গল্প : তোমার ছায়া (তৃতীয় পর্ব)

in hive-120823 •  27 days ago 

Black And Orange Romantic Novels Ebook Cover (YouTube Thumbnail) (2).png

Image edited in canva

ঢাকার কোলাহলপূর্ণ সন্ধ্যা যেন ক্লান্ত শহরের প্রতিচ্ছবি। অফিস থেকে ফিরে সায়মা নিঃশেষ হয়ে সোফায় বসে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। জানালার কাঁচের ওপারে দেখা যায় ব্যস্ত শহরের ঝলমলে আলো আর অগণিত গাড়ির লাল-নীল বাতি। ল্যাম্পপোস্টের ম্লান আলোয় রাস্তার কোলাহল যেন চিরচেনা অথচ আজ আরও ভারী মনে হয়। শহরের এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ সায়মার মাথায় সারাদিনের ঘটনাগুলোকে আরও বিশৃঙ্খলভাবে ঘুরপাক খাইয়ে তোলে।

আজকের মিটিংয়ে আদনানের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাকে অদ্ভুতভাবে আলোড়িত করেছে। সায়মা কখনো ভাবেনি, তার মতো দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া আর লক্ষ্যপূরণে উদগ্রীব একজন মানুষের সঙ্গে এত ধীর, সংবেদনশীল আর নিখুঁত চিন্তার একজন মানুষ কাজ করতে পারে। আদনানের প্রতিটি পদক্ষেপ যেন একটা হিসেবি চিন্তার ফল। তার কাছে সময় একটা ধীরে প্রবাহিত নদী, যাকে নিয়ে সে সযত্নে খেলা করে। বিপরীতে, সায়মার কাছে সময় মানে ছুটে চলার প্রতীক—একটা সীমিত সম্পদ, যা সর্বোচ্চ দক্ষতায় ব্যবহার করতে হয়।

সায়মা জানালার বাইরে তাকিয়ে ভাবে, এই পার্থক্যের মধ্যেই কি কিছু শেখার সুযোগ আছে? আদনান কি তাকে তার চিন্তার প্যাটার্ন বদলানোর দিকনির্দেশনা দিতে পারে? তার কাজের প্রতি আদনানের দৃষ্টিভঙ্গি তাকে আজ নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। হয়তো জীবন মানে শুধু দ্রুত এগিয়ে যাওয়া নয়। কখনো কখনো ধীরগতিতেও জীবনের সৌন্দর্য ধরা দিতে পারে।

image.png

Source

রাস্তায় গাড়ির হর্ণ আর মানুষের কোলাহল সায়মার চিন্তার জালে এক ধরনের ছন্দ যোগ করে। হঠাৎ তার মনে হয়, এই ব্যস্ত জীবন থেকে বেরিয়ে প্রকৃতির মাঝেও হয়তো মুক্তি খুঁজে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু তার বর্তমান জীবন একঘেয়ে, দায়িত্ব আর কর্তব্যের বেড়াজালে আবদ্ধ। অফিসের কাজ, পরিবারের দায়িত্ব—সবকিছুই তাকে যেন এক নির্দিষ্ট কক্ষপথে আটকে রেখেছে। এই ঘূর্ণাবর্ত থেকে বেরিয়ে আসার পথ সে খুঁজে পায় না।

এমন সময় নীলাঞ্জনার ফোন আসে।
“কেমন আছিস, সায়মা?” নীলার কণ্ঠে চিরচেনা উচ্ছ্বাস।
“ভালো আছি। কিন্তু জানিস, মাঝে মাঝে মনে হয়, জীবনটা যেন শুধু কাজ আর দায়িত্বের মধ্যে আটকে গেছে। কিছু করতে চাই, তবু কোথাও শান্তি পাই না।”
নীলাঞ্জনা একটু হেসে বলে, “তুই তো এমন ছিলি না। তোর কাজের মধ্যে সব সময় জীবন খুঁজে নিতিস। এখন মনে হয় তুই কাজকে কেবল দায়িত্ব হিসেবে দেখছিস। আদনানের মতো কারো সঙ্গে কাজ করাটা তোর জন্য একটা নতুন দিক হতে পারে।”
সায়মা কিছুটা দ্বিধা নিয়ে জিজ্ঞাসা করে, “আদনান?”
“হ্যাঁ। ওর চিন্তাভাবনা, কাজের প্রতি সৃজনশীলতা তোকে আকৃষ্ট করে না? তোরা একেবারেই ভিন্ন, তাই না?”

সায়মা চুপ করে যায়। নীলার কথাগুলো তার মনে গভীর দাগ কাটে। সত্যিই কি আদনান আর তার ভিন্নতা কোনো সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে? আদনানের কাজের ধরন, তার ধীর অথচ নিখুঁত পদ্ধতি, কেন জানি সায়মাকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি শেখাচ্ছে।

সায়মার মনে হয়, তার জীবনের এই একঘেয়েমি কাটানোর জন্য আদনানের মতো একটা ভিন্ন সত্তার প্রয়োজন। হয়তো এই ভিন্নতা তাকে নতুনভাবে নিজের জীবন দেখতে শেখাবে। আদনানের ধীর চিন্তাধারা সায়মাকে জীবনকে অন্য দৃষ্টিতে দেখতে শেখাচ্ছে। হয়তো তার মতো একজন মানুষের সঙ্গেই কাজ করে সে নিজের ভেতর লুকিয়ে থাকা সৃষ্টিশীলতাকে বের করে আনতে পারবে।

নীলার সঙ্গে ফোন রাখার পরও সায়মার মনে প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খেতে থাকে। আদনান কি কেবল একজন সহকর্মী, নাকি তার জীবনে আরও কিছু নতুন সংজ্ঞা যোগ করতে পারে? সায়মা জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু তার দৃষ্টি যেন দূরে কোথাও হারিয়ে যায়। নতুন কিছু জানার, নতুন কিছু অনুভব করার তৃষ্ণা তার মনে আরও দৃঢ় হয়। হয়তো জীবনকে আরও গভীরভাবে বোঝার সময় এসেছে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

তোমার ছায়া গল্পের তৃতীয় পর্বের জন্য অধির অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে আজকে অপেক্ষার অবসান ঘটলো। প্রতিটি পর্বই আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগে। আর লেখাগুলো সত্যিই অনেক অসাধারণ। গল্পের প্রতিটি চরিত্র আপনি খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন গল্পের চতুর্থ পর্বের জন্য অপেক্ষা করলাম।

দাদা গল্পটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন আপনি।

Loading...

সায়মার জীবনে আদনানের প্রভাব সত্যিই চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তার ধীর, চিন্তাশীল কাজের ধরন সায়মার জীবনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনতে সাহায্য করছে। এমন পরিবর্তন কখনো কখনো জীবনে গভীর অনুভূতি ও সৃষ্টিশীলতার উন্মোচন ঘটাতে পারে। এটা সত্যি যে, জীবনের একঘেয়েমি থেকে বেরিয়ে আসতে কখনো কখনো ভিন্নতা প্রয়োজন।