আশা করি অনেক অনেক ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আজকে আমি গত ২১ তারিখে কাটানো দিনটির ডায়েরি শেয়ার করতে চলেছি। আশা করি আপ্নারা উপভোগ করবেন।
আগের দিন বিয়ে খেয়ে আসতে আসতে রাত হয়ে গিয়েছিল। রাতে গ্রামে যদি ইলেক্ট্রিসিটি এর সমস্যা না হয় তাহলে খুব সুন্দর ঘুম হয়। নিরিবিলি পরিবেশে মাটির ঘরে ঘুমানোর যে মজা তা আসলে বলে বুঝানো যাবেনা। সুন্দর ঘুম ভাঙলো কবুতরের বাকুম বাকুম ডাকে।
ঘুম থেকে ঊঠে দেখি মেয়ে তার নানা ভাইয়ের পায়রা গুলোকে চাল খেতে দিচ্ছে। মেহেক নানা বাড়ি এলেই এই পায়রা গুলোকে নিয়েই থাকে সব সময়।
সকালের নাস্তা খেয়ে আমরা বেড়িয়ে পড়লাম আম বাগান দেখতে। গিন্নিও যেতে চাইলে আমরা ছেলে মেয়ে দুই দলে ভাগ হয়ে সোজা আম বাগানে চলে গেলাম। এখানে ছোট ছোট গাছ গুলোর বয়স মাত্র ১৮ মাস, অথচো প্রতিটি গাছেই কম বেশি আম ধরেছে। আমের ওজনে কোন কোন গাছ প্রায় মাটিতে এসে ঠেকেছে।
আম গুলো দেখেই লোভ হলো। তার উপর যখন জানতে পারলাম এগুলো কাচামিঠা আম তখন জলদি কয়েকটা ছিড়ে নিলাম। আম বাগান থেকে বাসা কিছুটা দূরে হওয়ায় একজনকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম চাকু আর লবণ মরিচ আনার জন্যে।
পাশেই দেখলাম একটা কলা গাছ। কলাগাছের পাতায় কাচা আম কেটে খাওয়া হয় না কতদিন, অবশেষে সেই সুযোগ এলো, তাই আর মিস না করে একটা কলার পাতা কেটে আনলাম। সবাই মিলে অনেক মজা করে কাচা আম খেলাম।
আম তো খাওয়া হলো পাশেই ছিল দাদার তাল বাগান। দাদা শশুর একা প্রায় ২ হাজার তালগাছ লাগিয়েছিল, সেগুলো থেকে এখনো প্রায় ৮০০ এর মত তাল গাছ আছে। তাল গাছের জন্যে অত্র এলাকায় তার সুখ্যাতি রয়েছে। সোজা চলে গেলাম তাল বাগানে। চারপাশে জঙ্গল, তার উপর ইদানীং রাসেল ভাইপার এর আনাগোনা, সব মিলিয়ে বাগানে ঢুকবো কি ঢুকবো না এই দ্বিধায় পড়ে গেলাম, সাথে আবার পিচ্চি পাচ্চা মিলে প্রায় ১০ জন আছে। অবশেষে গ্রামের এক মামার সাহসে সবাই মিলে চলে গেলাম।
তাল গাছে ঊঠা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। জীবনে বহুবার চেষ্টা করেও বড় গাছ গুলোতে ঊঠতে পারি নি। তবে, মামা নিমিষেই ঊঠে পড়লো একদম গাছের মাথায়। তাল কিন্তু সব সময় গাছের চূড়ায় ধরে।
মামা উপর থেকে তাল কেটে ফেললো আর আমরা নিচে কোপ দা দিয়ে কেটে কেটে তা সাবাড় করা শুরু করলাম। তালের এই নরম শাশ ও পানি খেতে ভীষণ মজার। ঢাকায় যেগুলো পাওয়া যায় সেগুলো বেশির ভাগই শক্ত হয়ে যায়।
তাল খেয়ে বাসায় আসতে আসতে গরম লেগে গেল। ভাব্লাম পুকুরে ডুব দিবো। আশেপাশে পুকুর পেলেও বেশির ভাগ পুকুরে কোরবানি গরু ও খাশির ভূড়ি পরিস্কার করায় পানি নোংরা মনে হলো, পরে ভাব্লাম যাই কুসুম্বা মসজিদের পুকুরে গিয়ে গোসল করি। বাসা থেকে প্রায় ২৫ কি:মি দূরে। যেই ভাবা সেই কাজ, ছোট ভাই, শালা, ভায়রা কে নিয়ে দুইটা মটরসাইকেলে চেপে চলে গেলাম কুসুম্বা। সেখানে গিয়ে পুকুরে ডুব দিলাম। কুসুম্বা ভ্রমণ নিয়ে আলাদা একটি ব্লগ লিখবো তাই আফাতোত বেশি কিছু লিখলাম না।
সেখান থেকে বাড়ি ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে হালকা একটু বশ্রাম নিলাম। বিকেল বেলা আবারো মোটরসাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম, উদ্দেশ্য ঘুঘুডাংগার তালতলীতে যাওয়া। সেখানে সুন্দর একটা সন্ধ্যা কাটিয়ে বাসায় ফিরে আসতে আসতে রাত।
রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম, কেননা আমার ছুটি শেষ। ছুটতে হবে যান্ত্রিক শহরের এক ঘেয়েমি জীবনে। মাঝে মাঝে মনে হয় সব কিছু ফেলে যদি এক মাস গ্রামে কাটাতে পারতাম খুব ভালো হতো, তবে চাইলেই তো আর সব পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে অল্পেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়, এতেই হয়তো মঙ্গল।
আশা করি বিয়ে বাড়িতে গিয়ে অনেক আনন্দ করেছেন আর এটাই স্বাভাবিক। যে কখনও গ্রামে আসে নি সে এখানকার সুন্দর মুহুর্তগুলো থেকে বঞ্চিত রয়েছে। গ্রামে হাজারো সমস্যা রয়েছে তবে তার ভীতর এমন অনেক সুন্দর সুন্দর অনুভূতি রয়েছে যেটা বলে বুঝানো যাবে না। ঠিকই বলেছেন কারেন্ট না গেলে বাকি সব ঠিকঠাক। বড় পুকুর ও নদীতে সাঁতার কাটার মজাই অন্য রকম। ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার সারাদিনের কাজকর্ম শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তবে আপনাদের ওইদিকে গাছগুলোতে অনেক আম হয়েছে দেখছি। কিন্তু আমাদের এখানে বেশিরভাগ গাছে এবার আমের ফলন খুব কম। কাঁচা আম লবণ দিয়ে খেতে সত্যিই খুব ভালো লাগে। গাছ থেকে পেড়ে ওই রকম তাল শাঁস খেতে সত্যিই খুব সুস্বাদু লাগে ।আমরা শহরে থাকি। তাই আমাদের কিনে খেতে হয়। কিন্তু আমি আগের বছর বাপের বাড়িতে গিয়ে ওইভাবে তাল শাঁস খেয়েছিলাম। সত্যি ওই রকম করে কেটে তাল শাস খুব নরম আর মিষ্টি খেতে হয়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গ্রামীন পরিবেশে গ্রামের সবাই মিলে বেশ আনন্দ করছেন। আসলে আপনাদের আম খাওয়া দেখে আমার নিজের অনেক বেশি লোভ লেগে গেল। তাল বাগানের বেশ কিছু অংশ আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। তালের শাঁস খেতে বেশ ভালোই লাগে আর বর্তমান সময়ে প্রত্যেকটা জায়গায় তাদের শাঁস পাওয়া যায়। সবাই মিলে পুকুরে গোসল করার মজাটাই অন্যরকম ধন্যবাদ। একটা দিনের কার্যক্রম উপস্থাপন করার জন্য। ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কুসুম্বা পুকুর অবশ্য একটু আলাদা এখানে অনেক মানুষই এসে গোসল দেয়, এই ধারণা থেকে যে এখানে গোসল দিলে মনের চাওয়া পূরন হবে, নাউজুবিল্লাহ। যদিও আমরা শুধু মজা করার জন্যে গসলে নেমেছিলাম, এই পুকুর টা অনেক বড় আর পানি গুলো তুলনামূলক ভালো ছিল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ও আচ্ছা তাহলে ওই পুকুর সম্পর্কে এই ধরনের ধারণা করা হয়ে থাকে। এটা একেবারেই উচিত না। আপনি মজা করার জন্য পুকুরে গোসল করতে নেমেছেন জানতে পেরে ভালো লাগলো। আমার কাছে মনে হয় আমাদের চাওয়া পাওয়া গুলো পূরণ করার মত যদি কারো অধিকার থাকে। সেটা হচ্ছে একমাত্র আমাদের আল্লাহ তায়ালার। তিনি চাইলেই আমাদের মনের ইচ্ছা গুলো খুব দ্রুত পূরণ হবে। আর চিনি না চাইলে একটু ধীরে হবে। কিন্তু অবশ্যই আমরা যদি সঠিকভাবে ওনার কাছে প্রার্থনা করি। তাহলে পূরণ হবে জীবনের যেকোনো সময়ে ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ঠিক বলেছেন মাটির দালান ঘরে ঘুম আসলেই ভালো হয়। আমাদের বাড়িতে ছোটবেলা থেকেই মাটির ঘরে ঘুমানোর সুযোগ হয় না কিন্তু আমি যখন নানী বা নানু বাড়িতে যায় তখন ওইখানে একদিন থাকলে কতটা ঠান্ডা আর ভালো ঘুম হয়, সকালটা শুরু হয়েছে আপনার কবুতরের ডাকে একটি আনকমন।
আম খাওয়ার জন্য আপনি বাগানে চলে গিয়েছেন লোক টাটকা আম কেটে খেয়েছেন আপনার আম কাটা দেখে আমার জিভে অলরেডি পানি চলে এসেছে।
গ্রামে যারা থাকে তারা গ্রামের পরিবেশে অলরাউন্ডার থাকে যেমন সাঁতার গাছে ওঠা দৌড় ইত্যাদি আরো অনেক কিছু।
আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপ্নাকেও অনেক ধন্যবাদ আমার পোশট টি এত সুন্দর ভাবে মনযোগ দিয়ে পড়ে এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য। আসলে গ্রামে গেলে মন আনচান করে ছোটাছুটি করার। কাচা আম অনেকদিন পর বাগানের গাছ থেকে পেরে খেয়েছি, অনেক উপভোগ করেছি গ্রামে কাটানো প্রতিটি দিন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ঈদের ছুটিতে গ্রামে গিয়ে বেশ আনন্দে আছেন। আম বাগানে আম পেড়ে লবণ মরিচ দিয়ে কেটে খাওয়ার আনন্দই আলাদা। এছাড়া নরম তালের শ্বাস খুবই মজার। আনন্দ উদযাপনে আপনি কোন কিছুই বাকি রাখছেন না। পুকুরে গোসল করার জন্য ২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেন। সত্যিই চমৎকার ব্যাপারটি।
খুব ভালো লাগলো আপনার দিনটি পড়ে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে গ্রামে গেলে যতটুকু সময় পাই মজা করার চেষ্টা করি, কারন এখনই মনে হয় সেরা সময় উপভোগ করার, বয়স বেড়ে গেলে চাইলেও আর এভাবে দৌড়াতে পারবো না, তাই আমার এমন ছোটাছুটি করা। কোন কিছুই এখন আর মিস করে পরে আফসোস বাড়াতে চাই না।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গ্রামে রাত কাটাতে ভালোই লাগে যদিও আমি এই সুযোগ খুব কম পেয়েছি। বাচ্চারা গ্রামে গেলে বিড়াল ,কুকুর ,কবুতর এগুলি নিয়েই পরে থাকে। আপনার দাদা শশুরতো দেখি অনেক তালগাছ লাগিয়েছিলেন। আমাদের এলাকাতে তালগাছ নেই বললেই চলে। অথচ গাছগুলোর একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে । ঘুঘুডাঙ্গা নামটা খুব ভালো লেগেছে আমার কাছে। শোনার পর থেকেই যেতে ইচ্ছে করতেছে। ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে।
ভালো থাকবেন সবসময় এই শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনি প্রতিদিনের অনেক সুন্দর কিছু মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন, আমরা যখন গ্রামে ছিলাম তখন আপনার মতন এমন কয়েকজন মিলে তাল খেতে যেতাম যে মুহূর্তটা আসলে অনেক সুন্দর ছিল। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর কিছু মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গ্রামে যেত অনেক সুন্দর ভাবে আনন্দে দিন পার করছেন ভাই আসলে গ্রামের পরিবেশটা অসম্ভব সুন্দর।। বিদ্যুতিক সমস্যা গ্রামের খুবই সাধারণ বিষয় আর হ্যাঁ এভাবে আম খাওয়ার মধ্যে আলাদা একটা আনন্দ থাকে।। অনেকদিন পর গ্রামে যে অনেক কিছুই সুন্দরভাবে উপভোগ করছেন দেখে ভালো লাগছে।।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বিদ্যুতের সমস্যা সহর গ্রাম সব যায়গায় রয়েছে। তবে গ্রামের অবস্থা খুব ই খারাপ। একদিন ১২ ঘন্টা করে লোডশেডিং। এভাবে আসলে বেচে থাকাই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে মানুষের জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এখনো অনেক জায়গায় লোডশেডিং এর সমস্যা অনেক বেশি যার ফলে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষগুলো।। এটা একদম ঠিক শহরের তুলনায় গ্রামে এর প্রভাব বেশি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit