মামার পোষা টিয়াপাখি

in hive-120823 •  4 months ago 

আপনারা সকলে কেমন আছেন? আশা করি ভালো আছেন। আজকে আমি আমার মামার বাড়ির পোষা টিয়াপাখির গল্প আপনাদের মাঝে শেয়ার করব।

টিয়া পাখি আমরা সকলেই ভালোবাসি। তবে টিয়া পাখিটি আমার মামার বাড়িতে থাকে। এখনকার দিনে বেশিরভাগ মানুষের বাড়িতেই কুকুর নয় বেড়াল। কিছু না কিছু আমরা বাড়িতে পোষার জন্য পালন করি। আবার অনেকে গাছ লাগাতে ভালোবাসে।এবার শুরু করি আমাদের টিয়া পাখি গল্প। আমার মামার বাড়িতে টিয়া পাখিটি আনা হয়েছিল। আজ থেকে প্রায় ১৩ বছর আগে।

IMG_20240728_123554.jpg

আমি তখন মামার বাড়িতেই থাকতাম । এখনো বেশির ভাগ সময় মামার বাড়ি থাকি। আগে সব সময় আমি পাখিটার সাথেই থাকতাম। পাখিটার কোন নির্দিষ্ট নাম নেই। যে যে নামে পারে ডাকে। ও ছেলে না মেয়ে ।সেটাও আমরা কেউ জানিনা। কেউ মেয়েদের নাম ধরে ডাকে। কেউ আবার ছেলেদের নাম ধরে ডাকে। পাখিটার যখন তিন থেকে চার দিন বয়স ।তখন একটা ঝড়ে নারকেল গাছের কুঠুরি থেকে পাখিটা পড়ে গিয়েছিল।

IMG_20240728_123519.jpg

তখন টিয়া পাখিটা ঠিকমতো খাওয়াও শেখেনি। আমার বড় মামার কাছে একজন মাটির কাজ করতে আসত ।সেই ছেলেটি পাখিটিকে কুড়িয়ে মামার কাছে এনে দেয়। কিন্তু আমরা ভাবছিলাম। এত ছোট বাচ্চা কিভাবে বাঁচিয়ে রাখবো। আমরা বলেছিলাম পাখিটাকে ওর মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেবার জন্য। কিন্তু ছেলেটি বলেছিল নারকেল গাছটি নাকি ভেঙে গেছে।পাখিটা আনার পর থেকে মামি পাখিটাকে খুব যত্ন করত। একটা বাচ্চাকে যেমন যত্ন করে ঝিনুকে করে দুধ খাওয়ায়। ঠিক তেমনি করেই মামি ঝিনুকে করে পাখিটাকে ছোলার ছাতু গুলে এছাড়া দুধ খাওয়াতো। এমন করেই আস্তে আস্তে পাখিটা বড় হয়ে ওঠে।

IMG_20240728_123645.jpg

কিন্তু মামা কোনদিন বাইরে থেকে তেলা কচু বলে একটা ফল হয় ।যেটা টিয়া পাখি খেতে ভালোবাসে। কিন্তু মামা কোনদিন বাইরের ওইসব ফল পাখিটাকে খাওয়াতো না। বাজার থেকে পেয়ারা কিনে নিয়ে এসে খাওয়াতো। টিয়া পাখিটা আমাদের একজন সদস্য হয়ে উঠেছিল। পাখিটা আমাদের মতনই ভাত, তরকারি সবকিছুই খায়। সকালবেলায় মামা যখন ঠাকুর পুজো করে ।তখন মামার কাছ থেকে প্রসাদ খাওয়ার জন্য চেঁচামেচি করে ।মামা যেই প্রসাদ দেয় সেই আবার চুপ হয়ে যায়। প্রসাদ বলতে একটা করে নকুল দানা।মামি তো মজা করে বলে রোজ নকুল দানা খেলে সুগার হয়ে যাবে।

IMG_20240728_123741.jpg

এছাড়া মামি যখন রান্না করে চুনো মাছ ভাজা, পণির, পাঁপড় ভাজা, ডিম ভাজা সবকিছুই পাখিটাকে খেতে দিতে হয়। না হলেই চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। কোন সময় যদি মামা ,মামির জন্য ফুচকা কিনে আনলো ।সেটা ও ওকে দিতে হবে। নয়তো ও চেঁচামেচি শুরু করে দেবে। আর অচেনা কেউ বাড়িতে ঢুকলে তো কে কে করেই যাবে। পাখিটা কিন্তু বেশি কথা বলতে পারে না। শুধু অচেনা কেউ বাড়িতে আসলে কে কে করে ।আর আমার মামার নাম ধরে ডাকবে। মামার মেয়েকে বুনু বলে ডাকে। এছাড়া কোন বিড়াল যদি ডাকে। তার সুরে সুর মেলাবে। আর কোকিল ডাকলে তার সুরে সুরে সুর মেলায়। মনে সত্যি করে বিড়াল ডাকছে। মাঝে মাঝে মামি ছুটে যায় ।ঘরে বিড়াল ঢুকেছে বলে। যখন কোকিল ডাকে মনে হয়। সত্যি করে কোকিল ডাকছে।

IMG_20240728_123714.jpg

মাঝে মাঝে আমরা তো বুঝতেই পারি না। বিড়াল ডাকছে না পাখি ডাকছে। পাখিটার জন্য একটা সুবিধা যে অচেনা কেউ বাড়িতে ঢুকলেই চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। তখনই আমরা বুঝতে পারি যে বাড়িতে কেউ এসেছে। পাখিটাকে মানুষের মতো করেই মামি রোজ স্নান করায়। দুপুর হয়ে গেলে স্নান করাতে দেরি হলে চেঁচামেচি শুরু করে।মামিকে কিছু বলে না। কিন্তু মাঝে মাঝে আমরা যদি খাঁচায় আঙুল দিই ।তাহলে আমাদের কামড়ে দিতে আসে। স্নান করানোর পর আবার খাঁচায় ঢুকিয়ে রাখা হয়। স্নান করালে ডানা গুলো একেবারে কাকের মতো দেখতে লাগে।একবার তো খাঁচা থেকে উড়ে পাশে একটা নারকেল গাছের উপরে উঠে পড়েছিল। কিন্তু পাখিটা বাড়ি চিনতে পারছিল না।

IMG_20240727_215913.jpg

তখন প্রায়ই সন্ধ্যে সন্ধ্যে হয়ে গেছে। মামা তখন নারকেল গাছের উপরে উঠে পাখিটাকে নামিয়ে নিয়ে আসে। পুজোর সময় যখন আমরা নতুন জামা কাপড় কিনি। মামা তখন পাখিটার পিছনে লাগে ।তুই কি নিবি বল ।ওত কথা বলতে পারে না ।তাই খাঁচার ভেতর ডানা ঝাপটে চিৎকার করে। আমাদের টিয়া পাখিটি সব রকম খাবার খায়। মামা যদি কোন নেমন্তন্ন বাড়িতে খেতে যাই ।সেখান থেকেও পাখিটার জন্য ভাত তরকারি নিয়ে আসে। মামা যদি পাখিটাকে ছাগল বলে। তখন পাখিটা রেগে গিয়ে মামাকে বলে কুকুর। টিয়া পাখি অনেক রঙের হয়। আমাদের পাখিটা সবুজ রঙের।আর ঠোঁট টা লাল রঙের।


তবে আমি এখন পাখিটাকে সব সময় কাছে পায় না। আমাদের পাখি সম্পর্কে জেনে আপনাদের কেমন লাগলো জানাবেন।আজ এখানেই শেষ করছি ।আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। পরবর্তী কোন গল্প নিয়ে হাজির হব আপনাদের মাঝে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

আপনি আজ আপনার মামার পোষা টিয়া পাখির সম্পর্কে তুলে ধরেছেন আমাদের মাঝে। তবে আপনার এই পাখির সম্পর্কে জেনে আমার অনেক পুরাতন একটি কথা মনে পড়ে গেলো। আমি একটু সময় আমার একটি খালার বাসায় পাখি দেখেছিলাম এবং তাদের বাসায় যখন যেতাম তখন পাখির সাথে অনেক আনন্দ অনুভব করতাম। তবে এটা শুনে খারাপ লাগলো যে আপনি এখন সব সময় পাখি টাকে কাছে পান না।

যাইহোক সুন্দর একটি পোস্ট উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

বাড়িতে যে কোন পোষা পাখি কিংবা পশু থাকলে তার ওপর মায়া পড়ে যায়। এরকম পাখি থাকলে সত্যিই মনটা ভালো হয়ে যায়। আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার পোস্টটা সত্যি অনেক ভালো লাগলো কারন টিয়া পাখি দেখতে পেলাম আপনার মাধ্যমে। হ্যা ঠিকই বলেছেন টিয়া পাখি আমাদের মধ্যে সকলেই হয়ত পছন্দ করে। শুনেছি টিয়া পাখি নাকি খুব সুন্দর কথা বলতে পারে তবে আমাদের বাড়ির আশেপাশে কারোর নেই এজন্য সরাসরি শুনিনি কখনও। আপনার মামার টিয়া পাখি আছে এটা জেনে ভালো লাগলো।

টিয়া পাখি মানুষের মতোই কথা বলতে পারে। আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

প্রথমেই আপনাকে ধন্যবাদ জানাই টিয়া পাখি সম্পর্কে আমাদেরকে কিছু ধারণা দেওয়ার জন্য। ব্যক্তিগতভাবে আমার টিয়া পাখি অনেক ভালো লাগে। আমার কাছে যত পাখি রয়েছে সবচাইতে টিয়া পাখির সৌন্দর্য আমার কাছে ভালো লাগে। টিয়া পাখি যেমন দেখতে সুন্দর তেমনি তার ঠোঁট দুটি অনেক সুন্দর। একবার আমাদের বাড়িতে এক একটি গাছে টিয়া পাখি এসেছিল অনেক চেষ্টা করেও পাখিটি ধরতে পারিনি। ধন্যবাদ ভাই ভালো থাকবেন আশা পোস্ট আমাদের উপহার দেবেন।

প্রথমেই আপনাকে বলি আমি ভাই না। আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

খুবই সুন্দর একটি পোস্ট পরিবেশ ভালো লাগলো। আপনার মামার পোষা টিয়া পাখি পাখি আমার বেশ পছন্দের একটি পাখি।
কি মিষ্টি মিষ্টি করে কথা বলে মনে হয় সারাদিন শুনতে থাকি।

আপনার মামার পোষা টিয়া পাখি সম্পর্কে জানতে পেরে ভীষণ ভালো লাগলো তিনি যে খাবার না পেয়ে চেঁচামেচি করে এটা শুনে একটু হাসি পেলাম। এবং অনেক কথা বলতেও পারি। দোয়া রইল আপনার মামার টিয়া পাখিটের জন্য।

বিশেষ করে সকালবেলায় নকুল দানা না পেলে বেশি চেঁচামেচি করে। আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মামার বাড়ি থাকার আনন্দটা অন্য রকম।ছ্টেবেলার কাটানো মামা বাড়ির সেই স্মৃতিগুলো কখনোই ভোলা যাবে না ।তবে আমরা মামা বাড়িতে যে আনন্দের সময় পার করেছি আমাদের সন্তানরা সে রকম আনন্দ উপভোগ করতে পারে না ।আপনার মামা বাড়িতে ১৩ বছর আগে সে টিয়া পাখিটি দেখতে অনেক সুন্দর। পাখি আমার খুব ভালো লাগে । বেশি ভালো লাগে যখন কথা বলতে পারে তখন। তবে টিয়া পাখি গুলো পোষ মানিয়ে কথা শেখানোটা অনেক কষ্টের বিষয় এবং সময় লাগে ।আপনার মামী পাখিটির বাচ্চাটিকে অনেক যত্ন করে বাচিয়ে ছিল। পাখিটি রেগে গেলে মামাকে কুকুর বলে দারুন তো! সুন্দর একটি পোস্ট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

টিয়া পাখি সকলেরই ভালো লাগে। আমার পোস্টে এত ভালো একটা কমেন্ট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।