আসসালামু আলাইকুম।আশাকরছি সবাই ভালো আছেন,আমিও আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। ইন্ডিয়ান বাসী, বাংলাদেশ বাসী,সবাইকে জানাই আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও সবার প্রতি আমার ভালবাসা রইল।
- দ্বিতীয় পর্বে আমরা পড়েছিলাম হেলাল এর পায়ে অনেক ব্যথা পেয়েছে, এবং হেলাল ভয় পেয়েছে।
এরপর সবাই মিলে হেলাল কে বলছে, আরে ওই পাশে কিছু নাই । তুই ভয় পাইছদ দোস্ত , হেলাল বার-বার বলছে আরে নারে ভাই , আমি দেখছি ওইখানে জানি কে আছে।
হঠাৎ করে হেলাল সবাইকে বলছে, ওই রফিক ভাই নাই, উনি কই গেল, সবাই বললো হয়তোবা চলে গেছে। করিম বলছে, রফিক ভাই তো আমাদের সবাইকে বলল, উনার বাড়ি এই পাহাড়ের ওই পাশে একটা গ্রাম আছে। রফিক ভাই ওই গ্রামের বাস করে । হেলালের কথা সবাই পাত্তা দিল না।
এখন সবাই চিন্তা করতেছে রাত হওয়ার আগে এই পাহাড়ের চূড়ায়, মন্দিরের একটু দূরে কোথায় একটা ক্যাম্পিং করবে। করিম, জাফর, সজল, মিনহাজ, সবাই মিলে ঘর বানানোর জন্য কাজ করছে, আর ওইদিকে হেলাল বসে রয়েছে , পাহাড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য অনুভব করছে, কিছুক্ষণ পরে সন্ধ্যা হয়ে গেল।
সবাই পাহাড়ের আশেপাশে থেকে,গাছের ঠাইল, শুকনা পাতা, জোগাড় করে, তারা আগুন জ্বালাবে, আর সারারাত মজা করবে এবং কালকে সকাল বেলা তারা কই যাবে এর প্ল্যান করছে। হেলাল বলছে সকাল হলে আমি বাসায় চলে যাব তোরা সবাই ঘুরিস । সবাই চুপচাপ হয়ে গেলো হেলালের কথা শুনে, আর সবাই সান্তনা দিচ্ছে হেলাল কে। করিম এই সব কথা শুনে তাকিয়ে দেখলো চারদিকে নির্জন এক পরিবেশ কোথাও কেউ নেই। মন্দিরে একজন পন্ডিত ছিল উনি বাসায় চলে গেছে। উনি বলেছিল তোমরা এই খানে ঘর তৈরি কইরোনা না, এই জায়গাটা কিন্তু ভালো না, কে শুনে কার কথা!
রফিক ভাইও বলেছিল আবার হেলাল কি জানি দেখেছে, এর জন্য হেলাল ভয় পেয়েছে, করিম এই সব কিছু নিয়ে চিন্তা করছে একা-একা আর ভাবছে তারা কি এখানে ক্যাম্পিং করে ঠিক করেছে। যাইহোক এখন অনেক রাত হয়ে গেছে, এই সব ভেবে এখন আর কোন লাভ নেই। আর হেলালের পায়ের অবস্থা অনেক খারাপ, হেলাল কে নিয়ে এই রাত্রের বেলায় পাহাড়ের নিচে নামাও অসম্ভব। পাশের থেকে সজল, জাফর ওরা বলছে কিরে করিম কি চিন্তা করতাছিস। করিম বলল, বন্ধু আমরা কি এই খানে ক্যাম্পিং করে ঠিক করেছি , হেসে জাফর আর সজল বলছে তুই কি বন্ধু ভয় পেয়ে গেছিস হেলালের মত, তুই না এই খানে এসেছিস ভৌতিক কিছু জানার জন্য। আরে বন্ধু কিছুই নাইরে এই সব আমাদের মনের ভয়।
সবাই এখন আগুন ধরানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে গেছে, কেননা সারাদিন পাহাড়ে হেঁটে পা ব্যথা হয়ে গেছে । অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে সবাই, আর অনেক ক্ষুধা ও লেগেছে। তারপর সবাই মিলে একটা মুরগি বারবিকিউ করলো, সবাই মিলে গানের কুলী খেলছে, তারপর মুরগিটা যখন সম্পন্নভাবে হয়ে গেলো , তখন সবাই মিলে কয়েকটা ছবি তুলল আর সবাই একসাথে রাতের খাবার খাইলো।
এখন বাজে রাত ৮:৩০ মিনিট, চারদিকে নির্জন কোন শব্দ নেই দূর থেকে ভেসে আসছে শিয়ালের শব্দ! এই শব্দ শুনে ভয় পাচ্ছে হেলাল, হেলাল কে নিয়ে আবার সবাই হাসি ঠাট্টা করছে, হেলাল একটু ভীতু টাইপের তার ভিতরে পায়ে অনেক জখম হয়েছে। হঠাৎ করে সজল বলছে ভাই আমি প্রসাব করব, আমার সাথে কেউ একটু দাঁড়াবি, এই কথা শুনে আবার করিম জাফর, মিনহাজ, ওরা সবাই বলছে কিরে তুইও কি শিয়ালকে ভূত ভাবস ! আরে না, সজল বলছে; আমি হেলালের মত না বুঝলি, এই বলে সজল ওদের ক্যাম্পিং থেকে একটু দূরে যেয়ে, প্রকৃতি সৌন্দর্য অনুভব করতে - করতে প্রসাব করল। সজল প্রসাব করার সময় চারদিকে তাকাচ্ছে বার-বার আর লাইট মারছে, হঠাৎ করে সে তার সামনে যখন লাইট মারলো, সে দেখলো অদ্ভুত একটা মানুষ চিৎকার মেরে বেহুশ হয়ে গেল সজল । আমরা যাকে বলি সেন্সলেস!
এই চিৎকারের শব্দ শুনে সকল বন্ধু-বান্ধব সজলের দিকে আসলো। সবাই এসে দেখে সজল অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে রয়েছে। সবাই সজলকে ধরে ক্যাম্পিংয়ে নিয়ে গেল, এখন সবার মনে একটু করে ভয় ঢুকতে শুরু করলো। হেলাল তো কান্নাকাটি করা শুরু করল, আমরা আর বাঁচবো না রে, জাফর, আমাদের মেরে ফেলবে , আমরা আর বাঁচবো না। এই বলে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করছে হেলাল। এর মধ্যে জাফর বলছে, চুপ কর বন্ধু আমাদের কিছুই হবে না ইনশাল্লাহ, আমাদের কিছু হবে না। সবাই মিলে সজলের চোখে পানি ছিটাইলো,
সজল চোখ খুলে কান্নাকাটি করছে, আমিও হেলালের মত একটা অদ্ভুত মানুষ দেখেছি, মুখে তার ব্যান্ডেজ, দুই চোখ গুলো যেন ঝলসে গেছে।
ওই জানি আমাদেরকে কিছু বলছে, তোরা সবাই বাঁচবি না। এই কথা শুনে হেলাল আর সজল তাঁরা এক সাথে কান্নাকাটি করছে। হেলাল বলছে, বন্ধু আমারও বিশ্বাস আমরা কেউ বাঁচবো না, তখন করিম ফোন বের করল দেখে নেটওয়ার্ক নাই। সবাই তাদের ফোন বের করে দেখলো, কেউর ফোনে নেটওয়ার্ক নাই!
সবাই একটু টেনশন এ পড়ে গেল, এখন জাফর, সবাইকে বলছে তোরা একটু থাম ভাই কিছুই হয় নাই । সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, আজকের রাতটাই আমরা এখানে আছি। সকাল হলে আমরা সবাই পাহাড় থেকে নেমে যাব। আর আশেপাশেও কেউ নাই, এই পুরো পাহাড়ে আমরা একা!
জাফর সবাইকে সান্তনা দিচ্ছে, আর সবাইকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে, সবাইকে বলল জাফর, তোরা কেউ না বলে , ক্যাম্পিং থেকে বের হবি না। এর ভিতরে পাশ থেকে করিম সবাইকে বলছে, আমরা সবাই জোরে, জোরে, চেঁচিয়ে-চেঁচিয়ে কথা বলি আয়! তখন সজল বলছে চেঁচিয়ে কথা বললে কি হবে, করিম বলছে; চেঁচিয়ে কথা বললে বুকে সাহস বাড়ে । সবাই করিম এর কথা শুনে জোরে-জোরে চিৎকার করে কথা বলা শুরু করল ।
তারা অনেক ক্লান্ত থাকায়, তারা হঠাৎ করে সবাই ঘুমিয়ে গেল, এরপরে সজল হঠাৎ করে দেখছে দূর থেকে তার মা তাকে বলছে! এই সজল বাহিরে আয়, তোর সাথে কথা আছে তুই বাসা থেকে না বলেই, এই খানে ঘুরতে চলে এসেছিস । আমরা তরে খুঁজতে- খুঁজতে এই খানে চলে আসলাম। সজল ঘুম থেকেই উঠে দাঁড়াইলো এবং সে ঘুম-ঘুম চোখে ক্যাম্পিং থেকে বের হয়ে যাচ্ছে আর ঐদিকে সবাই ঘুমাচ্ছে। সজল যখন ক্যাম্পিং থেকে ২০০ গজ দূরে গেল, পাহাড়ের এক কোনায়, হঠাৎ করে সজল এর ঘুম ভেঙ্গে গেল! সজল তাকিয়ে দেখলো চারদিকে, ওই ছাড়া কেউ নেই ওর আম্মা যে ওকে ডাকছিল ওটা স্বপ্ন ছিল । সজল যখন পিছনে তাকাইলো হঠাৎ করে দেখে, এক মৃত মানুষ কি বিভস্য চেহারা, সজলের সামনে হঠাৎ করে চলে আসলো, সজল ভয় পেয়ে পাহাড় থেকে পড়ে গেল। অনেক জোরে একটা চিৎকার দিল মা বাঁচাও!
এই চিৎকারে শব্দ শুনে চারদিকে ঘুমন্ত পাখিরা উড়ছে, আর ওই পাশে শিয়ালরা ডাকাডাকি শুরু করছে। সজলের এই চিৎকারের শব্দ শুনে সবাই ঘুম থেকে উঠে গেল । সবাই ক্যাম্পিংয়ের ভিতর তাকেই দেখলো সজল নেই! কোথাও সজল নেই । তারা ক্যাম্পিং থেকে দৌড় দিয়ে সবাই বাহিরে বের হলো, হেলাল তো এমনিতে হাঁটতে পারে না , তারপরও হেলাল বাহিরে সবার সাথে বের হলো । লাইট দিয়ে চারদিকে সবাই খোঁজা-খুঁজি করছে, কোথাও সজল নেই। সবাই চিৎকার করে বলছে সজল, ওই সজল তুই কই ভাই । কোথাও সজল নেই, চারদিকে শুধু শিয়ালের শব্দ শোনা যাচ্ছে । এই সব দেখে হেলাল অনেক কান্নাকাটি করছে, আর সবাইকে বলছে আমরা আর বাঁচবো না রে ! আমাদেরকে মেরে ফেলবে, আমাদেরকে মেরে ফেলবে !
রাত তখন ১১ঃ৩০ বাজে, সজলকে সবাই খোঁজা-খুঁজি করল প্রায় এক দেড় ঘন্টা। কোথাও সজলের কোন সারা শব্দ নেই। চারদিকে অন্ধকার আর ঘন কুয়াশা আর শিয়ালের ডাকাডাকি এত তীব্র হয়ে গেল যা দূর থেকে শুনে ভয় লাগছে। সবাই তারপর ক্যাম্পিং চলে আসলো, সবাই কান্নাকাটি করছে আল্লাহর কাছে দোয়া চাচ্ছে । আমাদেরকে বাঁচাও, হে আল্লাহ আমাদেরকে বাঁচাও।
ক্যাম্পিং এর ভিতরে সবাই ঢুকে চিন্তা করছে, আর কেউ ঘুমাবে না, সবাই সারারাত এই ভাবেই জেগে থাকবে । আর যদি মরতে হয় সবাই একসাথে মিলেমিশে মরবে। করিম, হেলাল, জাফর, মিনহাজ, সবাই মিলে তাদের মা-বাবার কথা ভাবছে। আর হয়তোবা তাদের মা-বাবাকে তারা দেখতে পারবেনা, এটা হয়তোবা তাদের শেষ রাত। তারা সবাই অনেক ডিপ্রেশনে চলে যায়, তারা বুঝছে না তারা কি করবে এখন, তাদের মধ্যে জাফর একজন সাহসী ছিল । খুব চালাক চতুর একটি ছেলে, কিন্তু এখন জাফর ও চুপচাপ বসে রয়েছে।
আমার যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।