নমস্কার বন্ধুরা, সকলে কেমন আছেন? আশা করছি, সকলেই খুব ভালো আছেন। আজকে নতুন একটা পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের মাঝে।
প্রথমেই জানাই সকলকে দীপাবলির শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। টাইটেল দেখে হয়তো আপনারা বুঝে গেছেন আমি আজকে কি বিষয়ে পোস্ট লিখছি। বাঙ্গালীদের সমস্ত পুজো ঘিরে যেমন অনেক আনন্দ উল্লাস করা হয়। তেমনই সমস্ত পুজোয় অনেক নিয়ম কানুন রয়েছে। সেইসব নিয়মগুলো যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। ছোট থেকেই দিদাকে সব নিয়ম কানুন করতে দেখেছি। এখনো পর্যন্ত দিদা সমস্ত নিয়ম পালন করেন। ভূত চতুর্দশী হল বাঙ্গালীদের একটি উৎসব। এই উৎসব একেক জায়গায় একেক রকম ভাবে পালন করা হয়। প্রত্যেকের নিয়ম একই রকম থাকে না। পঞ্জিকা অনুযায়ী কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে এই নিয়ম পালন করা হয়।
তবে এই বছরে ভূত চতুর্দশী কালীপুজোর দিন পালন করা হয়েছিল। কারণ কালীপুজোর দিনকেই চতুর্দশী ছেড়ে অমাবস্যা লেগেছিল। এই চতুর্দশী বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নাম রয়েছে। চতুর্দশীর দিন ১৪ রকমের শাক খাওয়ার পরে তবেই রাতের বেলায় চতুর্দশী পালন করতে হয়। ছোটবেলায় আমরা বাড়ির ছোটরা সকলে মিলে ১৪ শাক তুলতে যেতাম। এছাড়াও চৌদ্দ প্রতি সেটা আমরা নিজেরাই হাতে তৈরি করতাম। এখনো চৌদ্দ প্রদীপ তৈরি করা হয়। আমরা যেহেতু কৃষ্ণনগরে থাকি। আমাদের গ্রামের বাড়িতে ঠাকুমা শাশুড়ি এখনো রয়েছেন ।তাই গ্রামের বাড়িতেই সব নিয়ম কানুন পালন করা হয়।
ভূত চতুর্দশীর দিন যমকে প্রদীপ জ্বালিয়ে পুজো করা হয়। অনেকে বলেন যমকে পুজো করলে নাকি নরক যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এই দিন পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে ১৪ টা প্রদীপ জ্বালানো হয়। এছাড়াও বাড়িঘর পরিষ্কার রেখে বিভিন্ন রংবেরঙের আলপনা ও দেওয়া হয়। মহালয়ার দিন যেমন পিতৃ পুরুষদের খাদ্য ও জল দান করা হয় ঠিক তেমনি ভূত চতুর্দশীর দিন সন্ধ্যা বেলায় পিতৃ পুরুষদের জল ও খাবার দেওয়া হয়। কথিত আছে এই দিন নাকি পেত আত্মারা পৃথিবীতে আসেন। তাদের হাত থেকে নিস্তান পাওয়ার জন্যই ১৪ টা প্রদীপ জ্বালানো হয়।
আর এই দিনে অশুভ শক্তি বিনাশ করবার জন্যই মা কালী স্বর্গ থেকে নেমে আসেন। প্রদীপ জ্বালিয়েই মাকে স্বাগত জানানো হয়। যেহেতু আমার বাড়িতে এসব নিয়মকানুন পালন করা হয় না ।তাই আমি সন্ধ্যা বেলায় চলে গিয়েছিলাম মামার বাড়িতে। প্রত্যেক বারের মতো এবারও দিদা সমস্ত আয়োজন করে রেখেছিল। সন্ধ্যা হতে দিদা ১৪ টা প্রদীপ জ্বালিয়ে সমস্ত ফল প্রসাদ চিরে, মুড়ি, খৈ, বাতাসা রেডি করে রেখে দিয়েছিল।
একটা কলার পাতা উঠানে রেখে তার উপরে চৌদ্দ জায়গায় সমস্ত খাবার ভাগ ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। এরপরে মামারা প্রত্যেকে তার পিতৃ পুরুষদের জল খাবার সমস্ত কিছু দেওয়ার পর একটা করে প্রদীপ কলার পাতার উপর নামিয়ে দিচ্ছিল। যত জন পিতৃ পুরুষের নাম মনে থাকবে তত জনের নাম করে তবে জল দিতে হয়। আর বলতে হয় অন্ধকার থেকে আলো এসে জল খেয়ে যাও। আমার দাদু আমাকে ভীষণ ভালোবাসতো ।তাই আমি প্রত্যেক বছর দাদুকে এই দিনে জল দিয়ে।
আমিও জল দেওয়ার সময় দাদুকে বলেছিলাম 'দাদু অন্ধকার থেকে আলো এসে' তুমি তোমার খাবার গ্রহণ করো। আমাদের এই নিয়মে সমস্ত কিছু করতে হয়। সমস্ত নিয়ম পালন করার পর রাত্রে বেলায় আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের বাড়িতে মোমবাতি জ্বালায়। এই দিনটা সমস্ত বাড়ি আলোয় আলোকিত হয়ে থাকে।
আজ এইখানেই শেষ করছি ।আবার নতুন কোন গল্প নিয়ে হাজির হব আপনাদের মাঝে।
আপনাকে জানাচ্ছি দীপাবলীর শুভেচ্ছা। সনাতন ধর্মে বারো মাসে তেরো পার্বণ থাকে ,তেমনি একটি পার্বণ হলো ভূত চতুর্দশী । এই দিনে সনাতন ধর্মীরা বিশ্বাস করে থাকি যে,আমাদের পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তির জন্য এবং তাদের স্বর্গ লাভের আশায় আমরা ১৪ টি প্রদীপ জ্বালিয়ে থাকি। তাদের পছন্দমত খাবারও তাদের সমাধিতে দিয়ে থাকি। আপনি সুন্দর ভাবে আপনার পোস্টটিতে ভূত চতুর্দশী সম্বন্ধে তুলে ধরেছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit