোকানে এখনো জীর্ণশীর্ণ হলেও ব্যবসায় সে দারুন লাভবান হয়েছে। দোকানে খুব বেশি বিনিয়োগ করতে হয়নি, এখন যে খুব বেশি পুঁজি খাটাতে হয়েছে তা কিন্তু নয়। সামান্য কিছু রুটি বিস্কুট ও কয়েকটা চায়ের কেটলি। আর বর্তমানে গাভীর তরল দুধ বিক্রির ব্যবসা সংযুক্ত হওয়ায় একটি ফ্রিজ কিনেছে।

এই সামান্য পুঁজিতে সে প্রতিদিন মোটা অংকের টাকা ঘরে নিয়ে যেতে পারে। সঠিক সংখ্যা সে বলতে পারেনি তার পরেও ধারণা করা যায় প্রতিদিন সে ৫০০-১০০০ কাপ চা বিক্রি করে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সবকিছুর দাম যখন ঊর্ধ্বমুখী তখনও সুজনের চায়ের দাম মাত্র ৫ টাকা। পাঁচ বছর আগেও যা দাম ছিল এই সময়ে এসে সে এখনো একই দামে চা বিক্রি করে। তার দৃষ্টিকোণ থেকে দাম কম রেখে যদি বিক্রয় বেশি করা যায় তাহলে লাভ বেশি হবে। অশিক্ষিত হলেও ব্যবসার মূল মন্ত্র সে শিখে ফেলেছে। অল্প লাভে বেশি বিক্রি এটাই হচ্ছে ব্যবসার মূল চাবিকাঠি। এটা যে ব্যবসায়ী বুঝতে পারে সেই জীবনে সফলতার মুখ দেখতে পায়।

20221226_013217.jpg

এই হচ্ছে সুজনের চায়ের দোকান। বর্তমানে সন্ধ্যার পর চারিদিকে কুয়াশায় সাদা হয়ে যায় তাই রাতের বেলা ফটোগ্রাফি করলে ঘোলাটে দেখায়। আমার ফটোগ্রাফি গুলো দেখে নিশ্চয়ই কিছুটা আন্দাজ করতে পারছেন। যাইহোক আজকে ভিতরে না বসে সুজন যেখানে চা বানায় সেখানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছি আর সুজনের সঙ্গে গল্প মারছি। সুজন ভেতরে কাস্টমার সামলাচ্ছে আর মাঝে মাঝে আমার সঙ্গে তাল মিলাচ্ছে। এই চা এর ব্যবসা করে ইতিমধ্যে সুজন ছাদ পেটানো একটি বাড়ি করেছে। বাড়িটি অবশ্য সে এক তলাই করতে পেড়েছে চার-পাঁচটা রুম নিয়ে। সাথে বেশ কিছু ফসলি জমি কিনেছে। সেখান থেকে প্রতিবছর ধান ও ভুট্টা সহ আরো বেশ কিছু ফসল তার ঘরে আসে।

20221226_013149.jpg
20221226_013040.jpg

ছবিতে সুজন ও সুজনের ভাই গোপাল এই দুজন মিলেই পালাক্রমে চায়ের দোকান সামলায়। এখন তারা ব্যবসা দিয়ে অনেক ভালো কিছু করেছে। অথচ কয়েক বছর আগেও তাদের অবস্থা অনেক শোচনীয় ছিল। পারিবারিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে তার বাবা ঠিকমতো সংসার চলতে পারতেন না। যার ফলে এরা দু ভাই ছোটবেলা থেকেই বাজারে এক চায়ের দোকানে কাজ করতো। সেই দোকানে আমি সবসময় চা খেতাম। স্বাভাবিকভাবেই আমার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাছাড়া আমি ওদের অনেক বিষয়ে সাহায্য সহযোগিতাও করেছিলাম। সে কারণেই হয়তো আমি গেলে একটু বেশি খাতির যত্ন করতো।

বেশ কয়েক বছর একই দোকানে কাজ করার ফলে তাদের সামান্য কিছু সঞ্চয় হয়েছিল। আমি একদিন তাদের ডেকে তাদের পারিবারিক অবস্থা সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পেরেছিলাম। তখনই আমি তাদের দুই ভাইকে পরামর্শ দেই ছোটখাটো একটা জায়গা দেখে চায়ের দোকান দিতে। আমি হয়তো খুব হালকা ভাবেই তাদের কথাটা বলেছিলাম। কিন্তু আমার কথাটা তারা বেশ সিরিয়াসলি নিয়েছিল। ঠিক এক বছরের মাথায় তারা ছোট্ট একটা জায়গা নিয়ে চায়ের দোকান করলো। তাদের ব্যবহার ও ভালো চায়ের সুনামের কারণে খুব দ্রুতই ব্যবসার প্রসার ঘটে।

কারণ এই বাজারেই তারা দীর্ঘদিন অন্য আরেকটি দোকানে কাজ করতো। ফলে সবার কাছে বেশ পরিচিত ও তাদের হাতের চায়ের সুনাম ছড়িয়েছিল। সে কারণেই ব্যবসা দাঁড় করাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি।

20221226_013108.jpg
20221226_013122.jpg

সুজনের দোকানে লাল চা ও গাভীর দুধের চা এই দুই রকম চা পাওয়া যায়। তবে তুলনামূলক লাল চায়ের চাহিদাই অনেক বেশি। সুজন লাল চা অনেক ভালো তৈরি করে তাই দুধ চায়ের চেয়ে লাল চায়ের গ্রাহক অনেক বেশি। আর স্বাভাবিকভাবেই লাল চায়ে খরচ কম থাকার কারণে লাভটাও অনেক বেশি হয়।
যাইহোক যে কারণই থাকুক না কেন এখন পর্যন্ত সুজনের চায়ের দোকানে গেলে আমাকে যথেষ্ট সম্মান করে। তারা হয়তো মনে করে আমি তাদের ছোট্ট একটা পরামর্শ দেয়াতে তারা এ পর্যায়ে এসেছে। আমি এখনো মন থেকে প্রার্থনা করি তাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষ যেন সব সময় ভালো থাকে।

পরিশেষে একটি কথাই বলতে পারি কোন কাজকে ছোট করে দেখা উচিত নয়। আমরা যে কাজই করি না কেন সততা ও নিষ্ঠার সাথে সেই কাজ করে যাওয়া উচিত। ব্যবসায় সফলতা পাওয়ার জন্য ধৈর্য ও একাগ্রতা একান্ত প্রয়োজন। সুজনের ব্যবসায় এই সফলতা একদিনে আসেনি। সে যদি ধৈর্য না ধরে ব্যবসা বন্ধ করে আবার কোন দোকানে কাজ করতে যেত তাহলে কখনোই এই সফলতার মুখ দেখতে পেত না। শুরুর দিকে তার ব্যবসা মোটেও ভালো যায়নি। তাই আবারও বলতে পারি আমরা যে কাজই করি না কেন সেখানে নিষ্ঠা, সততা ও ধৈর্য্য থাকা বাঞ্ছনীয়।

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

ডিভাইসস্যামসাং গ্যালাক্সি A-10
ফটো@mayedul
লোকেশনখলিলগঞ্জ, কুড়িগ্রাম

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif

3q52Dkr5nBe3kDiHrk4F3qdzX6E5VuVcCcF7TDQDco37AUsMDxK7aJ1v5hKA8jfHHgL9ABnDXogr1.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

এক অসাধারণ সফলতায় সুজনের চায়ের দোকান। আসলে দোকানদার ভালো হলে দোকানের মানও বৃদ্ধি পায়।
আমি এরকম অনেক চা খেয়েছি যার চায়ের কাছে অন্য চায়ের দোকানগুলো ধারেই যেতে পারে না, অথচ তারা ৭+ টাকা কাপ নেয়,
কিন্তু যারা ভালো মানের চা ওয়ালা তারা এখন পর্যন্ত ও সেই ৫ টাকায় বিক্রি করছে।

আমাদের পাশের গ্রামে এক চাচা চা বিক্রি করেন পুরা থানার মধ্যে এমন চা বানাতে পারেন না কিন্তু তিনি ৫ টাকা দাম নেন। আমি খুশি হয়ে ১০ টাকা দেই।

ভালো লাগলো আপনার পোস্ট পড়ে, আসলে তার এই সফলতার পিছনে আপনার অবদান আছে বলে খুব খুশি হলাম।
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আসসালামু আলাইকুম

Congratulations!
This comment has been upvoted through steemcurator07.
We support quality posts and comments anywhere and with any tags.
Curated by : @sduttaskitchen

TEAM 4 CURATORS

Thank you ❤️❤️

Loading...

অনেক ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে। সততা ও নিষ্ঠা দেরীতে হলেও মানুষকে উন্নত স্থানে পৌঁছে দেয়, আরও একবার তার বাস্তব উদাহরণ দেখতে পেলাম। সুজন ভাই আরও উন্নতি করুক জীবনে সেই শুভকামনা রইল। ভালো থাকবেন। আপনার দিনটি শুভ হোক।