ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদ ভ্রমণ||পর্ব-২

in hive-120823 •  3 months ago 
"সবাইকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি"

আশা করি যারা আমার আজকের ব্লগটি পড়া শুরু করেছেন তারা সবাই অনেক অনেক ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি। গতকাল আমি কুসুম্বা মসজিদ ভ্রমণের প্রথম পর্ব প্রকাশ করি, এবং বলেছিলাম ২য় পর্বে আরো বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করবো। যারা আগের পর্বটি কোন কারণে মিস করেছেন তারা সময় করে ঐতিহ্যবাহী কুসুম্বা মসজিদ ভ্রমণ || পর্ব-১ দেখে আসবেন।

ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদ ভ্রমণ||পর্ব-২

আমরা দিঘিতে গোসলে সেড়ে ঊঠতে ঊঠতে নামাজের সময় হয়ে গেল। তারাতারি মসজিদের দক্ষিণ পাশের ওজুখানাতে গিয়ে ওজু করে নিলাম। মসজিদের ভেতর বাহির লোকে লোকারণ্য। প্রথমে পূর্ব পাশে গিয়ে যায়গা না পেয়ে পশ্চিম পাশ দিয়ে ঘুরে গিয়ে একদম উত্তরের বড় তেতুল গাছের নীচে যায়গা পেলাম নামাজে দাঁড়ানোর।

20240621_133637.jpg
20240621_133625.jpg

কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তিন শত বছরের পুরনো তেতুল গাছ

বাহিরে প্রচুর রোদ থাকায় অনেকেই এই তেতুল গাছের ছায়ার নীচে এসে বসেছে একটু আরামে জুমার সালাত আদায় করার জন্য। ঐতিহাসিক এই কুসুম্বা মসজিদে খুৎবা শোনার পর দুরাকাত জুমার নামাজ জামাতের সাথে আদায় করার সুযোগ হলো আলহামদুলিল্লাহ।

20240621_131854.jpg

কুসুম্বা মসজিদে শুক্রবারে জুমার নামাজ আদায়

নামাজ শেষ করে বের হতে যাবো একজন মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে ছুটে ওলো, বাড়িয়ে দিল আমাদের দিকে।আশেপাশে দেখলাম অনেকেই মুসল্লিদের মিষ্টি খাওয়াচ্ছে। আর একটু সামনে যেতেই বিরিয়ানির ঘ্রাণ নাকে এলো। পরে জানতে পারলাম প্রতি শুক্রবার নামাজ শেষে এখানে অনেকেই শিরনি, বিরিয়ানি, মিষ্টি খাওয়ায়। চারিদিকে উৎসব মুখর পরিবেশ, ভেবেছিলাম শিরনী নিবো তবে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে নিতে হবে দেখে আর দাড়ালাম না।

DSC_0919.JPG

নামাজ শেষে মুসল্লীদের খাবার বিতরণ

এত সুন্দর একটা জায়গায় এসেছি ফটোসেশান না করলে কেমন হয়ে যায়। এগুলোই তো স্মৃতি হয়ে থাকবে। তাই আমরা একে একে দাঁড়িয়ে ফটোগ্রাফি করলাম। মসজিদের পিলার ও দেয়াল গুলো বালু ও পাথরের তৈরি। হাত দিলেই বোঝা যায় কতটা মসৃণ আর সুনিপুণ ভাবে বানানো হয়েছে এই মসজিদ টি। দেয়ালে নানা রকম লতাপাতার আলপনা খোদাই করা।

20240621_135013.jpg
DSC_0879.JPG

হাত বুলিয়ে মসজিদের দেয়ালের কারুকাজ পরখ করে দেখছেন দুজন দর্শণার্থী

কুসুম্বা মসজিদের পিলার গুলো অনেক মোটা আর শক্তপোক্ত, কারুকাজ করা। অনেকবছর আগে শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে এই পিলার গুলো অনেকটা দেবে যায়, তবে এর শক্ত নির্মাণশৈলীর কারণে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয় নি।

DSC_0891.JPG
DSC_0888.JPG

মসজিদের পশ্চিম পাশের পিলারের সামনে আমি

এই মসজিদের পাশে ঈদকে কেন্দ্র করে ছোট খাটো মেলার মত বসেছে। বেশ কিছু ফুচকার দোকান চোখে পড়লো। পাশাপাশি আইস্ক্রিম থেকে শুরু করে বাচ্চাদের খেলনা সব কিছুর দোকান এখানে আছে।

DSC_0921.JPG

20240621_133732.jpg

মসজিদের পাশে বসেছে বিভিন্ন দোকান

মসজিদ তো ঘুরে দেখা হলো এখন চলুন জানা যাক কিভাবে আসবেন এই মসজিদটি দেখতে। একদম ই খুব সহজ, ঢাকা থেকে যেকোন বাস বা ট্রেনে প্রথমে আপনাকে রাজশাহী বা নওগাঁ যেকোন একটি শহরে আসতে হবে। এই মসজিদটি রাজশাহী-নওগাঁ হাইওয়ের একদম মাঝামাঝি মান্দা থানায় অবস্থিত হওয়ায় দুই শহর থেকেই সহজে আসা যাবে। নওগাঁ থেকে বাসে আসলে আপনাকে মান্দা ফেরিঘাট পার হয়ে পরের স্টপেজে নামতে হবে ভাড়া লাগবে ৭০ টাকা আর রাজশাহী থেকে এলে মান্দা ফেরিঘাটের আগের স্টপেজ এ নামতে হবে, ভাড়া লাগবে ৯০ টাকা। সেখান থেকে নেমে ২-৩ মিনিট হাটলেই এই মসজিদ।

তো এই ছিল আজকের পর্ব। অনেকেই পাচ টাকার নোটে এই মসজিদ দেখে থাকলেও সেভাবে হয়তো জানতেন না, আশা করি এখন ৫ টাকার নোট সামনে এলেই কুসুম্বা মসজিদের পাশাপাশি আমার এই ব্লগের কথা আপনাদের মনে পড়বে। সবাই অনেক অনেক ভালো থাকবেন।

Post Details

DeviceSamsung M31& Nikon D5500
CategoryTravel Blog
Photographer@mukitsalafi
LocationNaogaon,Bangladesh

image.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

এই পোস্টটা আপনি কালকে প্রথম পর্বে অনেক সুন্দর করে বর্ণনা দিয়েছিলেন, এবং আজকেও দিতে পারবেও অনেক সুন্দর করে এই পোস্টার বর্ণনা করেছেন, যেটা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে এবং আপনার ফটোগ্রাফি গুলো অনেক সুন্দর ছিল। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আপনি।

জি ভাই প্রয়হম পর্বে আসলে সম্পূর্ণভাবে কাভার করতে পারি নি, তাই ২য় পর্ব লেখা। অবশ্যই সময় ও সুযোগ হলে এই মসজিদ ঘুরে দেখবেন ভালো লাগবে। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আপনি আমার এই কমেন্টের অনেক সুন্দর একটি রিপ্লাই দিয়েছেন। এবং আপনি আমাকে এই মসজিদ করার আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন সেজন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আপনি।

আমি আপনার পোষ্টের মাধ্যমে প্রথম শুনলাম কুসুম্বা মসজিদ সম্পর্কে।। সবচাইতে আশ্চর্য হলাম তেঁতুল কাজটা দেখে একদম অন্যরকম দেখা যাচ্ছে।। অনেক কষ্টের পর সেখানে নামাজ আদায় করতে পেরেছেন শুনে অনেক ভালো লাগলো।।

হ্যা ভাই এই তেতুল গাছ টা অনেক বছরের পুরাতন। এত বিশাল তেতুল গাছ আমি আমার জীবনে এর আগে দেখি নি। এমনিতেই তেতুল গাছে ভূত আছে বলে একটা প্রবাদ আছে, আমার তো মনে হয় এই গাছে অসং্খ্য আছে। ভয়ংকর লাগে দেখতে।

আমি ছোট থেকেই শুনে এসেছি তেঁতুল গাছে নাকি খুব বেশি থাকে আর যেহেতু অনেক পুরাতন তেতুল গাছে।।। নিশ্চয়ই কোন না কোন ভয়ংকার কিছু আছে আর গাছটা দেখতে অনেকটা অদ্ভুত লাগছে।।

এই ঐতিহ্যবাহী স্থানের প্রথম পর্বটিও আমি পরিদর্শন করেছিলাম তবে ৩০০ বছরের পুরনো জীবিত তেতুল গাছ থেকে রীতিমতো অবাকই হয়েছি।

মসজিদের কারুকার্য দেখেই বোঝা যায় এটা পুরনো দিনের তৈরি। কারণ বর্তমানে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কার হলেও আগের দিনের হাতের কাজের কাছে সেটাকে আমি তুচ্ছই মনে করি।

ঢাকা থেকে কিভাবে এখানে যেতে হবে সেই বিষয়টি আপনি খুব চমৎকার ব্যবস্থাপন করেছেন। আশা করি আপনার লেখাটি পরিদর্শনের পর ঢাকা থেকে এই মসজিদ পরিদর্শনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে না।

এত বড় তেতুল গাছ আমি আমার জীবনে আর দেখি নি, দেখতেই কেমন যেন গা ছম ছম করে। আপনি ঠিক বলেছেন, আগের দিনের হাতের কারুকাজ গুলো দেখলেই বঝা যায়, দিন দিন যন্ত্রপাতি আবিস্কার হলেও আগের সেই কারুকাজ তো আর যন্ত্র দিয়ে করা সম্ভব নয়।