হ্যালো বন্ধুরা,
আশা করি সবাই অনেক অনেক ভালো আছেন। মানুষের জীবনটা কেমন যেন যান্ত্রিক, বিশেষ করে যারা কর্পোরেট জব করে তাদের জীবনে অফিস দিনগুলি সব সময় একই রকম, একই রুটিন। কোন ভিন্নতা নেই। তবে কালে ভদ্রে বিশেষ কিছু দিন আসে, যেখানে অফিসের কলীগরা মিলে মজা করা যায়, পার্টি হয়। তেমন ই একটি দিন আমি কিছুদিন আগে কাটিয়েছি। আজকেই সেই অভিজ্ঞতাই আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
Cover photo
খুব ছোটবেলায় নাটক বা মুভিতে যখন শুনতাম ডিনার পার্টি, তখন ভাবতাম এটা আবার কি জিনিস? কেননা তখন তো গ্রামে ছিলাম, আর রেস্টুরেন্ট বলতে চিনতাম উপজেলা অফিসের সামনের ভাতের হোটেল কে। এর পর ঢাকায় এসে প্রথম বন্ধুদের সাথে রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে খাওয়া, এর পর জীবনের পথ পরিক্রমায় চাকুরীজীবনেরও মেলা দিন পার করে ফেললাম। এখন মাঝে মাঝেই অফিস কলীগদের সাথে ডিনার পারটিতে যেতে হয়। তবে নাটক বা মুভিতে যেমন ডিনার পার্টি দেখতাম তেমন পারটিতে যাবার অভিজ্ঞতা আমার এখনোও হয় নি।
The Cafe Rio
গেল মাসে আমাদের অফিসে নতুন একজন ম্যানেজার জয়েন করেন। এই মাসে স্যালারি পাবার পর উনি আমাদের ডিনার পারটিতে ইনভাইট করলেন। দিনটি ছিল বুধবার, অফিস শেষ করে আমারা সবাই মিলে দলবেধে চলে গেলাম গুলশান ১ এর জব্বার টাওয়ারে অবস্থিত The Cafe Rio তে। এটি একটি বুফেট সিস্টেম রেস্টুরেন্ট। আপ্নারা সবাই জানেন বুফে সাধারণত ৩ ঘন্টা সময় থাকে। তো আমাদের সময় ছিল রাত ৭টা থেকে ১০ টা অব্দি। এই বুফে খেতে হলে লাঞ্চের সময় আপনার প্রতিজনে খরচ পড়বে ১০৯৯ টাকা তবে ডিনারে সেটা বেড়ে গিয়ে হবে ১২৯৯ টাকা।
আমরা ৭ টা বাজার আগেই চলে গেলাম, প্রথমে সবার উদ্দেশ্যে আমাদের ডিপার্টমেন্ট হেড ছোট একটা বক্তৃতা দিলেন, এমন পার্টি যেন সামনে আরো বেশি বেশি হয় তার আহবান দিলেন। ৭ টা বাজলে খাওয়ার পর্ব শুরু হয়ে গেল।
এই রেস্টুরেন্টি বেশ বড় সড়, একসাথে প্রায় ২৫০ জন মানুষ বসে খেতে পারে। আমরা ছিলাম ৩০ জনের মত। খাবারের আইটেম ছিল ১০০+ , খুব সুন্দর ভাবে আলোকসজ্জা করা।
আলোক সজ্জায় সুসজ্জি্ত
খাবারের ক্যাটাগরি অনুযায়ী আলাদা আলাদা পাশে খাবার গুলো সাজিয়ে রাখা ছিল। বাম পাশে শুরুতেই সাজানো ছিল হরেক রকমের সালাত আইটেম, এর পরে তিন ধরনের স্যুপ, অন্থন ও ভাজাপোড়া আইটেম।
আমি প্রথমে থাই স্যুপ দিয়ে শুরু করি, এর পর সালাত ট্রাই করি কয়েক ধরনের। ব্যুফে গেলে প্রথমে মনে হয় সব খেয়ে ফেলবো কিন্তু, ৭-৮ ধরনের খাবার খাওয়ার পরই দেখবেন পেট ফুলে গেছে। এর আগে অসংখ্যবার এমন হয়েছে। তাই আমি অল্প অল্প আইটেম আস্তে আস্তে সময় নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম।
সালাত শেষ করে মাঝের সাড়িতে চলে গেলাম। এখানে সাজানো ছিল মাছ, বীফ, মাটন, চিকেন, বিরিয়ানি সহ ভারী আইটেমগুলো। আমি ৭-৮ টা ভারী আইটেম থেকে পছন্দ মতো অল্প অল্প করে নিলাম। সব গুলো আইটেম ই এদের মজার ছিল তবে মাটন আর হাসের ভূনার স্বাদ সবথেকে ভালো লেগেছে।
খাওয়া দাওয়ার ফাকে ফাকে ছবি তুলছি আড্ডা দিচ্ছি, যেহেতু ৩ ঘন্টা মেলা সময়। এর মাঝে একবার নীচে নেমে হেটেও এলাম। কেননা খেতে খেতে একটা সময় বিরক্তি চলে এসেছিল। এর পরে এসে দই, মিষ্টি আর ডেজারট আইটেম থেকে কেক পুডিং সহ অন্যান্য আইটেম গুলো খাওয়া শুরু করলাম।
এর পরে গেলাম সী ফুড বারবিকিউ এর টেবিলে।। এখানে কোরাল মাছ, চিংড়ি, কাকড়া বারবিকিউ ছিল অপ্ল কিছু ট্রাই করলাম। বুফে গেলে একটা জিনিস মাথায় রাখবেন, আগেই কোক বা সফট ড্রিংকস খাবেন না। এতে আপনার খাবার রুচি কমে যাবে।
বার বি কিউ আইটেম
মানুষ যেন খাবার নষ্ট না করে তাই সবাইকে সতর্ক করার জন্য রেস্টুরেন্টের কয়েক যায়গায় সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি চোখে পরলো। কেউ খাবার নষ্ট করলে ২০% অতিরিক্ত ফি প্রদান করতে হবে, ব্যাপারটা আমার খুব বেশি ভালো লেগেছে, যদিও জানিনা এটা কতটা বাস্তবে মান্য করা হয়।
খাবার জন্য তিন ঘন্টা সময় থাকলেও আমরা ২ ঘন্টা কোন রকম পার করে সব শেষে আইস্ক্রিম খেতে শুরু করলাম। খাওয়া শেষে বের হয়ে আসার সময় সবাই একটা করে মিষ্টি পান সাজিয়ে নিলাম। সব মিলিয়ে কলীগদের সাথে কাটানো মূহুর্ত ও খাওয়া দাওয়া খুব খুব ভালো ছিল। ভোজন রসিক মানুষের জন্য খুব ই আদর্শ একটা যায়গা এই ক্যাফে রিও। মোটামাটি দাম নাগালের ভেতরে থাকায় ও আইটেম প্রচুর থাকায় পারলে আপ্নারাও এখান থেকে ঘুরে আস্তে পারেন। এই রেস্টুরেন্টকে ফিডব্যাক দিতে গেলে ১০ এ ৮ দিবো। ২ কম দিলাম কারণ এর খারাপ দিক একটাই, পর্যাপ্ত ওয়াশরুমের অভাব।
তো, আজকে আর বেশি লম্বা করছি না, কেমন লাগলো আমার আজকের ব্লগ অবশ্যই মতামত জানাবেন।