আপ্নারা যারা আমার বিগত পোস্ট পড়েছেন তারা হয়তো জানেন গত বৃহস্পতিবার আমি ট্রেন যোগে ঢাকা-দিনাজপুর ভ্রমণ করেছি। এত লম্বা ট্রেন জার্নির অভিজ্ঞতা কেমন ছিল তাই এখন আপনাদের জানাবো।
ঢাকা-দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও বা পঞ্চগড় যাবার জন্যে সবথেকে ভালো ট্রেন হচ্ছে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস। প্রথমদিকে এই ট্রেন টি বিরতিহীন হলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে এখন বেশ কিছু স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়, তবে অন্যান্য ট্রেনের তুলনায় কম বিরতি থাকায় এই রুটের সবার পছন্দ পঞ্চগড় এক্সপ্রেস। এই কারণেই আমিও বরাবর এই ট্রেনেই ভ্রমণ করি।
বৃহস্পতিবার ট্রেন ছাড়ার পূর্ব নির্ধারিত সময় ছিল রাত ১১:৪৫ মিনিট। তবে রাস্তায় সিগন্যাল পেতে দেরি হওয়ায় ট্রেনের সমিয় পরিবর্তন করে ১২:২০ করা হলো। আমরা ১১ টার আগেই স্টেশনে গিয়ে ট্রেনের সূচি ও কোন প্ল্যাটফর্ম এ ট্রেন এসে দাঁড়াবে সেটা দেখে নিলাম। সামনে ঈদ, অনেকেই এক সপ্তাহ আগেই পরিবার নিয়ে ভ্রমণ করবে বলে কমলাপুর স্টেশন ছিল মানুষে ভরা। আমরা কোনরকম ৪ নং প্ল্যাটফর্ম এ গিয়ে ফ্যানের নিচে একটা যায়গা পেলাম।
১২ টা ১০ মিনিটে ট্রেন এসে কমলাপুরে পৌছালো। ট্রেন এসে সেটাকে পরিস্কার করা, তেল ও পানির ট্যাংকি ফুল করা ও ইঞ্জিন ঘুড়াতে আরো প্রায় ২০ মিনিট চলে গেল। ততোক্ষণ মেয়েকে নিয়ে আমি প্ল্যাটফর্মে হাটাহাটি করলাম। লাল-সবুজ ট্রেন গুলো দেখে মেয়ে ভীষণ খুশি।
আমরা ১২:৩০ মিনিটের দিকে ট্রেনে ঊঠে নিজেদের সিট খুজে নিলাম। সিট দেখে মাথা নষ্ট হবার উপক্রম। আমরা তিনজনের পাশাপাশি ৩ টা সিট কেটেছিলাম। মাঝের সিট একদম নষ্ট, ছেড়া, মেয়ে কোনভাবেই সেখানে বসবে না। আবার তাকে জানালার পাসেও দেয়া যাবেনা, ছোট মানুষ, পরে ব্যাগ থেকে বিছানা চাদর বের করে সিটের উপর দিলাম।
ট্রেন ১২:৪০ এ যাত্রা শুরু করলো। কিছুদূর যেতেই মেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। আমারো ভীষণ ঘুম পাচ্ছিলো। ওই দিকে গিন্নি দেখি ঘুমিয়ে পড়েছে। কি আর করার, আমাকে জেগে থাকতে হবে। চলন্ত ট্রেনে সেভাবে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না, যে একটু নেট ব্রাউজ করবো।
গাজীপুর পার হতে হটাৎ ফেসবুক ব্রাউজ করার সময় একটা নোটিশ চোখে পড়লো। দিলপাশার-চাটমোহর এর মাঝামাঝি ট্রেন লাইনে কাজ শুরু হবে ভোর ৪:৩০ মিনিট থেকে, টানা ৬ ঘন্টা এই রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। দেখে মাথায় হাত, তবে ট্রেন ছাড়ার পর থেকেই খেয়াল করলাম ফুল স্পিডে ছুটছে, পরে দায়িত্বর গার্ডকে জিগেস করলে জানালো দোয়া করেন যেন ৪:৩০ এর আগেই বরালব্রীজ পার হতে পারি, তা নাহলে ১০:৩০ অব্দি সেখানেই বসে থাকা লাগবে।
এরই মাঝে ট্রেন যমুনা সেতুতে ঊঠলো, যমুনার উপর দিয়ে ট্রেন চলার সময় স্পীড একদম ই কম থাকে। ব্রীজ ক্রস করার এক মিনিট পরেই দেখলাম এক মহিলা চিৎকার দিচ্ছে, ফোন নিয়ে গেল বলে। মহিলার ছোট বাচ্চার হাতে ফোন ছিল, ট্রেনের মধ্যে আগে থেকেই চোর ঊঠে ছিল, যেই ট্রেন একটু স্লো করেছে, অমনিই মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে সে চলন্ত ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়েছে। চোখের নিমিষেই সব হয়ে গেল, কি ভয়ানক ঘটনা। আমি এটা দেখার সাথে সাথেই মোবাইল পকেটে নিলাম, আর সারা রাস্তায় বের করার সাহস হলো না।
এদিকে যমুনা পার হয়ে ট্রেন আরো দ্রুত বেগে ছুটতে শুরু করলো। সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ৪:২০ এর আগেই আল্লাহর রহমতে আমরা বরাল ব্রীজ পার হলাম। আর একটু দেরি হলেই ৬ ঘন্টার আটকা খেতাম, এটা ভাবতেই কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ভোর হয়ে যাচ্ছে। চলন্ত ট্রেন থেকে ভোরের আলো দেখতে ভালোই লাগলো। সান্তাহার যখন পৌছালাম তখন খেয়াল করলাম বাহিরে কুয়াশা। মনে হচ্ছে যেন শীত কাল।
সকাল হতেই গিন্নিকে ঘুম থেকে তুলে দিয়ে জানালার পাশের আসন ছাড়তে বললাম। অনেক হয়েছে, এখন আমাকে ওই সিটে বসতে হবে। প্রথমে রাজি না হলেও এক প্রকার জোর করে তাকে তুললাম, এত সুন্দর দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী না করলেই নয়। দ্রুত ক্যামেরা বের করে জানালা দিয়ে ছবি তোলা শুরু করলাম।
আমরা ৮ টার দিকে আমাদের গন্তব্যস্থল পার্বতিপুর স্টেশনে পৌছে গেলাম। ট্রেন থেকে নেমে অটো নিয়ে সোজা বাড়ি। বাড়ির এই রাস্তায় এলেই মন ভালো হয়ে যায়। মনের অজান্তেই গেয়ে ঊঠি
স্বপ্ন টানে দিলাম পাড়ি
অচিন পথে আপন ছাড়ি
মন বলে চল ফিরে আবার ,
স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার ।
স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার
এখনও ট্রেন জার্নি করে কোথাও যাওয়া সৌভাগ্য হয় নি তবে খুব ইচ্ছা আছে। আপনি ট্রেন ভ্রমণ করেছেন এবং সেই অসাধারণ মুহুর্তগুলো ও নিজের অনুভূতি আমাদের সাথে তুলে ধরেছেন।
আমি খুলনা রেল স্টেশনে গিয়েছি এবং ট্রেনেও উঠছি তবে ভ্রমণ করা হয় নি। আপনার ফটোগ্রাফিগুলো সত্যি অসাধারণ হয়েছে। বিশেষ করে আমার কাছে খেজুর গাছের ছবিটা সুন্দর লাগছে। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ওবাক হলাম যে এক জীবনে মানুষ কিভাবে ট্রেনে না চড়ে কাটিয়ে দিচ্ছে, সুযগ পেলে জলদি একটা ট্যুর দেন, ধারণা পালটে যাবে, আর বাসে ঊঠতে মন চাইবে না। খেজুর গাছের ছবিটা আসলে সেকেন্ডের মধ্যে ক্যাপচার করা, এমন ছবি যে তুলবো সেটা আমিও জানতাম না।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ট্রেনে চলার অভিজ্ঞতা খুব বেশি হয়নি।হাতেগোনা কয়েকবার চড়েছি। কিন্তু অন্যান্য যানবাহনের চেয়ে অনেক আরামদায়ক জার্নি করা যায়। বাংলাদেশের ট্রেনের সময়সূচী সবসময় দেরীই হয়। ট্রেনে সিকিউরিটির একটা গাফিলতি থাকে। যদিও পুলিশ থাকে সেখানে কিন্তু বেশীরভাগ সময়েই তাদের কিছু করার থাকে না। এই যেমন এক মহিলার ফোন নয়ে গেলো সবার সামনে থেকে। তাই ট্রেন জার্নিতে সবসময় সতর্ক থাকতে হয়। যাই হোক ঠিকভাবে আপনি আপনার গন্তব্যে পৌঁছেছেন জেনে ভালো লাগলো। আনন্দের সাথে ঈদ উদযাপন করুন।শুভকামনা রইল
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ামার কাছেও ট্রেন সেরা, কেননা বাসে গেলে ড্রাইভারদের উলটাপালটা গাড়ি চালানো, এক্সিডেন্ট দেখে ভয় পাই। বাস থেকে নামার পরেও একটা ঘোড়ের মধ্যে কাটে, মনে হয় বাসেই আছি, সে দিক থেকে ট্রেন অনেক আরামদায়ক।
অনেক ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মতামত প্রদানের জন্য
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ট্রেন জার্নির অভিজ্ঞতা আমার নাই বললেই চলে। একবার ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ গিয়েছিলাম। এতো ভিড় দেখে মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
আপনার ট্রেন জাইনের লেখা পড়তে গিয়ে আমার চোরের কথা পড়েতো আমি অবাক হয়ে গেছি। চলন্ত ট্রেনে চোর!তাহলেতো ঈদের সময় মানুষ চোরদের পোয়াবারো।
গ্রাম বাংলার দৃশ্য আসলেই খুব সুন্দর। আমি মুগ্ধ হয়ে আপনার ছবির দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
এটা ঠিক যে, বাড়ির রাস্তা এই ভালো লাগে। আগেতো আমার বাবার বাড়ির বাস দেখলেই মন ভরে যেত।
সপ্ন যাবে বাড়ি, এ-ই গানতো লাখো ঘরে ফেরা মানুষের মনের কথা।
সবাইকে নিয়ে আনন্দের সাথে ঈদ উদযাপন করুন।
শুভকামনা রইল
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ট্রেন গুলোতে ঈদের সময় বারতি চাপ থাকে, তবে অন্য সময় তুলনামূলক ফাকা থাকে। চোরের কথা আর কি বল্বো, এদের সাথে আসলে রেলওয়ের লোকেরাই জরিত, গ্রামের যে কন কিছু দেখলেই ভালো লাগে, হোক সেটা নিজ এলাকার বাস বা রাস্তা।
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Thank you so much for the appreciation
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit