ছিন্নমস্তা পূজা

in hive-120823 •  last month 

নমস্কার বন্ধুরা, সকলে কেমন আছেন ?আশা করছি সকলে ভালো আছেন। আজকে নতুন একটা পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের মাঝে। আজকে আমি মেলার কিছু গল্প শেয়ার করবো।

IMG20241217124039.jpg

এখন শীতকালের মরশুম চলছে। শীতকাল মানেই চারিদিকে মেলার উৎসব চলে। আমিও চলে এসেছি বাপের বাড়িতে মেলা দেখবার জন্য। এই মেলাটি একমাস ব্যাপী চলে। অগ্ৰহায়ন মাসে শেষের দিকে মেলা শুরু হয়। পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময়ে মেলা শেষ হয়। এই মেলা মায়ের পুজোকে ঘিরেই হয়। তবে এখানকার মায়ের রূপ একদমই আলাদা। প্রতিমার মুন্ডু কাটা থাকে। কথিত আছে, একদিন সকালবেলায় পাড়া প্রতিবেশীরা মন্দিরে গিয়ে দেখেন প্রতিমার মুন্ডু নেই। প্রতিমার এইরকম অবস্থা দেখে সকলে প্রতিমাটি কে নদীতে বিসর্জন দিয়ে দেন। কিন্তু মুন্ড হীন অবস্থাতেই প্রতিমার পুজো করতে হবে বলে রাতে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন। এই পুজো টি বাংলাদেশের মেহেরপুরের পূজা।

IMG20241217124356.jpg

দেশভাগের সময় বেশিরভাগ মানুষজন বাংলাদেশ থেকে বেতাই আর তেহট্ট সংলগ্ন নামক এলাকায় চলে এসেছিলেন। ওই খানেই বসবাস শুরু করেছিলেন।তখন ওইখানের মানুষ জনই ছিন্নমস্তা কালী পূজা শুরু করেন। পূজাটি খুব ধুমধাম সহকারেই পালন করা হয়। প্রতিমা টি বিসর্জন হয় পৌষের সপ্তমীতে। পূজাটি ঘিরে বিরাট মেলার আয়োজন করা হয়। সব রকমের দোকান বসে। প্রত্যেক মঙ্গলবার আর শনিবার পূজার ধুমধাম হয়। এছাড়া প্রত্যেক দিনই মন্দিরে পূজা করা হয়। ওই জায়গাটিতে প্রথমে একটা বিরাট বট গাছ ছিল ।তার পাশেই ছোট্ট একটা মন্দিরে পূজা করা হতো।

IMG20241217124351.jpg

কিন্তু আস্তে আস্তে মানুষের অনুদানের টাকায় মন্দিরটি এখন ভালোই বড় করা হয়েছে। প্রতিমা টি র মুন্ডু কেটে নিজের হাতেই ঝোলানো থাকে। আর মায়ের গলা দিয়ে রক্তগুলো পড়ে সেই রক্ত দুই পাশে জয়া আর বিজয়া থাকে তাদের মুখে রক্তগুলো পড়ে। মা দুর্গার ছায়া ছিলেন ছিন্নমস্তা। কথিত আছে একসময় অসুরের অত্যাচারে হাত থেকে বাঁচার জন্য ছিন্নমস্তা তার দুই সুখী জয়া বিজয়া কে নিয়ে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন। যুদ্ধ করতে করতে জয়া বিজয়া দুজনেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। দুজনেরই খাবারের প্রয়োজন ছিল। তখন জয়া বিজয়া দেবী ছিন্নমস্তা কে খাবারের বন্দোবস্ত করার জন্য বলেছিল। কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে কোন খাবার না থাকায় দেবী ছিন্নমস্তা নিজের গলা কেটে জয়া বিজয়া কে নিজের রক্ত খেতে বলেছিল। শুধু জয়া বিজয়া খেয়েছিল এমনটা না দেবী ছিন্নমস্তা নিজের রক্ত পান করেছিল।

IMG20241217124410.jpg

ছিন্নমস্তার গলার কেটে তিন দিক থেকে রক্ত পড়ছিল। এগুলো সব কিছুই আমরা গল্পে পড়েছি। কতটা সত্য তা আমার জানা নেই। আমরা গত মঙ্গলবার এসেছিলাম ছিন্নমস্তা মায়ের কাছে পুজো দিতে। ছোট থেকে সেভাবে কোনদিন মায়ের দর্শন করিনি। বাসে করে হয়তো যাতায়াতের পথে মেলা গুলো চোখে পড়তো। কিন্তু দু বছর আগে একবার শাশুড়ির সাথে এসেছিলাম পুজো দেওয়ার জন্য। এ বছরের হঠাৎ মায়ের মন্দিরে পুজো দেওয়ার জন্য চলে এসেছিলাম। আমি মাসি ,মেসো আর দাদার দুই ছেলে ,মেয়ে। সকালবেলার দিকে মন্দিরে প্রচন্ড ভিড় থাকে। এই মন্দিরে আবার অনেকে গোপাল মানসিক থাকে। অনেকেই দেখলাম মাথায় করে গোপাল নিয়ে গিয়ে প্রতিমার কাছে দিচ্ছে। হয়তো তাদের সকলেরই মনস্কামনা পূর্ণ হয়েছে।

IMG20241217124042.jpg

যাইহোক আমরা খানিকক্ষণ মন্দিরে পূজা দর্শন করার পর বাইরে খানিকক্ষণ মেলায় ঘোরাফেরা করেছিলাম। মেলাটা অনেকটাই বড় হয় ।তাই পুরো মেলা ঘুরে দেখার সময় হয়নি ।এই মেলাতে অনেক দূর দূর থেকে মানুষ আসে পূজো দেওয়ার জন্য আবার প্রতিমা দর্শনের জন্য। এই মেলা সম্পর্কে অনেক ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে ।আমি যে টুকুনি জানি সেই টুকুনি আপনাদের মাঝে শেয়ার করার চেষ্টা করলাম। এই মেলা কি হয় তেহট্ট নামক গ্ৰামে। প্রত্যেক বছর একই দিনে এই মেলাটি বসে। শেষের ছবিটা ফোনে তোলা ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট নেওয়া।

IMG_20241219_202845.jpg


আজ এইখানে শেষ করছি। আবার পরবর্তী কোনো গল্প নিয়ে হাজির হব আপনাদের মাঝে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

পোস্টটি পড়ে সত্যিই অনেক কিছু নতুন জানতে পারলাম। ছিন্নমস্তা পূজা এটা আমাদের অঞ্চলে দেখা যায় না। তাই এই সম্বন্ধে আমি বেশি জানিও না ।

শীতের দিন গ্রামগঞ্জে ও বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় বিভিন্ন মেলা বসে সাথে যাত্রাপালা বসে । এবং সেই মেলাতে গিয়েছেন ।এই মায়ের পুজোর উপলক্ষে মেলা বসবে মাসব্যাপী। আপনার সুন্দর একটি মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।