"আমার আছে জল" হুমায়ূন আহমেদের একটি আবেগঘন এবং গভীর মানবিক উপন্যাস। এটি মানুষের সম্পর্কের জটিলতা, একতরফা প্রেম, অতীতের স্মৃতি, এবং মানসিক আঘাতের প্রতিফলন নিয়ে রচিত। গল্পটি মূলত একটি পরিবারের ভ্রমণ এবং সেই ভ্রমণের আবহে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতাগুলোকে সামনে নিয়ে আসে। গল্পটি শুরু হয় দিলু নামের একটি নাইনে পড়া কিশোরীর বর্ণনায়। দিলু এবং তার পরিবার নীলগঞ্জ ডাকবাংলোতে যাওয়ার জন্য সোহাগী স্টেশনে নামে। তাদের ভ্রমণ শুরু হয় সাদামাটা গরুর এবং মহিষের গাড়িতে। যদিও প্রথম রাতটি বেশ অগোছালো এবং অস্বস্তিকর ছিল, দ্বিতীয় দিনটি শুরু হয় নতুন রঙে।
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন সম্পর্ক এবং দৃষ্টিভঙ্গি গল্পের আবহকে সমৃদ্ধ করে। নিশাত, দিলুর বড় বোন, সাব্বিরের সঙ্গে পরিচিত হয়। সাব্বির বিদেশফেরত একজন ইঞ্জিনিয়ার ও ফটোগ্রাফার, যিনি নিশাতের প্রতি আকৃষ্ট হন। অন্যদিকে, দিলু ধীরে ধীরে জামিলের প্রতি একতরফা প্রেমে পড়ে যায়। গল্পের টানাপোড়েন বাড়ে যখন নিশাত তার নিজের অতীতের কথা দিলুকে জানায়। নিশাত একসময় জামিলের প্রেমে পড়ে ছিল এবং তাদের সম্পর্ক গোপনে অনেক দূর এগিয়েছিল। নিশাতের এই স্বীকারোক্তি দিলুর মনে গভীর আঘাত হানে, এবং শেষ পর্যন্ত এই কিশোরী মানসিক চাপ সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
গল্পটি মূলত পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতা, একতরফা প্রেম, এবং মানসিক চাপের প্রভাব নিয়ে। লেখক অত্যন্ত সংবেদনশীলভাবে কিশোর-কিশোরীর প্রেমের আবেগ এবং তা থেকে উদ্ভূত মানসিক দ্বন্দ্ব চমৎকার ভাবে তুলে ধরেছেন। নিশাতের অতীত এবং জামিলের সঙ্গে তার সম্পর্ক গল্পে অতীত এবং বর্তমানের একটি সুন্দর সংযোগ তৈরি করেছে। "আমার আছে জল" মূলত একটি পারিবারিক গল্প হলেও এটি মানব মনের গভীর আবেগ এবং সম্পর্কের প্রভাব নিয়ে লেখা হয়েছে। দিলুর একতরফা প্রেম এবং নিশাতের অতীতের প্রেম একটি সাধারণ পরিবারের জীবনে কতটা অশান্তি এবং ট্র্যাজেডি আনতে পারে, তা লেখক অত্যন্ত নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন। হুমায়ূন আহমেদ তার সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষার জন্য আমাদের মন জয় করে নিয়েছে। তিনি এমনভাবে গল্পকে উপস্থাপন করেন যে পাঠক সহজেই চরিত্রগুলোর সঙ্গে নিজেদের সংযুক্ত করতে পারে। গল্পের পরিবেশ, যেমন নীলগঞ্জের ডাকবাংলো, পাখি শিকার, এবং বালি হাস রান্নার বিবরণ আপনাকে গল্পে মগ্ন করে রাখবে।
গল্পের শেষাংশ পাঠককে মর্মাহত করে। দিলুর আত্মহত্যা কেবল একটি কিশোরীর জীবনের অপূর্ণতা নয়, বরং এটি কিশোর মনস্তত্ত্ব এবং পরিবারে উন্মোচিত না হওয়া আবেগগুলোর ওপর একটি প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করে। "আমার আছে জল" একটি আবেগঘন উপন্যাস, যা কিশোর জীবনের সরলতা এবং সম্পর্কের জটিলতার চিত্র তুলে ধরে। এটি কেবল আপনাকে বিনোদন দিবে না, বরং গভীরভাবে চিন্তা করার সুযোগ করে দেবে। যারা সম্পর্কের জটিলতা, কিশোর-মনস্তত্ত্ব, এবং আবেগঘন গল্পে আগ্রহী, তাদের জন্য "আমার আছে জল" অবশ্যপাঠ্য।
হুমায়ূন আহমেদের যেকোনো লেখা আমি পড়তে খুব ভালোবাসি।আমার মনে হয়, লেখক হিসেবে উনি এখনো ওনার প্রাপ্য সম্মান পাননি।
যাইহোক, আমার আছে জল উপন্যাসটিতে আসি।অনেকবারই আমার এই উপন্যাসটি পড়া হয়েছে।পরিণত বয়সের ভালবাসার
শালীনতার পাশাপাশি টিনেজার বয়সের ভালোবাসার তীব্রতা এই উপন্যাসে খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
শেষের দিকে দিলু যখন আত্মহত্যা করে তখনও লেখক পাঠকের মনকে ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য খুব সুন্দরভাবে লিখেছেন যে দিলুর লাশ যখন পুকুরে ভেসে উঠেছে তখন তার পরিহিত লাল জামাটিও খুব সুন্দর ভাবে ছড়িয়ে ছিল।এবং তার চারপাশে এত সুন্দর একটি আভা সৃষ্টি হয়েছে যে সেখানে উপস্থিত ফটোগ্রাফার তা ক্যামেরা বন্দী করতে ভুলেনি।
হৃদয় স্পর্শী একটি ঘটনার তীব্রতা পাঠকের মন থেকে কিভাবে সরিয়ে নিতে হয় তা হুমায়ূন আহমেদ ছাড়া আর কেউ পারেন বলে আমার মনে হয় না।
ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি উপন্যাস নিয়ে কিছু কথা লেখার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit