বাড়ি ফেরার পালা

in hive-120823 •  2 months ago  (edited)

নমস্কার বন্ধুরা, সকলে কেমন আছেন? আশা করছি সকলেই ভালো আছেন। আজকে আবারো নতুন একটা পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের মাঝে, আশা করছি সকলেরই ভালো লাগবে।

IMG20241222110400.jpg

আপনারা হয়তো সকলেই আমার পোস্টে পড়ে থাকবেন কিছুদিন আগেই আমি গিয়েছিলাম আমার বাপের বাড়ি বেড়াতে। সেখান থেকেই ফেরার গল্প আজ আমি আপনাদের মাঝে শেয়ার করব। আমি গত মঙ্গলবার গিয়েছিলাম আমার বাপের বাড়ি। বাপের বাড়ি যাওয়ার সময় আমার মত সকল মেয়েদেরই খুবই আনন্দ হয়। কত কিছু ভাবনা নিয়ে মনের আনন্দে আমরা বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়। যে কটা দিন থাকা হয় মজা ,আনন্দ ,অনেক গল্পের সাথে সাথে দিনগুলো এক নিমিষেই কেটে যায়। অনেকদিন পর আবারো চার বোন একসাথে হয়ে দিনগুলো বেশ ভালোই কাটছিল। কিন্তু নিজের গন্তব্যে তো আবার ফিরতেই হবে।

IMG20241222110531.jpg

আবারো একরাশ মন খারাপ নিয়ে ফিরতে হয়েছে গত রবিবার। বাপের বাড়ি থেকে বাড়ি ফেরার কথা শুনলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। আমি ছোট থেকে মামার বাড়িতে মানুষ হলেও নিজের বাড়ির প্রতি একটা টান তো থেকেই যায়। গত রবিবার সকাল প্রায় এগারোটা পর্যন্ত চারিদিকে কুয়াশা ঢাকা ছিল। আমাদের বাড়ির পিছনে একদমই ফাঁকা মাঠ। কুয়াশা চারিদিক ঢেকে থাকার কারণে কোন কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু ওই যে বাড়ি ফিরতেই হবে। আমার বাড়ি ফেরার কথা শুনে মায়ের তো চোখে জল চলে এসেছে। অন্য সব বোনেরা মায়ের কাছে বেড়াতে গেলেও আমার সচরাচর একদমই যাওয়া হয়ে ওঠে না। আগে তো বছরে এক আধ বার করে যেতাম। কিন্তু এ বছরে তাও দরকারের কারণে বেশ কয়েকবার যাওয়া হয়ে গেল।

IMG20241217183003.jpg

কিন্তু ওই যে বলে মায়ের মন আরো বেশ কয়েকদিন থাকলে মায়ের ভালো লাগতো। আমার সারা বছর পড়ানো থাকে ।তাই যাওয়া সম্ভব হয় না ।গেলেও হয়তো একদিনের জন্য কিন্তু এবার গিয়ে আমি ছয় দিন ছিলাম। তাও যেন মায়ের মন কিছুতেই ভরে না। মা তো পারলে বলছিল আরো কয়েকটা দিন থেকে যেতে। আমি তো প্রায়ই জোর করে কুয়াশার মধ্যেই বেলা 11 টার পর বেরিয়ে পড়েছিলাম বাড়ি ফিরব বলে। তখনো চারিদিকে হালকা কুয়াশা। বাচ্চা ছেলেরা মাঠে কেউ র‍্যাকেট খেলছে আবারো বা কেউ আগুন পোহাচ্ছে।

এই সব আগুন পোহানোর দৃশ্য সচরাচর আমাদের শহরাঞ্চলে চোখে পড়ে না। কেউ কেউ হয়তো শখ করে আগুন পোহায়। কিন্তু এই কদিন আমি দেখছিলাম সন্ধ্যা হলেই গ্রামের মানুষজন জোট বেঁধে আগুন পোহায়। এছাড়াও গ্রামের স্নিগ্ধ বাতাস ,পাখি কলরব বাড়ির পিছনে চাষের জমি ,সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠেই মাঠে জল দেওয়া সবকিছুই খুব মিস করছি। তার সাথে মায়ের আদর ভালোবাসা। সব থেকে আমার ভালো লাগে, মায়ের হাতের রান্না খেতে। আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে কোনদিন কোন বাধা দেয় না বাপের বাড়িতে থাকার জন্য। কিন্তু আমারই থাকা হয়ে ওঠেনা। আসলে অনেক কাজের মধ্যেই ব্যস্ত থাকতে হয়। আপনারা হয়তো সকলেই জানেন আমি মাটির কাজ করি, সেখান থেকেই বারে বারে ফোন করা হচ্ছিল তাড়াতাড়ি ফিরে আসার জন্য।

যাই হোক আমাদের বাড়ি থেকে টোটো করে প্রায় দুই কিলোমিটার আসতে হয় তারপরেই আমাদের বাসস্ট্যান্ড। বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে তবেই কৃষ্ণনগরে পৌঁছায়। বাসে করে প্রায় অনেকটা পথ ফেরার সময় তখন বাইরে হালকা হালকা রোদের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু কৃষ্ণনগরে নেমে দেখলাম বেশ ভালোই রোদ উঠেছিল। আজকে আমি আমার বাপের বাড়ি থেকে ফেরার গল্প আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম। আশা করছি আমার মত সব মেয়েদেরই একরাশ মন খারাপ নিয়ে বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি ফিরতে হয়। ওই কটা দিন বাপের বাড়িতে কাটানো মুহূর্ত গুলোই বারবার মনে পড়লে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে হয়।


আজ এখানেই শেষ করছি ।আবার পরবর্তী কোন গল্প নিয়ে হাজির হব আপনাদের মাঝে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আপনার পোস্ট পড়ে মনটা ভরে গেল আপু। সত্যিই, বাপের বাড়ির প্রতি টান আর মায়ের ভালোবাসা সব মেয়েদের মনেই আলাদা জায়গা করে নেয়। আমি যখন বাবার বাড়ি যাই আমার আর ফিরে আসতেই মন চায় না।

আপনার অনুভূতিগুলো খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। বাপের বাড়িতে কাটানো মুহূর্তগুলো আমাদের জীবনের অমূল্য স্মৃতি। আশা করি, আবারও এমন সুন্দর পোস্ট নিয়ে আসবেন। অনেক অনেক শুভ কামনা রইল!

Loading...

বাবার বাড়ির সঙ্গে মেয়েদের মনের যে অদৃশ্য টান, তা কোনো ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়। আপনার বাবার বাড়িতে কাটানো দিনগুলোর বর্ণনা খুবই প্রাণবন্ত ছিল। মায়ের আদর, গ্রামের পরিবেশ, পাখির কলরব, আগুন পোহানোর দৃশ্য মনে শান্তির ছোঁয়া দেয়। আপনার এই সুন্দর মুহূর্তগুলো শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।