গ্ৰামের বাড়ির গল্প

in hive-120823 •  4 months ago 

কেমন আছো সবাই? আশা করি ভালো আছো। সুস্থ আছো। আমি ও ভালো আছি।আজ তোমাদের আমার শ্বশুর বাড়ি সম্পর্কে বলব।এর আগে আমার বাপের বাড়ি সম্পর্কে বলেছিলাম। শশুর বাড়ির গল্প আশা করি ভালো লাগবে।

আমার বাপের বাড়ি ও গ্ৰামে হলে আমাদের ঘর-বাড়ি তেমন ভালো না। আমাদের অবস্থা ও তেমন ভালো ছিল না। আমাদের জমি-জায়গা কিছুই নেই। বাবা অন্যের জমি নিয়ে ভাগে চাষ করতো। এছাড়াও মাঠে লেবার খাটতো। বাবা কে খুব কষ্ট করতে দেখেছি। তাই হয়তো আমি ও কষ্টের মর্মটা একটু হলেও বুঝি।

IMG20240519180711.jpg

আমার বাপের বাড়ি থেকে শশুর বাড়ির অবস্থা মোটামুটি ভালো। কারণ শশুর বাড়ির বেশির ভাগ মানুষজন চাকুরীজীবী। তাই ওদের বাড়ি ঘর বেশ ভালো।গ্ৰামে যে বাড়িটা রয়েছে সেটা আমার শ্বশুর মশাই করেছে। এখন যেহেতু আমার কাকা শশুর ওই বাড়িতে থাকে। তাই উনি উনার মত করে বাড়িটাকে তৈরি করে নিয়েছে। শশুর ,শাশুড়ি মাঝে মাঝে যায় ওই বাড়িতে বেড়াতে। আমার খুব একটা যাওয়া হয় না। ওই বাড়িতে আমার একটা জিনিস খুব ভালো লাগে । সবার মধ্যে একতা আছে । যেটা আমার বাপের বাড়িতে নেই।সবাই মিলেমিশে থাকতে ভালোবাসে। যেটা আমাদের শহরাঞ্চলে খুব কম দেখা যায়। আপনারা প্রত্যেকেই জানেন আমরা শহরে বাড়ি কিনে ওই বাড়িতেই থাকি। তাই গ্রামের বাড়িতে খুব একটা যাওয়া হয়না।

IMG20240520101233.jpg

এবার বলি আমাদের বাড়ির নাম অন্নপূর্ণা ভবনের গল্প। এর আগের পোস্টে আপনারা শুনেছেন ঠাকুমার বাড়ি ছিল বাংলাদেশে । ঠাকুমার এখন বয়স ৯৯ বছর। কিছুদিন পরে ঠাকুমার বয়স হবে ১০০ বছর ।আমার ঠাকুমা মানে (ঠাকুমা শাশুড়ি) নাম অন্নপূর্ণা বিশ্বাস ।উনার নাম অনুযায়ী ওই বাড়ির নাম হয়েছে অন্নপূর্ণা ভবন ।কারণ দাদু অনেকদিন আগেই মারা গেছেন ।তখন নাকি মাটির বাড়ি ছিল। ২০০০ সালে আমাদের দেশে এক ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল ।তারপরেই আমার শ্বশুরমশাই ওই বাড়িটি তৈরি করে। শ্বশুর মশায়ের মুখ থেকে শোনা গল্প। ঠাকুমার নাম যেমন অন্নপূর্ণা ।তেমনি ঠাকুরমা সত্যিই অন্নপূর্ণার মত। আমাদের বাড়িতে কোন অতিথি আসলে কোনদিন এসে না খেয়ে ফিরে যায় না ।ঠাকুমা নাকি আগেও করত ।এখনো আমি নিজে দেখি। যে আসে বাড়িতে বেড়াতে তাকে না খাইয়ে কখনো ফেরায় না।

IMG20240522130746.jpg

IMG20240522165536.jpg

ঠাকুমা সত্যিই খুব ভালো মনের মানুষ। আমাকে তো খুবই ভালোবাসে। এবার বলি আমাদের শ্বশুরবাড়ির গল্প। আমার শ্বশুরবাড়িতে আছে উঠানে দুটি গোলা। আগেও থাকতো গোলা ভরা ধান ।এখনো থাকে। তবে এরকম গোলা আমি বাপের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে কখনো দেখিনি। গ্রামের বাড়ি যেমন হয় চারিদিকে উঠান খোলামেলা। কিন্তু আমার শ্বশুর বাড়িটা খানিকটা ঘেরা আছে আর খানিকটা খোলামেলা। বাড়ির সামনে আছে একটা পুকুর। এই পুকুরের গল্প আপনারা আগের পোস্টে শুনেছেন।একটা বড় আম গাছ। গাছটাতে বেশ ভালোই আম এসেছে। এই গাছ থেকে ঝড়ে আম কুড়ানোর গল্প। আমি আপনাদের কাছে আগেই শেয়ার করেছি । কিন্তু এবার গিয়ে দেখলাম বাড়ির ভিতরের উঠানে আম গাছটা কেটে ফেলেছে। লেবু গাছটাও নাকি মারা গিয়েছে ।আর ছিল একটা বকুল গাছ। সেটাও মারা গেছে। দেখে একটু খারাপ লাগলো। বাড়ির ভিতরে রয়েছে আরও বিভিন্ন ধরনের গাছ। কিছু গাছ বাড়ি তৈরির কারণে কেটে ফেলেছে।

IMG20240522161812.jpg

IMG20240522165548.jpg

বাড়ির উঠানের একপাশে রয়েছে তুলসী মন্দির । সেখানে রোজ সন্ধ্যায় ঠাকুমা সন্ধ্যে বাতি দেখায়। সকাল বেলায় স্নান করে বাড়ির প্রত্যেকে তুলসী গাছে জল দেয়। বাড়িতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ।আর রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পাতা বাহারি গাছ। এছাড়াও রয়েছে অনেক ফলের গাছ। আমি বাড়ির সামনেই দেখতে পেলাম এবার কাঁঠাল গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত প্রচুর কাঁঠাল হয়েছে। আসলে আমি আগে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে বাড়ির ভেতরেই থাকতাম। বাইরে কোনদিন ঘুরে দেখিনি। কারণ আপনারা এর আগের পোস্টে জেনেছেন। আমাদের বাড়িতে একটা ব্যাংক আছে। তাই বাড়ির বাইরে সব সময় অনেক লোকজন থাকে।

IMG20240520075118.jpg

IMG20240521100353.jpg


তাই সবসময় বাইরে খুব একটা বেরোয় না। যেহেতু এইবার একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম তাই বাড়ি অনেক লোকজন এসেছিল। সেই সুযোগেই আমি বাড়ির চারপাশটা ঘুরে দেখেছিলাম। আগের পোস্টে আমি আমার বাপের বাড়িটা তুলে ধরেছিলাম। আজকের পোস্টে আমার শ্বশুর বাড়ি তুলে ধরে আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। আমার শ্বশুরবাড়িতে কিন্তু বেশি লোকজন থাকে না শুধুমাত্র ছোট কাকু ,কাকিমা , কাকুর মেয়ে আর ঠাকুমা থাকে। তবে ঠাকুমার এত বছর বয়স হলেও ঠাকুমা সব কাজ করেন একা হাতে। আমরা সবাই যখন কোন অনুষ্ঠানে একসাথে গ্ৰামের বাড়িতে বেড়াতে যায়।তখনো ঠাকুমা সব কাজ নিজে সামলায়। আজ এই পর্যন্তই থাক। আবার নতুন কোন পোস্ট নিয়ে হাজির হবো।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

অন্নপূর্ণা বাড়ির গল্প পড়ে খুব ভালো লাগলো। আপনার ঠাকুমার বয়স ৯৯ বছর খুব শীঘ্রি ১০০ হবে। সে যেন আরও অনেক দিন আপনাদের মাঝে থাকতে পারে সেই কামনা করি। খুবই সুন্দর আপনার শ্বশুড় বাড়ি। গোলা ভরা ধান, অনেক গাছ-পালার সমাহার। আরেকটি বিষয় আমার যেটি ভালো লাগলো আপনার শ্বশুড় বাড়ির আত্মীয় স্বজন সবার মধ্যে অনেক একতা রয়েছে। এটি সব পরিবারেই থাকা উচিৎ বলে আমি মনে করি। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য।

আপনি ঠিকই বলেছেন। আমরা গ্রামে না থাকলেও সবার সাথে সবার একটা একতা রয়েছে। ওই বাড়িতে যারা বসবাস করে আশেপাশে লোকজনের সাথেও সবার একতা রয়েছে। আমার পোস্টটি পড়ে কমেন্ট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

Loading...