ঐতিহ্যবাহী কুসুম্বা মসজিদ ভ্রমণ || পর্ব-১

in hive-120823 •  3 months ago  (edited)
"হ্যালো বন্ধুরা, সবাই কে আমার নতুন ব্লগে স্বাগতম"

কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভালোই আছেন। গত দিন আমি বলেছিলাম যে কুসুম্বা মসজিদ ভ্রমণ নিয়ে আলাদা একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হবো। গত শুক্রবার সুযোগ হয়েছিল বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন কুসুম্বা মসজিদ ভ্রমণের। আজকে সেই ভ্রমণের স্মৃতি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।

ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদ ভ্রমণ

কুসুম্বা মসজিদ বাংলাদেশের নওগাঁ জেলায় অবস্থিত। আমরা সবাই হয়তো ছবিতে কুসুম্বা মসজিদ দেখেছি। কি অবাক হচ্ছেন? আরেকটু সহজ করে দেই, মানিব্যাগ এ যদি ৫ টাকার ব্যাংক নোট থাকে তাহলে খেয়াল করুন, ৫ টাকার ব্যাংক নোটে যে মসজিদের ছবিটি দেয়া আছে, সেটি ই ঐতিহ্যবাহী কুসুম্বা মসজিদ।

কুসুম্বা মসুজিদের ছবি সম্বলিত বাংলাদেশের ৫ টাকার ব্যাংকনোট

সুলতানি আমলের সাক্ষী এই কুসুম্বা মসজিদ নওগাঁ জেলার মান্দা থানায় অবস্থিত। আমার সুযোগ হয়েছিল গত শুক্রবার এই মসজিদটি কাছে থেকে দেখার। আমরা মোট ৬ জন দুইটা মটরসাইকেলে চেপে কুসুম্বা মসজিদ দেখতে যাই, যদিও মূল উদ্দেশ্য ছিল এই মসজিদের সাম্নের সুবিশাল দিঘিতে গোসল করা। লোকমুখে শোনা এই দিঘিটির আয়তন প্রায় ৭৭ বিঘা। মূলত গ্রামের মানুষের পানির চাহিদা মেটাতে এই দিঘিটি খনন করা হয়েছিল বলে জানা যায়।

আমরা দুপুর ১২ টার পর কুসুম্বা মসজিদে পৌছাই। সেখানে মটর সাইকেল রাখার পার্কিং এর সু ব্যবস্থা রয়েছে। ৩০ টাকার বিনিময়ে ৩ ঘন্টা রাখা যায়। আমরা বাইক গুলো রেখে সোজা চলে গেলাম মসজিদের সামনে। মসজিদের সামনে অস্থায়ী গেইট করা হয়েছে, তার উপরে ঈদ মোবারক লেখা চোখে পড়লো।

20240621_131147.jpg

মসজিদের সামনে ঈদমোবারক লেখা অস্থায়ী গেইট

আমরা মসজিদের সামনে যেতেই একটি পাথরের বাক্স সদৃশ দেখতে পেলাম। পরে লোকমুখে জানতে পারলাম এটি নাকি একটি শিশুর কবর। আবার অনেকেই বলে এটি মূল্যবান সিন্ধুক, অনেক আগে একবার কেউ একজন এই সিন্ধুক ভাঙার চেষ্টা করেছিল এবং সাথে সাথেই সেখানে সে মৃত্যুবরণ করে। মানুষের ধারণা এই বাক্সে অনেক মূল্যবান সম্পদ আছে কিন্তু কেউ ই তা খুলতে পারে না। খোলার চেষ্টা করলেই তার ক্ষতি হয়। পাথরের সেই বাক্সের গায়ে আরবীতে খোদাই করা লেখা দেখে পড়ে ছোট ভাই মুহিত, যে মাদ্রাসায় পড়েছে তার কাছে থেকে তর্জমা পেয়ে বুঝলাম এটি হুসেন শাহের স্মৃতি বিজড়িত।

20240621_135047.jpg

শক্ত পাথর দিয়ে বানানো সিন্ধুক যা অনেকেই শিশুর কবর নামে চিনে

20240621_135052.jpg

একটু সামনে গেলেই হাতের ডান পাশে পেলাম দিঘিতে নামার ঘাট। অনেক গুলো সিড়ি বেয়ে নীচে নেমে গেলাম। কিন্তু সেখানে সবাই গোসল করা নিয়ে ব্যস্ত, উপচে পড়া ভীড়। বুঝতে পারলাম এখানে নেমে গোসলের সিরিয়াল পেতে পেতে জুমার নামাজ শেষ হয়ে যাবে।

20240621_135127.jpg

মসজিদের সাম্নের খোলা প্রাঙ্গন থেকে দিঘির পানি অব্দি নেমে গেছে সিড়ি

এখানে এসে বেশির ভাগ মানুষ এটা বিশ্বাস করে গোসল করে যে, গোসলের সময় মনের চাওয়ার কথা জানিয়ে গোসল দিলে সেই চাওয়া পূরণ হয়ে যাবে। নাউজুবিল্লাহ আল্লাহ আমাদের এরকম শিরক ও ফেৎনা থেকে দূরে রাখুক। আমীন।

যাই হোক, আমাদের ইচ্ছে ছিল শুধু দিঘিতে গোসল করে উপভোগ করা। আমরা এই ঘাটে যায়গা না পেয়ে চলে গেলাম উত্তর দিকে। সেখানে দিঘির পার বেয়ে নেমে যাবার চিকন পথ পেলাম। সাবধানে সেই পথ দিয়ে নেমে গেলাম দিঘিতে।

DSC_0871.JPG

দিঘির পাড়ে একটা বিষয় দেখে অবাক হলাম, এখানে পুরুষের থেকে নারীদের সংখ্যা বেশি, এবং তারা এই খোলা দিঘিতে ডুব দিয়ে গোসল করছে। বুঝলাম পুরুষের থেকে নারীরা কুসংস্কার এ বেশি বিশ্বাস করে।

আমরা যেহেতু উত্তর সাইডে ছিলাম তাই আরামে ডুব দিতে পারলাম। এখানে আর কেউ ই আসে নি, শুধু আমরা ৬ জন। দিঘির পানি অসম্ভব ঠান্ডা, যতই গভীরে যাচ্ছিলাম ততোই ঠান্ডা পানি। আমরা পানিতে সাতার দিয়ে প্রায় মাঝ পুকুরে চলে গেলাম।

20240621_125405.jpg

কুসুম্বা মসজিদের সুবিশাল দিঘিতে গোসল

20240621_125418.jpg

মাঝ দিঘিতে গোসল করতে নেমে বুঝতে পারলাম প্রচুর মাছ রয়েছে। পায়ের তলার কাদায় মাছ নড়াচড়া করছে,দিলাম ডুব। ছোট সাইজের একটা তেলাপিয়া ধরতে পারলাম। মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা না থাকলে আরো ধরা যেত।

DSC_0867.JPG

গোসলে নেমে তেলাপিয়া মাছ শিকার

এদিকে জুমার নামাজ শুরু হয়ে যাবে, তাই আমরা গোসল থেকে ঊঠে মসজিদের দিকে রওনা হলাম নামাজের উদ্দেশ্যে।

নামাজের পর মূলত আমরা মসজিদটির চারিপাশ ঘুরে দেখেছি। সেই অভিজ্ঞতা আজকে শেয়ার করতে গেলে ব্লগটি অনেক লম্বা হয়ে যাবে। তাই, আমি ২য় পর্বে কুসুম্বা মসজিদটি ঘুরে দেখাবো, পাশাপাশি কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন তার সম্পূর্ণ গাইডলাইন দিবো। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। ২য় পর্ব পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকের মত বিদায়। ভালো থাকবেন সবাই।

Post Details

DeviceSamsung M31& Nikon D5500
CategoryTravel Blog
Photographer@mukitsalafi
LocationNaogaon,Bangladesh

image.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম, সত্যিই খুব ভালো লাগলো পোস্টটি দেখে। কাজের ফাঁকে ছুটি পেলে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে সময় দেওয়া উচিত। আপনি কুসুম্বা মসজিদে ঘুরতে গিয়েছিলেন এবং সেখানকার ফটোগ্রাফি ও অনেক তথ্য শেয়ার করেছেন। আমাদের ৫ টাকার নোটের এই কুসুম্বা মসজিদের ছবিটা দেখতে পেলাম আপনার মাধ্যমে। ভালো থাকবেন।

হ্যা ভাই এই মসজিদ টি অনেক পুরোনো আর বিখ্যাত। আমি নিজেও যদি এখানে না যেতাম তাহলে অনেক কিছুই অজানা থেকে যেত। অনেকেই এই মসজিদ অনেকবার ছবিতে দেখলেও কেউ সেভাবে খেয়াল করে নি, তবে আমরা ছোটবেলা থেকে এই মসজিদের নাম শুনতাম লোকমুখে।

Loading...

আপনার ঐতিহ্যবাহী কুসুম্বা মসজিদ ভ্রমণ অনেক সুন্দর ছিল, এবং সেই সাথে সাথে আপনি যে এত সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন সেটা অনেক ভালো লেগেছে এবং আমারও ইচ্ছা আছে এই মসজিদ ভ্রমণ করার। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আপনি।

আসলে মানুষের অনেক ভীড় থাকায় মসজিদের সেভাবে ছবি ক্যাপচার করতে পারি নি। তার উপর অনেক কম সময়ের জন্য গিয়েছিলাম সেখানে। ইচ্ছে আছে বেশি সময় নিয়ে এর পর যাবো, তখন আরো ভালো কিছু ফটোগ্রাফি করবো।

  ·  3 months ago (edited)

যাই হোক আপনি মসজিদের মানুষের অনেক ভিড় থাকার কারণে ছবিগুলো ক্যাপচার করতে পারেনি সেটা বড় বিষয় না আপনি যে ছবিগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করেছিলাম সেগুলো আসলে অনেক সুন্দর ছিল। অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর করে আবার কমেন্টের রিপ্লাই দেওয়ার জন্য।

কুসুম্বা মসজিদ নামে কোনো মসজিদ আছে আমাদের দেশে আপনার এই পোস্ট পড়ার পূর্বে আমার জানা ছিল না। পাঁচ টাকার নোট এ যদিও ছবি দেখেছি কিন্তু সেটা কোন মসজিদের সেটা নিয়ে কখনো ভাবি নাই। কত কিছু রয়ে গেছে ,অথচ কিছুই জানি না।
যাই হোক ,চমৎকার এই মসজিদ ও মসজিদ সংলগ্ন দীঘি নিয়ে চমৎকার এই লেখা উপহার দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

এটা একদম ই সত্য কথা যে অনেক বিষয় আমরা দেখলেও সেভাবে গুরুত্ব দেই না, জানার আগ্রহ প্রকাশ করি না, আর এভাবেই আমাদের অনেক কিছু অজানা থেকে যায়। এই মসজিদ দেখার আমন্ত্রণ রইলো। ভালো থাকবেন। অনেক অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্যে

পাঁচ টাকা নোটের পিছনে ছবি দেখেছি কিন্তু এটাই যে সেই ছবি এটা আপনার পোষ্টের মাধ্যমে দেখে অনেক ভালো লাগলো।। আর সেখানকার অনেক কিছু সম্পর্কে আপনি আমাদের অবগত করলেন কখনো যদি নওগাঁ যায় অবশ্যই এই মসজিদ ভ্রমণ করব।।

অনেকেই আসলে সেভাবে খেয়াল করি না,বিশেষ করে যেগুলো আমরা প্রতিনিয়ত দেখি। যেমন আমিও আগে এই মসজিদ নিয়ে তেমন চিন্তা করি নি, কিন্তু যখন সামনা সামনি দেখলাম তঝন এই মসজিদ নিয়ে জানার আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিল। ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।

এটা একদম সঠিক বলেছে যেগুলো প্রতিনিয়ত দেখি সে বিষয়ে আমরা তেমন খেয়াল করি না আর সামনাসামনি দেখলে সেটার প্রতি কৌতুহল বাড়ে।। আর হ্যাঁ কখনো সুযোগ হলে অবশ্যই এই মসজিদ দেখতে যাব।।